কঠোর বাজার মনিটরিং করছে সরকার; তদারকিতে মাঠে বিশেষ টিম

প্রকাশিতঃ 10:06 pm | March 10, 2024

কালের আলো রিপোর্ট :

আসন্ন রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে কঠোর বাজার মনিটরিং করছে সরকার। এর অংশ হিসেবে রবিবার (১০ মার্চ) দুপুরে মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে বাজার পরিদর্শন করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। জানিয়েছেন, রবিবার (১০ মার্চ) রাত থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে তদারকির জন্য নামবে বিশেষ টিম। বাজার তদারকির জন্য নিয়মিত টিমের পাশাপাশি কাজ করবে আলাদা টিম। বাজারে পণ্যের দাম কিছুটা বাড়লেও কোন সঙ্কট নেই বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

জানা যায়, দ্রব্যমূল্যকে সহনীয় করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। নতুন সরকারে অতি স্পর্শকাতর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পরিচ্ছন্ন নতুন মুখ নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েই আহসানুল ইসলাম টিটু বাজার ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজাতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি নিয়মিতই বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছেন। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানি ও উৎপাদনকারীদের সঙ্গে বসেছেন। আন্ত:মন্ত্রণালয় টাস্কফোর্সের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কথা ভেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, মজুত ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ইতোমধ্যে প্রতি লিটারে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ১০ টাকা। বাজারে কোন প্রকার নৈরাজ্য মেনে না নেওয়ার সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, শিগগির ভারত থেকে পেঁয়াজ আসবে। আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ বাড়াবে।

রবিবার (১০ মার্চ) বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম জানিয়েছেন, দায়িত্বভার নিয়েই তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ে বাজার ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে কাজ শুরু করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘একাধিক মন্ত্রণালয় একসাথে কাজ করে যাচ্ছে। রমজানের শুরুতে পণ্যের চাপ বেশি। ভোক্তা অধিদপ্তরের বিশেষ দল বাজার তদারকিতে কাজ করবে। সরকারের সকল উদ্যোগের সুবিধা যেনো সাধারণ মানুষ পায়।’

সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর চাহিদা অনুযায়ী বাজারে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে থাকবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা বাজারে সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। রোজার সময় বাজার অশান্ত করতে নিত্যপণ্যের সরবরাহে বাধা সৃষ্টি, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, অনৈতিক মুনাফা অর্জনসহ ভেজাল বিক্রিসহ নানা ধরনের অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে থাকবে সরকার।

জানা গেছে, বাজারে কারসাজি বন্ধে পুরো রমজান মাসজুড়ে বাজার তদারকি করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিম টিম। বাজারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ টিসিবির মাধ্যমে সুলভমূল্যে বিপণন সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। দেশের এক কোটি পরিবারের কাছে কার্ডের মাধ্যমে রমজানের নিত্যপণ্য পৌঁছে দেবে টিসিবি। এর মধ্য দিয়ে কমপক্ষে দেশের পাঁচ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন।

মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে বাজার পরিদর্শন করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি বলেছেন, ‘টিসিবি সারাদেশে ১ কোটি মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মাধ্যমে বাজারে চাপ কমবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সাধারণ মানুষকে যৌক্তিক দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য কাজ করছে সরকার।’ সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান দেশের প্রতিটি বাজার কমিটিকে বাজার মনিটরিং করার আহ্বান জানান।

এ সময় তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাজার কমিটিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অধিদপ্তর এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে। মহাপরিচালক ব্যবসায়ীদের ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পাকা রশিদ সংরক্ষণের কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন ও অন্যান্য সরকরি দপ্তরের সাথে সমন্বয় করে বাজার তদারকি কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। রমজান সংশ্লিষ্ট পণ্য যেমন: লেবু, শসা, বেগুন ইত্যাদির পণ্যের অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি রোধে অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

একটি হিসাব বলছে, প্রতি অর্থবছরে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২১ লাখ টন যার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। কেবল রোজার মাসে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে ৪ লাখ টনের মতো। সারা বছরের জন্য প্রয়োজন হয় ১৮ লাখ টন চিনি, এরমধ্যে ৩ লাখ টনের চাহিদা থাকে কেবল রোজার সময়। সারা বছর যেখানে ৫ লাখ টন মসুর ডাল লাগে, সেখানে শুধু রোজায় চাহিদা থাকে ৮০ হাজার টনের মতো। ফলে ডালের চাহিদা মেটাতে ৫০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বছরে ৮০ হাজার টন ছোলার প্রয়োজন হয় দেশে, যার ৮০ শতাংশই ব্যবহার হয় রোজার মাসে। এ সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় পেঁয়াজের। ২৫ লাখ টন বার্ষিক চাহিদার ৫ লাখ টনই ব্যয় হয় রোজার সময়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করলেও সেভাবে প্রভাব পড়ছে না- এ বিষয়ে গণমাধ্যমের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই যারা রোজার অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানি ও উৎপাদন করেন তাদের সঙ্গে বসেছি। আমদানি এবং উৎপাদন পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে, এটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি। বাজারে রমজান উপলক্ষ্যে এ মুহূর্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। গত দেড় মাসে চালের বাজারে একটা অস্থিরতা ছিল। সেটা আল্লাহর অশেষ রহমতে স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে। চালের দাম নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। তেলের দাম আমরা নির্ধারণ করে দিয়েছি।‌’

পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে দাম বেঁধে দিতে চান প্রতিমন্ত্রী
রোববার (১০ মার্চ) সচিবালয়ে কৃষিপণ্য সরবরাহে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এবং রাশিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘প্রোডিনটর্গ’ এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, আগামীতে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে দাম বেঁধে দেওয়া হবে।

এ সময় প্রতিমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতে দেখলাম ১৮টি অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের রাষ্ট্রীয় সার্কুলার দিয়ে দিয়েছে, এই পণ্যগুলোর দাম কেউ এ মাসে (রমজান) বাড়াতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এবার হয়তো পারি নাই। ইনশাআল্লাহ আমাদের সাপ্লাই চেইন ইম্প্রুভ ও পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ নিশ্চিত করে আগামীতে কেবিনেটের অনুমোদন নিয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের একটা কমপ্লিট লিস্ট তৈরি করবো। সেই অনুযায়ী সাপ্লাই বাড়ানো এবং পণ্যের নির্ধারিত দাম আমরা যাতে ঠিক করতে পারি।’

কালের আলো/এমএএএমকে