বাবা-মায়ের অকৃত্রিম স্নেহ-আদরের উজ্জ্বল স্মারক বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ সেই ছবি

প্রকাশিতঃ 4:48 am | November 23, 2023

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর:

বাবা-মায়ের ‘খোকা’ থেকে ভাই বোনদের ‘মিয়াভাই’। রাজনৈতিক জীবনে বন্ধু বা নেতাকর্মীদের কাছে পরিচিতি ‘মুজিব ভাই’। টুঙ্গিপাড়ার সেই মুজিব ইতিহাসের ধারা বেয়ে ওঠে দাঁড়ালেন, হলেন-বাঙালি জাতির পিতা, মুক্তিকামী মানুষের কণ্ঠস্বর; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সাত মার্চ এলো বাঙালির জীবনে। বাংলার বন্ধু শেখ মুজিব নতুন প্রত্যয়ে জাগিয়ে দিলেন দিশাহীন জাতিকে। আবির্ভূত হলেন বাঙালি জাতির মুক্তির পথপ্রদর্শক হয়ে, যিনি শোষিত-নিপীড়িত বাংলার মানুষকে দিলেন স্বাধীনতার স্বাদ।

বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে দেখলেন ভয়াবহ এক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। পাকিদের নজিরবিহীন বর্বরতার সাক্ষী তাঁর সবুজের ছায়াঘেরা গ্রাম টুঙ্গিপাড়াও। স্বাধীনতার পর দ্বিতীয়বারের মতো সেদিন তিনি পদার্পণ করলেন নিজ গ্রামে। তখন হাড় কাঁপানো শীত। তবুও বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতার আগমনে আনন্দ মুখর পরিবেশ। সময়টি ১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি। নিজের গোপালগঞ্জ সফরের একেবারে শেষ প্রান্তে ছুটলেন তাঁর নাড়িপোঁতা ভিটায়। যেখানে দখলদার হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার ক্ষতচিহ্ন। প্রায় ৪ ঘন্টা সময় অবস্থান করলেন বাড়িতে। চারদিকে ঘুরে ঘুরে লোকজনের খোঁজ খবর নিলেন। বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মা সায়েরা খাতুনের সঙ্গে দেখা করলেন। প্রিয় সন্তানকে তাঁরা অকৃত্রিম স্নেহ-আদরে জড়িয়ে ধরেন বুকে। স্নেহ মমতায় পরিপূর্ণ নি:স্বার্থ ভালোবাসার সেই ছবিটি পরদিন ৭৩’র ৮ জানুয়ারি দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বঙ্গবন্ধু নিজেও তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘আমার ওপর আমার মা-বাবার টান যে কত বেশি সে কথা কখনও বোঝাতে পারব না। তাঁরা আমাকে ‘খোকা’ বলে ডাকেন। মনে হয় আজও আমি তাঁদের ছোট্ট খোকাটি। পারলে কোলে করেই শুয়ে থাকে। এই বয়সেও আমি আমার মা-বাবার গলাধরে আদর করি।’

পিতৃস্নেহ আর মায়ের মমত্ববোধের সেই ছবিটিই চলতি বছরের মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনী দিবসে ঢাকা সেনানিবাসের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে পদার্পণের পর প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে উপহার দিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বিশাল ক্যানভাসে শিল্পীর সুনিপুণ তুলির আঁচড় যেখানে বাবা-মায়ের স্নেহভরা ক্ষণে স্মিত হাস্যেজ্জ্বল সুদর্শন মহামানবের অভিব্যক্তিকে মাধুর্যে দৃশ্যমান করা হয়েছে সাবলীলভাবে।

জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা-ভালোবাসার সশস্ত্র বাহিনীর এই চিত্রপট যেন ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েছে; শান্তির ও সৌম্যের পরশ বুলিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হৃদয়-মনেও। মন্থিত হৃদয় খুড়ে আঁকা এই চিত্রল তন্ময় হয়েই অবলোকন করেন তিনি। স্মৃতির ক্যানভাসে মুহূর্তেই যেন উচ্ছ্বাসের হীরক কণায় আনন্দ পরিপ্লুত অনিত্য ঢেউয়ের নিঝুম দ্যোতনা আচ্ছন্ন করে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত এই চারবারের সরকারপ্রধানকে। অনিন্দ্য সুন্দর আবাহনে নিজেদের আত্মপরিচয়ের পথরেখার বর্ণবৈভবে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে এসেছেন আবেগমথিত গভীর অনুভবের অসাধারণ চিত্রকর্মটি।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাঋদ্ধ এই উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বাঙালি জাতির ইতিহাসের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫৫ বছরের এক মহাজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটলেও আলোকময় ঐশ্বর্য হয়েই সেই জীবন পেরিয়েছে শত বছর। বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদর্শিক লড়াই ও সুদক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশকে সমৃদ্ধির বন্দরে নোঙর করতে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহিত জনকের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন ও পরিপূর্ণতা লাভের দৃঢ় অঙ্গীকারে পথ চলেছেন একদিন-প্রতিদিন। তিনি আধুনিক, শক্তিশালী ও যুগোপযোগী সশস্ত্র বাহিনীরও স্বার্থক রূপকার, এক সুনির্মল মোহনা। সমুদ্র সমান অর্জনে যিনি ভরপুর করেছেন নিজের কর্মমুখর জীবন।

বঙ্গবন্ধুর আলোকচিত্রটির সামনে উজ্জ্বল হাসির দ্যুতি ছড়িয়ে নিজের মুগ্ধতাও প্রকাশ করেন বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বাঙালি জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করার কাণ্ডারি প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুকন্যা সাহস, ধৈর্য্য, দেশপ্রেম আর স্বপ্নের বিশালতায় নিজের চারবারের প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়ে সমৃদ্ধ সশস্ত্র বাহিনী গড়ার অভিযাত্রায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও অমিত সম্ভাবনার শক্তিশালী ভিত যেমন রচনা করেছেন তেমনি যুক্ত করেছেন অজস্র সাফল্য-স্মারক। নিজের নিখাঁদ দেশপ্রেমের সঙ্গে মেধা-মনন, সততা, প্রজ্ঞা, গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণে কল্যাণমুখী নেতৃত্বে বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে নিয়ে চলেছেন মুক্তির অগ্নিপুরুষের হাতে গড়া সশস্ত্র বাহিনীকে।

১৯৭১ সালে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতিকে লাল-সবুজের ভূখণ্ড–স্বাধীন বাংলা উপহার দিয়েছিলেন চির অবিনশ্বর রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু। প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে চিরঞ্জীব, অনি:শেষ প্রেরণার প্রতীক; বাতিঘরও তিনি। আজও সবকিছুতেই মিশে রয়েছেন উন্নত শির ও মহিমা নিয়ে। দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর হৃদয়ের মণিকোঠায় বাঙালি জাতির পিতা। তাদের কন্ঠেও যেন গুঞ্জরিত প্রয়াত কবি শামসুর রাহমানের সেই অমর কবিতা- ‘ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর রৌদ্র ঝরে চিরকাল, গান হয়ে নেমে আসে শ্রাবণের বৃষ্টিধারা; যাঁর নামের ওপর কখনো ধুলো জমতে দেয় না হাওয়া, ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর পাখা মেলে দেয় জ্যোৎস্নার সারস, ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর পতাকার মতো দুলতে থাকে স্বাধীনতা, ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর ঝরে মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ধ্বনি।’

কালের আলো/এমএএএমকে