দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জে কী উত্তীর্ণ হবেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী?

প্রকাশিতঃ 4:50 pm | February 22, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

নিত্যপণ্যের বাজারে ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে দ্রব্যমূল্য কমানোকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে পরিবর্তন এনেছেন। পাঁচ বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সামলানো টিপু মুনশিকে সরিয়ে টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-‌দেলদুয়ার) আস‌ন থেকে টানা দ্বিতীয়বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য আহসানুল ইস‌লাম টিটুকে প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রয়াত পোড় খাওয়া রাজনীতিক ও সংসদ সদস্য হাজি মকবুল হোসেনের উত্তরাধিকারের ওপর সরকারপ্রধান আস্থা রেখেছেন।

কর্মক্ষেত্রে স্পর্শকাতর মন্ত্রণালয়টির নতুন প্রতিমন্ত্রী সফল না ব্যর্থ হয়েছেন সেই হিসাব-নিকাশের সময় না এলেও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর সচেতনতা, কর ও শুল্ক ছাড়সহ নানামুখী পদক্ষেপ, বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলা থেকে শুরু করে দ্রব্যমূল্য দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনার চ্যালেঞ্জে নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের প্রত্যয় নিয়েই প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এক মাস পূর্তি করেছেন আহসানুল ইস‌লাম টিটু। স্মার্ট বাজার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায়  শ্রম ও নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন তিনি।

জানা যায়, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে শুরু থেকেই দম ফেলার ফুরসত নেই নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর। গত রবিবার (১৪ জানুয়ারি) প্রথম দিন সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে এসেই গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেছিলেন ‘আমার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম কর্মসূচিটি হবে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা।’ উৎপাদনকারীদের হাত থেকে পণ্যটি ভোক্তার হাতে পৌঁছানোর কাজটি সহজ করতে কথামতো কাজ শুরু করেছেন। কারসাজি করে বাজার অস্থিতিশীল করতে চাইলে কাউকে ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা দেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত কৃষি, খাদ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর-সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আসন্ন রমজানে খাদ্য পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করেছেন। বারবার মজুতদার ও বাজার কারসাজির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের এক সপ্তাহের মধ্যেই রমজানে বাজার ব্যবস্থাপনা ও সমন্বিতভাবে বাজার মনিটরিংয়ের সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তিনিসহ পাঁচ মন্ত্রী জরুরি বৈঠক করেন। আন্ত:মন্ত্রণালয়ের জরুরি এ সভায় বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ও আমদানি পরিস্থিতির সঙ্গে চাহিদা বিশ্লেষণ করে ঘাটতি চিহ্নিত করা এবং রমজানের আগে ঘাটতি মেটাতে পণ্য আমদানি সহজ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এসবের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রবল আগ্রহ এবং সর্বাত্মক ভূমিকার বার্তা মিলেছে জনমনে। ইতোমধ্যে সয়াবিন তেলের প্রতি লিটারে ১০ টাকা করে দাম কমানোর ঘোষণা এসেছে। আগামী ১ মার্চ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

সূত্র জানায়, প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক কৃষি, খাদ্য, মৎস্য— এই তিনটি মন্ত্রণালয় নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেক পণ্যের আমদানি এবং উৎপাদন পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে ভোক্তা অধিদপ্তরের মাধ্যমে মনিটরিং চালু রেখেছেন প্রতিমন্ত্রী। একটি হট লাইন চালু থাকলেও রজমানের আগেই ৩৩৩ নম্বরের আরও একটি হটলাইন চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সংসদে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইস‌লাম টিটু বলেন, ‘সেখানে কৃষি খাদ্য যেকোনও পণ্য যদি যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়, তারা ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এক মুহুর্তের জন্যও হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি আহসানুল ইস‌লাম টিটু। তরুণ এ প্রতিমন্ত্রীর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সামলানো নিয়ে অনেকের অনেক প্রশ্ন থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর গাইড লাইনে তিনি কঠিন চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হতে সক্ষম হবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। অন্তত প্রথম এক মাসে পরিশ্রমের সাথে তার কাজের গতি, সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান সূত্র বের করার চেষ্টা, বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই তাদের লাভের লাগাম টেনে ধরা, কথায় সংযত ও বিনয় তার সফলতার পাল্লাকে ভারী করে তুলবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিজের হাতে রেখে তরুণ তুর্কি আহসানুল ইস‌লাম টিটুকে দিয়েই বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ঠিকই বড় চমক দিবেন প্রধানমন্ত্রী এমনটিও মনে করছেন কেউ কেউ।

কালের আলো/এমএএএমকে