কর্মীবান্ধব তারকা রাজনীতিক
প্রকাশিতঃ 12:41 pm | January 06, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:
দলের প্রতি শতভাগ নিবেদন করেছেন নিজেদের। ভেঙেছেন চিরায়ত রাজনীতির ধারা। প্রত্যেকেই কর্মীবান্ধব এবং দায়িত্বশীল রাজনীতিক। এক কথায় পরিপাটি, স্বপ্নবাজ এবং বাগ্মী রাজনীতিকের প্রতিচ্ছবিও তাঁরা। বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দিন-রাত একাকার করেই কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক ও অগ্রসর চিন্তা-ভাবনা, নৈতিক দৃঢ়তা তাদের আলোড়িত-আন্দোলিত করে প্রতিক্ষণ।
এসব তারকা রাজনীতিকের কেউ কেউ জাতীয় পর্যায়ে আবার কেউ কেউ নিজ নিজ এলাকায় আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছেন। জ্যেষ্ঠদের প্রজ্ঞা ও পরামর্শের সঙ্গে নিজেদের ক্যারিশমা, সততা, সাহস ও উদ্দীপনায় রাজনীতিতে এক নতুন ধারার সূত্রপাত করেছেন।
বলা হচ্ছে- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, খুলনা-৪ আসনের টানা দু’বারের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী, কিশোরগঞ্জের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মেদ তৌফিক, বাগেরহাটের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময় ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু’র কথা।
মুহাম্মদ ফারুক খান
টানা ৫ বার গোপালগঞ্জ-১ (মকসুদপুর-কাশিয়ানী) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান। সৎ ও নির্লোভ এই রাজনীতিক সফলতার সঙ্গেই এক সময় মন্ত্রী হিসেবে সামলেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। এখন আছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবেও। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তাঁর প্রধান পরিচয় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহানা’র ‘বিশ্বস্ত স্বজন’। বঙ্গবন্ধুর বড় সন্তান, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী শেখ কামালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন ফারুক খান। একসঙ্গে পড়াশুনা করেছেন ঢাকা কলেজে। রাজনীতিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি নিজের সুদৃঢ় অবস্থান ধরে রেখেছেন। বয়সকে হার মানিয়ে মুহাম্মদ ফারুক খান এলাকার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও সমানভাবে সক্রিয়। দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত থাকেন। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে রয়েছে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ। কর্মীদেরকে নানাভাবে তিনি উজ্জীবিত করেন। মন্ত্রীর চেয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বেশি জনপ্রিয় এবং কাক্সিক্ষত। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একজন উজ্জ্বল তারকা তিনি, যিনি নিজের পারদর্শীতা রেখেছেন কূটনীতিতেও। গুছিয়ে কথা বলতে পারায় তিনি বিদেশী কূটনীতিকদের কাছেও গ্রহণযোগ্য।
মির্জা আজম
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান মির্জা আজম। জামালপুর-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন টানা ৬ বার। চরম দু:সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন যুবলীগকে, ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। ‘ভোটের রাজা’ উপাধি পাওয়া এই সংসদ সদস্য এলাকার উন্নয়নেও স্থাপন করেছেন দৃষ্টান্ত। জামালপুর জেলাবাসীর অনেক স্বপ্নপূরণ করেছেন। জামালপুরের মানুষের কাছে তিনি পরিচিত ‘শিক্ষাবন্ধু’ হিসেবেও। ২০০৯ সালে ছিলেন জাতীয় সংসদে হুইপ (প্রতিমন্ত্রী) ও পরবর্তীকালে ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভায় পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব সামলেছেন। ‘সাংগঠনিক ম্যানেজার’ হিসেবে খ্যাত মির্জা আজম আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা থেকে দলকে গোছাতে মনযোগী হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানীতে ১ হাজার ৪০২টি ইউনিট কমিটি গঠনের মাধ্যমে রেকর্ড গড়েন। বারবার সাংগঠনিক ক্যারিশমা দেখানো কর্মীবান্ধব মির্জা আজম সার্বক্ষণিক একজন রাজনীতিক। তিনি মানেই ক্রাউড পুলার। দলীয় নেতা-কর্মী আর সাধারণ জনতাকে সমানতালে আগলে রাখেন। জনতাও তাকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে। এমন দক্ষ সংগঠক নি:সন্দেহে দলের সম্পদ।
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন
কালাই-ক্ষেতলাল-আক্কেলপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন পঞ্চমবারের মতো আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি প্রথমে আওয়ামী লীগের রাজশাহী, খুলনা, রংপুর বিভাগের দায়িত্ব পান। পরে এখন তিনি চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই নেতা জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্ব পান। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি জয়পুরহাটে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন। নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি গ্রামে জনসমাবেশ, উঠান বৈঠক, গণসংযোগ, জনতার মুখোমুখি সংসদ সদস্য, অনুষ্ঠানসহ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে তারুণ্যে সমাবেশ, জয়পুরহাট-২ আসনের সকল শিক্ষকদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক ক্যাম্প, ৩০ হাজারের অধিক নেতা-কর্মীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক ক্যাম্পের মতো অনেক দলীয় ও সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে জনসাধারণের সঙ্গে নিবিড় হৃদ্যতা গড়েছেন। আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা নিজেকে জনগণের খাদেম মনে করেন। নির্মোহ মন মননের স্বপ্নবান হুইপ স্বপন। ২৪ ঘন্টা কর্মমুখর এই রাজনীতিক সফল রাজনীতিকদের তালিকায় অগ্রভাগেই ঠাঁই দিয়েছেন নিজেকে।
আতিকুল ইসলাম
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) টানা দু’বার নির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম। মেধা, প্রবল সাহস ও গভীর আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে দিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। নিরহংকারী এই নগর পিতা সবশ্রেণির মানুষের কাছেই জনপ্রিয়। নগরবাসীর সঙ্গে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ রিলেশনশিপ স্থাপনের প্রয়াস নিয়েছেন। আধুনিক ও তিলোত্তমা ঢাকা গড়তে তাঁর প্রয়াস নগরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। গোটা নগরবাসীর কাছেই তিনি জনপ্রিয়। নিজেকে নগর পিতার বদলে ‘নগর সেবক’ হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া
কর্মীবান্ধব রাজনীতিক হিসেবেই পরিচিত ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। দক্ষতার সঙ্গেই নিজ দায়িত্ব সামাল দিচ্ছেন বিপ্লব বড়ুয়া। প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ সহকারী আদতে ‘ফুল টাইম’ রাজনীতিক। দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের জন্য তার দুয়ার উন্মুক্ত। নিয়মিতই দলীয় অফিসে সময় দেন। রাজনীতিতে তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা, পরিশ্রম ও ইতিবাচক নানা কর্মকান্ড নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করেছে।
আব্দুস সালাম মূর্শেদী
মাঠ কাঁপানো ফুটবলার ছিলেন আব্দুস সালাম মূর্শেদী। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে তাঁর নামটি চিরভাস্বর। দীর্ঘদিন খেলেছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশকে। ক্রীড়াঙ্গন থেকে থিতু হয়েছেন দেশের রাজনীতিতে। ব্যবসায় সফলতার পর রাজনীতি তাঁর তৃতীয় অধ্যায়। রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৪ আসনের টানা দু’বারের সংসদ সদস্য। খুলনা জেলা আওয়ামী লীগেরও অন্যতম সদস্য। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় সরব উপস্থিতির মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের দু:খ-সুখে পাশে থেকে তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর রচিত সম্পর্কের পাটাতনকে শক্ত ভিত্তি দিয়েছেন। ভোটারদের সঙ্গেও তিনি স্থাপন করেছেন নিবিড় সংযোগ। দলের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করেছেন স্থানীয় জনসাধারণকেও।
রেজওয়ান আহাম্মেদ তৌফিক
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসন থেকে টানা তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মেদ তৌফিক। সাবেক মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের জ্যেষ্ঠ সন্তান হলেও দাম্ভিকতা বা অহংবোধ নেই মোটেও। হাওরের মাটি-আলো-বাতাসে দিনের পর দিন পরিণত হয়েছেন। হাওরের আপামর মানুষের কাছে ‘ভাটির রত্ন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। হাওরের মানুষের সঙ্গে প্রাণের মায়ায় জড়িয়ে কেড়েছেন সবার মন।
শেখ সারহান নাসের তন্ময়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরের ছেলে সংসদ সদস্য (এমপি) শেখ হেলাল উদ্দীনের একমাত্র ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়। সুদর্শন, হাস্যোজ্জ্বল ও সুবক্তা হিসেবে স্বল্প সময়েই পরিচিতি পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের মধ্যে রাজনীতিতে তাকে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বাগেরহাট-২ আসনের এই সংসদ সদস্য সময়ে সময়ে কথা বলেন যুক্তিপূর্ণ ভাষায়। এই তরুণ তুর্কি তরুণ প্রজন্মের কাছেও জনপ্রিয়।
মো: ইকরামুল হক টিটু
হৃদয় দিয়ে হৃদয় কিনতে জানেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো.ইকরামুল হক টিটু। সুন্দর ও বাসযোগ্য ময়মনসিংহ গড়তে এই নগর পিতা দিন-রাত একাকার করে কাজ করছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, সাহস ও পরিশ্রম দিয়েই গতানুগতিক রাজনীতির ধারা পাল্টে দিয়েছেন। দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীরও আস্থা ও বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপত্য স্নেহে উন্নয়ন বিপ্লব সংঘটিত করেছেন ময়মনসিংহে। দলের বাইরেও সাধারণ মানুষের কাছে মেয়র টিটুর প্রশ্নাতীত গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। জনবান্ধব রাজনীতিক হিসেবেও অনন্য। সমকালীন রাজনীতিতে ময়মনসিংহে এই নেতা তরুণ-যুবাদের কাছে ‘রোল মডেল’ এবং সব শ্রেণি পেশার মানুষের কাছেই ‘প্রিয় মুখ’।
কালের আলো/ডিএস/এমএম