‘আপ্লুত’ বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনারা; সক্ষম ও সুসংগঠিত সেনাবাহিনীর বার্তা সেনাপ্রধানের

প্রকাশিতঃ 8:05 pm | November 23, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

রীতিমতোই সেজেছিল ঢাকা সেনানিবাসের ‘আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে’। এখানকার প্রবেশ আর বাইরের পথ যেন হয়ে উঠেছিল একাত্তরের চেতনায় রঙিন! মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সেনাবাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত এবং অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের নানা উপমায় বরণ করে নেয়া শব্দমালায় প্রকারান্তরে কঠিন লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ঔপনিবেশিক অপশক্তির শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মর্মবাণীই যেন উচ্চারিত হয়েছিল পরতে পরতে। স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজেদের বীরত্ব, ত্যাগ আর সংগ্রামের চিহ্নে মহিমান্বিত চিত্রপটে জ্বলজ্বল আজও তাদের নাম।

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) ‘খেতাবপ্রাপ্ত ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্য এবং শান্তিকালীন পদকপ্রাপ্ত সেনাসদস্যদের সেনাবাহিনী প্রধানের সংবর্ধনা’ শীর্ষক আত্মগৌরব অর্জনের বিজয়গাঁথার এসব বাক্য জাগিয়ে তুলেছিল প্রাণের স্পন্দন। আবেগ-আপ্লুত হয়ে উঠেছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধারাও। একাত্তরের সুমহান চেতনায় বাঙালির বীরত্ব, ত্যাগ আর সংগ্রামের চিহ্ন নিয়েই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ’র নিমন্ত্রণে তাঁরা ছুটে এসেছিলেন আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়েই। প্রতি বছরই সেনাবাহিনী সদর দপ্তরের এই সংবর্ধনা তাদের গর্বিত করে। ঠিক যেন ফিরিয়ে নিয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের দু:সাহসিক স্মৃতিঘেরা দিনগুলোতে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনিতে প্রজ্বলিত হয়ে শত্রু সেনাদের খতম করতে মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করা জাতির সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা- যাদের সবাই সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের হাতে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) আয়োজিত সংবর্ধনায় উপহার তুলে দিয়ে সম্মাননা জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড. এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ৭৫ জন খেতাবপ্রাপ্ত ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্য এবং তাঁদের নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় ও শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে শান্তিকালীন সময়ে বিভিন্ন বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৭ জনকে অসামান্য সেবা পদক ও ৯ জনকে বিশিষ্ট সেবা পদক পরিয়ে দেন সেনাপ্রধান। অনুষ্ঠানের শুরুতেই খেতাবপ্রাপ্ত ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন বীরত্বগাঁথা এবং শান্তিকালীন পদক প্রাপ্ত সেনাসদস্যদের প্রশংসনীয় কর্মকান্ডের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয় বলে জানায় আইএসপিআর।

জাতির বীর সন্তানদের এই মিলনমেলায় মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনার আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের পথ ধরেই আলোকিত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের পানসিতে চড়ে দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত থেকে আরও শক্তিশালী ও আধুনিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গড়ে তোলার প্রত্যয়দীপ্ত অঙ্গীকার করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। উপস্থাপন করেন পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসন-শোষণ আর পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে স্বাধীনতা অর্জনে বাঙালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহসী, ঐতিহাসিক ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা।

দেশের সেবায় নিরলসভাবে কাজ করতে সেনাবাহিনী প্রস্তুত
দেশের যেকোন সেবায় নিরলসভাবে কাজ করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় প্রস্তুত বলে জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতার সত্ত্বেও ২০৩০ সালের মধ্যে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। দেশের অনেক পরিবর্তন হয়েছে যার নাম উন্নয়ন। এটা সম্ভব হতো না যদি না বাংলাদেশ স্বাধীন হতো। দেশের যা কিছু অর্জন সবকিছুই সম্ভব হয়েছে মুক্তিযুদ্ধার জন্য।’

সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পূর্বসূরীদের পথ অনুসরণ করে আমাদের সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেমের উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের সেবাই নিয়োজিত প্রাণ। দেশের যেকোন প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়ে দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করতে সেনাবাহিনী সদা প্রস্তুত। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সাংবিধানিক ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ও দেশের দুর্যোগ মোকাবেলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।’

সেনাবাহিনী এখন অনেক সক্ষম ও সুসংগঠিত
দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেনাবাহিনীতে অনেক পরিবর্তন এসেছে বলে মন্তব্য করেন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। সেনাবাহিনী এখন অনেক সক্ষম ও সুসংগঠিত উল্লেখ করে সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন অনেক আধুনিক, সক্ষম এবং সুসংহত। পেশাগত দক্ষতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিকভাবে সমাদৃত। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের আত্মত্যাগ ও পেশাগত দক্ষতায় বাংলাদেশ সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়ে যাচ্ছে।’

এই অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্য, তাঁদের নিকটাত্মীয়, উধ্বর্তন সামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন পদকপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সেনাসদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির গর্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনাকর্মকর্তা ও সেনাসদস্যদের অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছরই সেনাবাহিনী সদর দপ্তর এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

কালের আলো/এমএএএমকে