সেনাপ্রধানের অনন্য প্রয়াস; সাত বীরশ্রেষ্ঠের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ 

প্রকাশিতঃ 7:26 pm | November 12, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, শহীদ সৈনিক মোস্তফা কামাল, হামিদুর রহমান, নুর মুহাম্মদ শেখ, শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ, শহীদ স্কোয়াডন ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন ও শহীদ ফ্লাইট ল্যাফটেন্যান্ট মতিউর রহমান। যুদ্ধক্ষেত্রে অসামান্য শৌর্য আর বীরত্বের নিদর্শন রেখে নিশ্চিত জেনেও কেবল দেশ মাতৃকার জন্য স্থির প্রত্যয়ে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিলেন। তাঁরা লাল-সবুজের জমিনে চিরকালের নায়ক, একাত্তরের বীরশ্রেষ্ঠ। মহান মুক্তিযুদ্ধের রুদ্ধশ্বাস সমরে তাদের বীরোচিত আত্নত্যাগ মণিমুক্তার মতো ভাস্বর। তাদের কীর্তিতেই টানটান বাঙালির মেরুদণ্ড।

বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে অহংকৃত বছর একাত্তর। এই বছরেই বীর বাঙালিতে পরিণত হয়েছিল তাঁরা। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান পুরুষ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাদুকরি নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল গোটা জাতি। একটি স্বাধীন ভূখণ্ড ফিরে পেতে জড়িয়ে পড়েছিল সরাসরি যুদ্ধে। এসেছিল চির আরাধ্য স্বাধীনতা।

একাত্তরে বীরত্ব, ত্যাগ আর সংগ্রামের চিহ্নে মহিমান্বিত চিত্রপটে আজও জ্বলজ্বল সাত বীরশ্রেষ্ঠের নাম। বাঙালি জাতির গৌরব, আত্মত্যাগ ও সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান এই সাত বীরশ্রেষ্ঠের স্মরণে ঢাকা সেনানিবাসের মাটিকাটা মিলিটারি পুলিশ চেকপোস্ট এলাকায় নির্মিত হয়েছে ভাস্কর্য ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’। নিজের অনন্য প্রয়াসের অংশ হিসেবে রবিবার (১২ নভেম্বর) দৃষ্টিনন্দন এই ভাস্কর্যের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ ভাস্কর্যটিতে ‘অর্ধবৃত্তাকার প্রাচীরে’- সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তুলে ধরা হয়েছে। ভাস্কর্যের সম্মুখে ‘ফোয়ারা’- নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। ফোয়ারা থেকে প্রাচীর পর্যন্ত সংযুক্ত রেখাগুলো ‘সূর্যরশ্মির প্রতীক’- যা দ্বারা নির্দেশ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠরা জাতির সূর্য সন্তান এবং তাঁরা সূর্যরশ্মির ন্যায় দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আলোর দিশারী ও অনবদ্য অনুপ্রেরণার উৎস।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে আপামর জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা অর্জন করি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আর এই স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে রয়েছে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং সাত জন অকুতোভয় বীরশ্রেষ্ঠ এর চিরস্মরণীয় অবদান।’

অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও লজিটিক্স এরিয়ার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো.মঈন খানসহ উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, অন্যান্য অফিসার, জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার ও অন্যান্য পদবির সেনাসদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বাঙালি জাতির মুক্তির নিয়ন্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্নাত দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। ইতিহাসের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধকে তিনি সব সময় শৈল্পিকভাবেই উপস্থাপনের প্রয়াস নিয়েছেন। এর আগে সেনাপ্রধানের পরিকল্পনা ও অক্লান্ত পরিশ্রমে রাজধানীর বিজয় সরণিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য সম্বলিত মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ গড়ে তোলা হয়েছে। গত শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সকাল ১০টায় নান্দনিক এই প্রাঙ্গণের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কালের আলো/এমএএএমকে