পঞ্চমবার প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিয়ে শেখ হাসিনার অনন্য ইতিহাস
প্রকাশিতঃ 11:38 pm | January 11, 2024
কালের আলো রিপোর্ট :
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনন্য এক নজির স্থাপন করলেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে বিরল এক রেকর্ড গড়লেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাতটায় বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাকে শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ পাঠ শেষে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যগণ ও উপস্থিত অতিথিরা প্রধানমন্ত্রীকে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান।
শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রীর পদে ছিলেন। নিজের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি ইতোমধ্যে চার মেয়াদে ২০ বছর সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শেখ হাসিনা। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক সম্পন্ন করেন। শিক্ষার্থী থাকার সময়ই ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন শেখ হাসিনা। ছিলেন ইডেন কলেজের নির্বাচিত ভিপি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ৬ বছর দিল্লিতে নির্বাসিত জীবন কাটানো শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন ১৯৮১ সালে। সেই বছরই তিনি সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রথম ১৯৮৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১ সাল, ১৯৯৬ সাল, ২০০১ সাল, ২০০৮ সাল, ২০১৪ সাল ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ মোট ৮ বার সংসদ সদস্য নির্বাচত হয়েছেন শেখ হাসিনা। তিন দফা বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
১৯৯৬ সালের ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে প্রথমবার বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার ২১ বছর পর সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা।
এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা নিজের রাজনৈতিক জীবনে সেসময়ই দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। আর এরপর থেকে এই পর্যন্ত যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, তার প্রতিটিতেই জয়ী হয়েছেন শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ। এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। সাফল্যগাথার এই কর্মময় জীবন কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস তিনি গৃহবন্দি থেকেছেন। সামরিক স্বৈরশাসনামলে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকালে বেশ কয়েকবার তাঁকে কারা নির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে ওই বছরের ১৬ জুলাই চাঁদাবাজিসহ দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হন শেখ হাসিনা। ওই সময় সংসদ ভবন চত্বরের বিশেষ কারাগারে প্রায় ১১ মাস বন্দি ছিলেন। বারবার তাঁর জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। কমপক্ষে ২০ বার তাঁকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে তাঁর লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল।
গণতন্ত্র এবং দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায়ও ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৯৬-২০০১ সালে তাঁর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি ও গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি তাঁর সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার টানা ১৫ বছরে দেশের বিশাল অগ্রগতি ও বিস্ময়কর উন্নতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময় শেখ হাসিনা গৃহীত পদক্ষেপ জাতিসংঘ, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্র্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বসসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে।
এই অঞ্চলে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী শিক্ষার বিস্তার, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা।
এর আগে গত বুধবার (১০ জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যরা শপথ নেন। বিজয়ী দলের নেতা জাতীয় সংসদের নেতা নির্বাচিত হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, উপনেতা মতিয়া চৌধুরী। এদিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরে নতুন সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান রাষ্ট্রপতি। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২২টিতে জয় পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরকার গঠন করে। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১১টি, স্বতন্ত্ররা ৬২টি আসনে জয়ী হন।
এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে।
কালের আলো/বিএসবি/এমএইচ