‘মামা পার্টি’র গাড়িতে উঠলেই সর্বস্ব হারাতেন যাত্রীরা
প্রকাশিতঃ 7:01 pm | February 13, 2024
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:
অজ্ঞান পার্টির সদস্য তারা। অন্যের মালামাল লুটে নেওয়াই তাদের কাজ। এ কাজের জন্য তারা গাড়ি ভাড়া করতেন। এরপর সেই গাড়িতে যাত্রী তুলে রওনা হতেন। কিন্তু কিছুদূর গিয়ে গাড়ি থামিয়ে অস্ত্রের মুখে আবার কখনও চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে যাত্রীদের সবকিছু লুটে নিতেন। এভাবে তারা দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করে আসছিল। অবশেষে সেই চক্রটিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে র্যাব-১০। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘মামা পার্টি’ খ্যাত চক্রটির মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন— রানা ওরফে মো. শাহীন ওরফে শাহীন রানা (৪৯), মো. মফিজুল ইসলাম ওরফে মো. ইসলাম ওরফে ইসলাম মিয়া (৪৮), মো. সাগর ওরফে হাবিবুর রহমান শেখ ওরফে মো. হাবিব (৫১), মো. ফারুক আহমদ ওরফে মো. ফারুক মিয়া ওরফে মো. ফারুক (৩৪) ও মো. আবুল কালাম (৫৩)।
মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন।
র্যাব-১০ এর এই কর্মকর্তা জানান, তারা মামা পার্টি নামে খ্যাত। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রাইভেটকার/মাইক্রো ভাড়া করে যাত্রী সেজে চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহার করে ছিনতাইসহ সাধারণ মানুষের সর্বস্ব লুট করে আসছিল।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, চক্রটি গত বছরের ২৬ জুন ফরিদপুর জেলার ভাঙা এলাকায় যাত্রী সেজে সাদ্দাম শেখ নামের একজন ইজিবাইক চালকের ইজিবাইকটি ভাড়া করেন। পরে তারা কিছুদূর গিয়ে তার ইজিবাইকটি ছিনিয়ে নেয় এবং তাকে চেতনানাশক খাইয়ে ও মারধর করে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে সেই চালক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় চক্রটি আবারও সেই পরিবারে কল করে ইজিবাইক ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে এ ঘটনায় মামলা হলে চক্রটির সন্ধান পায় র্যাব।
ফরিদ উদ্দীন বলেন, গ্রেফতার শাহিন রানা চক্রটির মূল পরিকল্পনাকারী এবং তার নেতৃত্বে চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস ভাড়া করে যাত্রী সেজে চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহার করে ছিনতাই করা হচ্ছিল। তারা সময় সুযোগ বুঝে নির্ধারিত রুটগুলোতে রাত ৩টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে এসব কাজ করতেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, চক্রটির সদস্য মফিজুল প্রাইভেটকার ব্যবহার করতেন। তার মাধ্যমে অন্য কোনো প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস ভাড়া নিতেন তারা। মফিজুলই গাড়ি চালাতেন। শাহিন যাত্রী সেজে মফিজুলের পাশে বসতেন। অন্যান্যরা সেই সড়কে যাত্রীবেশে অবস্থান করতেন। পরে সবাই একত্রিত হওয়ার পর যাত্রীদের কখনও দেশীয় অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে মারধর করে আবার কখনও চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহার করে অচেতন করে যাত্রীদের কাছে থাকা সবকিছু লুট করে তাদের সুবিধাজনক যে কোনো নির্জন স্থানে ফেলে রেখে সেখান থেকে পালিয়ে যেতেন।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি হাইস গাড়ি, একটি করোলা প্রাইভেটকার, একটি হাতকড়া, চেতনানাশক ওষুধ (চার পাতার মোট ৪০টি), ২টি সুইচ গিয়ার চাকু, ২টি স্টিলের চাকু, একটি ক্ষুর, ৬টি পুরাতন টাচ মোবাইল ফোন, ৫টি পুরাতন বাটন মোবাইল ও নগদ ১ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয় বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
কালের আলো/এমএইচ/এসবি