বাংলাদেশ-জাপান অটুট বন্ধুত্বে নতুন মাত্রা; সামুদ্রিক নিরাপত্তায় জাপান দিচ্ছে ৫৭৫ মিলিয়ন ইয়েন

প্রকাশিতঃ 7:43 pm | November 15, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

বাংলাদেশ-জাপান পরস্পর পরীক্ষিত ও অকৃত্রিম বন্ধু। কূটনৈতিক সম্পর্কের একান্ন বছরের ধারাবাহিকতায় দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ছাড়াও বহুপক্ষীয় সম্পর্কে রয়েছে বাংলাদেশের। এই সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে নিজেদের দেশের অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্স (ওএসএ) কাঠামোর প্রথম চারটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে নির্বাচিত করে দেশটি। এই কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে এবং দু’দেশের মধ্যে গভীর ও স্থায়ী বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করতে বাংলাদেশকে এবার ৫৭৫ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন অনুদান বরাদ্দ দিয়েছে জাপান সরকার।

বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা (প্রতি ইয়েনের দাম ০.৭৩ টাকা ধরে)। বাংলাদেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জাপান সরকারের এই সহযোগিতা নিজেদের সম্পর্কের সোনালি অতীত এবং এক অটুট বন্ধুত্বকে আবারও মোটা দাগে উদ্ভাসিত করেছে। দেদীপ্যমান সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচনে বুধবার (১৫ নভেম্বর) ঢাকা সেনানিবাসস্থ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ আয়োজিত এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক এই চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও জাপানের পক্ষে দেশটির রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি স্বাক্ষর করেন। এই সহযোগিতা নিজেদের মধ্যকার শক্তিশালী বন্ধুত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবেই প্রতীয়মান হয়েছে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।

জানা যায়, ‘উদীয়মান সূর্যের দেশ’ জাপান বাংলাদেশকে স্বাধীনতা অর্জনের দু’মাস পর ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপান সফরের আয়োজন করে। এভাবে জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্কের গোড়াপত্তন হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী কূটনীতির আলোকে বাংলাদেশ-জাপানের কৌশলগত সম্পর্ক ক্রমশও আরও শক্তিশালী হচ্ছে। ২০১৪ সালে জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঢাকা সফর ও ২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর দেশ দু’টির সম্পর্কে বিশেষ গতি পেয়েছে।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা জোরদারে বাংলাদেশকে জাপান সরকারের ৫৭৫ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন অনুদান জাপানের সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এটি দু’দেশের মধ্যে দৃঢ় এবং স্থায়ী অংশীদারিত্বের একটি প্রমাণ, যা পারস্পারিক সু-সম্পর্ক এবং নিরাপদ ভবিষ্যতের প্রত্যয়কে সামনে এনেছে।

আইএসপিআর আরও জানায়, বাংলাদেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বরাদ্দকৃত অনুদান ব্যবহার করা হবে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ এই কর্মসূচির আওতায় কয়েকটি সমুদ্রগামী বোট পাবে, যা বাংলাদেশের বিস্তৃত সমুদ্র উপকূলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ব্যবহার করা হবে। এছাড়াও বোটগুলো বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করাসহ ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের সময় নাগরিকদের নিরাপত্তা ও উদ্ধারকার্যে ব্যবহৃত হবে।

আইএসপিআর বলছে, বাংলাদেশের পক্ষে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও জাপানের পক্ষে দেশটির রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি’র স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি প্রতিশ্রুত পারস্পরিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। এটি বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে স্থায়ী অংশীদারিত্বের একটি সাক্ষ্য বহন করে, যা বন্ধুত্ব, সহযোগিতা এবং নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।

কালের আলো/এমএএএমকে