মোহাম্মদপুরে দেশি অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের ৩৯ সদস্য গ্রেফতার
প্রকাশিতঃ 8:13 pm | February 17, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
রাজধানীর মোহাম্মাদপুর, আদাবর, হাজারীবাগ এলাকায় ধারাবাহিক অভিযানে একাধিক কিশোর গ্যাং গ্রুপের প্রধানসহ ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এদের মধ্যে ‘পাটালি গ্রুপে’র পাঁচজন, ‘লেভেল হাই’ গ্রুপের ছয়জন, ‘চাঁন গ্রুপের ছয়জন, ‘লও ঠ্যালা’ গ্রুপের পাঁচজন, ‘মাউরা ইমরান’ গ্রুপের সাতজন। বাকি সাতজন অন্য গ্রুপের সদস্য। প্রতিটি গ্রুপে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য রয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ চাপাতি, রামদা, চাকুসহ দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
র্যাব বলছে, গ্রেপ্তার কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা ছিনতাই, চাঁদাবাজি, বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় র্যাব-২ এর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি আনোয়ার হোসেন এ ব্যাপারে জানান।
র্যাব-২ অধিনায়ক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি ‘কিশোর গ্যাং’ গ্রুপ ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে আসছে। সাধারণ মানুষের ওপর হামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক জিডি ও মামলা হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার রাতে র্যাব-২ এর একাধিক টিম রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর ও হাজারীবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং ‘পাটালি গ্রুপ’ এর অন্যতম মূলহোতা মো. সুজন মিয়া ওরফে ফর্মা সজিব, রানা শিকদার, জুয়েল মিয়া, রাকিব ওরফে মুরগী রাকিব ও মো. সাগরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরেক অভিযানে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং ‘চাঁন গ্রুপ’ ও ‘মাহি গ্রুপে’র মো. মারুফ, আল আমিন, সাকিব ওরফে প্রকাশ রিয়াম, মো. জুয়েল (২৪), বিপ্লব রাজবংশী, মেঘদাত ওরফে মেঘু, মো. সকাল আহমেদ, শরীফুল ইসলাম, হৃদয় ইসলাম, মো. ইয়াসিন, রাব্বি মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পৃথক অভিযানে চাঁদ উদ্যান এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং গ্রুপ ‘লেভেল হাই’ এর মূলহোতা শরিফ ওরফে মোহন, মো. দুলাল ওরফে ডিস দুলাল, মো. সোহাগ, মো. তারেক, মো. হাসান, মো. হৃদয়, মো. রাকিব, মো. নিশান, মো. রাসেল, মো. রাকিব, মো. শাহাদাত হোসেন, সোগাগ ফরাজি, সুজন ইসলাম, মো. রবিউল, মো. আজগর, মো. নাহিদ, মো. সুজন ইসলাম, মো. ইমরান ওরফে মাউরা ইমরান, মো. সোহান, মো. ফরহাদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অতিরিক্ত ডিআইজি আনোয়ার বলেন, পাটালি গ্রুপটি সুজন মিয়া ওরফে ফর্মা সজিবের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে। নিজেদের মধ্যে অন্তকোন্দলের কারণে এখন ২ থেকে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়। লেভেল হাই গ্রুপটি শরিফ ওরফে মোহনের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন যাবত পরিচালিত হয়ে আসছে। গ্রেপ্তাররা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। গ্রেপ্তার গ্যাংয়ের সদস্য গাড়ীর হেলপার ও চালক, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, পুরাতন মালামাল ক্রেতা, সবজি বিক্রেতা বিভিন্ন পেশার ছদ্মবেশে মোহাম্মদপুর ও আশেপাশের এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করত।
তিনি বলেন, র্যাব-২ গত এক বছরে ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত প্রায় ছয় শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই কোনো না কোনো গ্যাং গ্রুপের সদস্য। এই সকল গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছেড়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়ে আসছে। এর মাধ্যমেই তারা চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই করে আসছে।
কিশোর গ্যাং দমনে গণমাধ্যম ও স্থানীয়দের সহযোগিতা চেয়ে র্যাব-২ অধিনায়ক বলেন, গণমাধ্যমের বিভিন্ন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-২ নিয়মিত কাজ করে আসছে। পাশাপাশি কিশোর গ্যাং দমনে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতা চাই। র্যাব-২ এর যোগাযোগের নম্বরগুলোতে কিশোর গ্যাং গ্রুপের কর্মকাণ্ড বা তাদের তৎপরতা ভিডিও দিয়ে সহযোগিতা করবেন। যারা তথ্য দিবেন তাদের নাম-পরিচয় গোপন রাখা হবে।
প্রতিটি কিশোর গ্যাং দল রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। গ্রেপ্তারদের রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, কিশোর গ্যাং সদস্যদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হতে তদন্ত করতে হয়। আমাদের তদন্তে এখন পর্যন্ত কোনো দলের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাঁচমাস আগে কব্জি কাটা গ্রুপের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছি। আজকেও আমরা বেশ কিছু গ্রুপের সদস্যদের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছি। আমরা নিয়মিত কাজ করে আসছি। গত দুই মাসে আমরা শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
কালের আলো/এমএইচ/এসবি