খুলনায় বিশাল জনসমুদ্রে ভোট চেয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিতঃ 5:35 pm | November 13, 2023

কালের আলো রিপোর্ট:

খুলনায় আওয়ামী লীগের বিশাল জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই স্বাধীনতা এসেছে, এই নৌকাতে ভোট দিলেই হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। স্বাধীনতা অর্জনের মতো স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণেও সফল হবে আওয়ামী লীগ।’

‘নৌকা স্বাধীনতার প্রতীক, উন্নয়নের প্রতীক ও গণতন্ত্রের প্রতীক’ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার লক্ষ্য একটাই, দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন। আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি শুধু এ দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে চাই। ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আপনারা আমাকে ক্ষমতায় এনেছেন। ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি দেশের উন্নয়ন করেছি। সম্মান এনে দিয়েছি। আজকের বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসী হিসেবে এগিয়ে চলেছে। গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রয়েছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকায় ভোট দিন। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরাই গড়ে দিয়ে যাবো।’

সোমবার (১৩ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টায় খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সার্কিট হাউজ মাঠের জনসভা মঞ্চে ওঠেন তিনি। এরপর ২২টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং দুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতন্ত্র আছে বলেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে খুলনার শিল্প-কলকারখানা, মোংলা বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবারও মোংলা বন্দর চালু করেছে। পদ্মা সেতু করেছে, মোংলা পর্যন্ত রেললাইন গেছে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই জনগণের উন্নয়ন হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমরা করি উন্নয়ন আর বিএনপি-জামায়াত সব ধ্বংস করে দেয়।’

খুলনাবাসীকে আরও উন্নয়ন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুলনা ও এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে অনেক উন্নয়ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। তারপরও আজ যেগুলো উদ্বোধন করা হলো সেগুলো খুলনাবাসীর জন্য উপহার। সামনে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য আরও উন্নয়ন করবো আমরা।’

দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি-জামায়াত
বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচাল করতে হরতাল-অবরোধের নামে জ্বালাও-পোড়াও চালিয়ে দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় বলে জনসভায় বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত এ দেশে নির্বাচন হতে দিতে চায় না। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, কেউ যদি গাড়িতে আগুন কিংবা মানুষকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে করে, ওই হাত ওই আগুনে পুড়িয়ে দেবেন, উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেবেন, যেন আর কেউ সাহস না পায়।’

বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী সংগঠন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত মানে সন্ত্রাসী। এরা মানুষের জন্য রাজনীতি করে না। মানুষ খুন বিএনপি-জামায়াতের একমাত্র গুণ।’

দলের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এলাকায় এলাকায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো মানুষের নিরাপত্তা দেবে। আপনারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবেন। যাতে তারা দেশের কোনও মানুষের ক্ষতি করতে না পারে। যারা আগুন দিয়ে মানুষ মারে, তাদের কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছি, যারা আগুন দেয় তাদের ধরিয়ে দিতে পারলে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। আপনারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এই কাজে সহযোগিতা করবেন।’

বিএনপির নেতা নেই, মুণ্ডুহীন একটা দল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জানে তারা ২০০৮ সালের নির্বাচনে মাত্র ৩০টা সিট পেয়েছে। তারা জানে তাদের নেতা নেই। মুণ্ডুহীন একটা দল। একটা পলাতক আসামি, আরেকটা কারাগারে। সেই দল এদেশে নির্বাচন হতে দিতে চায় না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন জনগণের উন্নয়ন হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয় বিএনপি মানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। বিএনপি-জামায়াতের কাজই হচ্ছে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা। মানুষ খুন তাদের একমাত্র গুণ। বিএনপি-জামায়াতের আর কোনো গুণ নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখেছেন এই ২৮ অক্টোবর কীভাবে পুলিশকে মাটিতে ফেলে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। বেহুঁশ হয়ে গেছে তাও ছাড়েনি। তারপর কুপিয়েছে। ৪৫ জন পুলিশ আহত হয়েছে। সাংবাদিকদেরও ছাড়েনি। সাংবাদিকদের তারা পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। রাজারবাগ পুলিশ স্টেশনে ঢুকে হাসপাতালে আক্রমণ করেছে। কয়েকটা অ্যাম্বুলেন্স ভেঙেছে, পুড়িয়ে দিয়েছে। কয়েকটা অ্যাম্বুলেন্স ভেঙেছে, পুড়িয়ে দিয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগী যাচ্ছে সেই অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করেছে। এদের মধ্যে এতটুকু মনুষত্ববোধ আছে বলে আমি মনে করি না।

নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, কেউ যদি গাড়িতে আগুন বা মানুষের জীবনে আগুন দিয়ে পোড়াতে চেষ্টা করে, ওই হাত ওই আগুনে পুড়িয়ে দেবেন, উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেবেন, যেন আর কেউ সাহস না পায় দেশের মানুষের ক্ষতি করতে। এলাকায় এলাকায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো মানুষের নিরাপত্তা দেবে। আপনারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবেন।

২২ প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
এর আগে খুলনার সার্কিট হাউস মাঠে জনসভাস্থলে পৌঁছে ২২ প্রকল্পের উদ্বোধন ও দুইটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (১৩ নভেম্বর) বিকাল ৩টা ১৮ মিনিটে সভাস্থলে পৌঁছে এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন।

উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলো হলো- নগরের সাউথ সেন্ট্রাল রোডে একাত্তরের গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ভবন, শামসুর রহমান রোডে সিভিল সার্জনের অফিস ভবন ও বাসভবন, পাইকগাছা উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, শিক্ষানবিশ প্রশিক্ষণ দফতর সংস্কার ও আধুনিকায়ন, বিএসটিআইর ১০ তলা আঞ্চলিক অফিস ভবন, বিটাকের ১০ তলাবিশিষ্ট নারী হোস্টেল ভবন, পাইকগাছা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ভবনের (সিভিল, স্যানিটারি ও বৈদ্যুতিক) কাজ, দৌলতপুরে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের চারতলা ছাত্র হোস্টেল।

সুন্দরবনে শেখেরটেক ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশ কিছু ভবন, যার মধ্যে আছে ডুমুরিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চমতলা একাডেমিক কাম চারতলা প্রশাসনিক ও ওয়ার্কশপ ভবন, বয়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খুলনা কলেজিয়েট স্কুল, সরকারি এল বি কে ডিগ্রি মহিলা কলেজ, সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ, চালনা বাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, তালিমুল মিল্লাত রহমাতিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, নজরুলনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় এবং আরআরএফ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে ছয়তলা একাডেমিক ভবন, আড়ংঘাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন।

ডুমুরিয়া উপজেলার চরচরিয়া শিবনগর সড়কে ভদ্রা নদীর ওপর ৩১৫ দশমিক ৩০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু, খুলনা নগরে খালিশপুর বিআইডিসি রোডে ড্রেন, ফুটপাতসহ প্রশস্ত রাস্তা, নগরের দৌলতপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালকের ছয়তলা বিশিষ্ট নবনির্মিত অফিস ভবন।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে- নগরীর মাথাভাঙ্গা এলাকায় স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণকাজ এবং দিঘলিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাঁচতলা একাডেমিক কাম চারতলা প্রশাসনিক ও ওয়ার্কশপ ভবনের নির্মাণকাজ।

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল ও শেখ সারহান নাসের তন্ময়।

কালের আলো/বিএসবি/এমএইচ