জনপ্রতিনিধিদের একগুচ্ছ নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিতঃ 9:01 pm | February 25, 2024

কালের আলো রিপোর্ট :

স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা ঠিক রাখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের খেয়াল রাখতে বলেছেন। নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে জনগণকে দেয়া ওয়াদা পূরণ করতে উদ্ধুদ্ধ করেছেন। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি থেকে সমাজ রক্ষায় বিশেষ যত্নবান হতে সুপরামর্শ দিয়েছেন। জনপ্রতিনিধিদের চোখে বুনে দিয়েছেন সাবলম্বী স্থানীয় সরকারের স্বপ্ন। সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিদের দায় এড়ানোর উপায় নেই। শক্তিশালী স্থানীয় সরকার গড়ে তুলতে নিজ নেতৃত্বাধীন সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন।

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস ২০২৪’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রজ্ঞাবান প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলতেই প্রেরণাদায়ী উচ্চারণে পরিকল্পিত উদ্যোগ ও নানা কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের চিত্রপট উপস্থাপন করেন। তিনি বলেছেন, ‘শক্তিশালী স্থানীয় সরকার গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার কাজ করছে। রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে স্থানীয় সরকারকে। কেন্দ্রীয় সরকার উন্নয়নে বরাদ্দ দেবে, কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সাবলম্বী হতে হবে।’ স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলাম এমপি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের সকলকে আমি বলব ২০০৯ সাল থেকে আমরা সরকারে আছি। আজকে বাংলাদেশের একটি ধাপ উত্তরণ ঘটেছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এটা যেন পিছিয়ে না যায়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব এবং জনসেবা আপনারা করে যাবেন। আমরা যেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।

মানুষ এখন সব সেবা পান গ্রামে বসেই
প্রধানমন্ত্রী জানান, গ্রামীণ পর্যায়ে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে সরকার। রাস্তাঘাট অনেক হয়েছে। ডিজিটাল সেন্টার হয়েছে দেশব্যাপী। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। মানুষ এখন সব সেবা পান গ্রামে বসেই। মানুষের আয় বেড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উৎপাদন বাড়াতে যথাযথ মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে ভূমির কার্যকর ব্যবহার করতে হবে। সার্বজনীন পেনশন স্কিমে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত হলে উপকৃত হবে সবাই।

জনপ্রতিনিধিদের তো দায় এড়ানোর উপায় নেই
শেখ হাসিনা বলেন, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা ঠিক রাখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের খেয়াল রাখতে হবে। পানি দূষিত হলে দোষ হয় সরকারের। সরকারি কর্মকর্তারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চাকুরে। তাদের তো জবাবদিহিতা নেই। কিন্তু আমরা যারা জনপ্রতিনিধি, তাদের তো দায় এড়ানোর উপায় নেই। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা স্থানীয়দের খোঁজখবর রাখবেন। কারণ তাদের আস্থা-বিশ্বাসই আপনাকে প্রতিনিধি বানায়।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে জনগণকে দেয়া ওয়াদা পূরণ করবেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বুদ্ধি শুনে অযথা বা যেনোতেনো প্রকল্প নেবেন না। কারণ আপনার এলাকার প্রয়োজন আপনাকেই ভালো করে জানতে হবে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি থেকে সমাজ রক্ষায় বিশেষ যত্নবান হয়ে কাজ করতে হবে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের।

‘গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দিতে হবে। অহেতুক প্রকল্প নেবেন না। সুপেয় পানির পুকুরের পাশে কেন বর্জ্য ফেলার জায়গা বানাতে হবে? তাহলে তো প্রকল্প কাজে আসবে না। জলাধার ভরাট করে ভবন যাতে নির্মাণ না করা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শক্তিশালী করতে হবে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে

সরকার প্রধান বলেন, আমি মনে করি আগামী দিনে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। একটা রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করবে স্থানীয় সরকার। কাজেই স্থানীয় সরকার হবে সবচেয়ে শক্তিশালী। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে আমরা ব্যবস্থা করে দেব কিন্তু স্থানীয় সরকার স্থানীয়ভাবেই দেশের উন্নয়ন করবে এবং জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করব। জাতির পিতা যে স্বল্পোন্নত দেশ রেখে গিয়েছিলেন সেখান থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কারো কাছে মাথা নিচু করে নয় মাথা উঁচু করে আমরা চলবো। আমরা দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলবো। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি, প্রতিটি স্কুলের উন্নয়ন, জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। বিভাগগুলোতে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করছি, বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয় করে শিক্ষার মান আমরা উন্নয়ন করে দিচ্ছি।

২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১৯৭১ সালের লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। এই স্বাধীনতার সুফল প্রতি মানুষের ঘরে পৌঁছাব এটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেটা আমরা করতে পারব তখনই যদি সক্রিয় ভাবে আপনারা  কাজ করেন  এবং মানুষের সেবা করেন, তখনই এটা করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। আমাদের ফ্রিল্যান্সার আছে অনলাইনে কেনাবেচা হচ্ছে বাণিজ্য চলছে, রাস্তাঘাটের উন্নতি করে দিয়েছি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে সবদিক থেকেই উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে। আর যে কাজগুলো করে দিই সেটা রক্ষণাবেক্ষণ এবং যত্ন আপনাদেরই করতে হবে।

গোপালগঞ্জে পতিত জমিতে মণে মণে মাছ
গোপালগঞ্জে অযথা পড়ে থাকা জমিতে চাষ করে মণে মণে মাছ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর লাভের টাকা জমির মালিক, চাষী সবাই পাবেন বলেও জানান সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোপালগঞ্জে পতিত জায়গায় মাছ চাষ করা হয়েছে। কিছু দিন আগে পেলাম ১৪ মণ। আর গত পরশু সেখানে মাছ ধরা হয়েছে প্রায় ৮৮ মণ। প্রতিমণ বিক্রি করা হয়েছে ৭ হাজার ৭০০ টাকায়। জমির মালিক, চাষী সবাই এই লাভের টাকার ভাগ পাবেন। অথচ এই জমিগুলো অযথা পড়ে থাকতো।

অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, শরীয়তপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেদুর রহমান খোকা শিকদার, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন আহমেদ লাবলু, পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র জাকিয়া খাতুন, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন রশিদ লাবলুও স্থানীয় সরকার সংস্থার বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন।

কালের আলো/এমএএএমকে