মোহাম্মদপুরে ২৫ দিন শেকলে বেঁধে তরুণীকে সংঘবদ্ধ ‘ধর্ষণ’. আটক ৪
প্রকাশিতঃ 6:44 pm | April 01, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
রাজধানীর একটি বাসায় ২৫ দিন শেকলে বেঁধে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের পর এক তরুণীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তিন যুবক ও এক নারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা পলাতক রয়েছেন।
জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বর থেকে এই ঘটনা জানতে পেরে শনিবার (৩০ মার্চ) মোহাম্মদপুরের নবীনগরে চার তলার এক ফ্ল্যাট থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। আসামি তিন যুবক হলেন- সান (২৬), হিমেল (২৭) ও রকি (২৯)। আর নারীর নাম সালমা ওরফে ঝুমুর (২৮), যিনি এক প্রবাসীর স্ত্রী।
পুলিশ বলছে, ভুক্তভোগী তরুণীর সঙ্গে মাসুদ নামে এক আইনজীবীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তার অনুপস্থিতিতে সান নামের এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর কারণে মাসুদ ক্ষিপ্ত হন। এর প্রতিশোধ নিতে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে সান ও তার বন্ধুদের দিয়ে এই তরুণীকে শিকলে বেঁধে পৈশাচিকভাবে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন চালানো হয়। এতে সহযোগিতা করেন সালমা নামে এক নারী। তিনি নির্যাতন ও বিকৃত যৌনাচারের ভিডিও ধারণ করে বিদেশে অবস্থানরত মাসুদের কাছে পাঠাতেন।
তরুণীকে বন্দি অবস্থায় ধর্ষণ, নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
অভিযুক্তরা হলেন- ভুক্তভোগী তরুণীর বর্তমান প্রেমিক সান ও তার দুই বন্ধু হিমেল ও রকি এবং সালমা ওরফে ঝুমুর। রবিবার রাতভর টানা অভিযান চালিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার (০১ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর শ্যামলীতে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক এসব তথ্য জানান।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে আজিমুল হক বলেন, “বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ এবং পরে তারা অন্যত্র বিয়ে করায় ওই তরুণী তার বড় বোনের বাসায় থাকতেন। সে সময় ভগ্নিপতির মাধ্যমে মাসুদ নামের এক আইনজীবীর সঙ্গে পরিচয় হয়। আইনজীবী মাসুদের সঙ্গে লিভ টুগেদার করতেন তরুণী। মাসুদ বেশিরভাগ সময় বিদেশে থাকেন। দেশে এলে এই তরুণীর সঙ্গে থাকতেন। পরে মাসুদের মাধ্যমে এক প্রবাসীর স্ত্রী সালমা ওরফে ঝুমুরের সঙ্গে পরিচয় হয় তরুণীর। এক পর্যায়ে সালমার সঙ্গে নবীনগর হাউজিং এলাকায় ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠেন ওই তরুণী। যার সব খরচ বহন করতেন মাসুদ। পরে ঝুমুরের মাধ্যমে সান নামের এক যুবকের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মাসুদ।”
ডিসি আজিমুল হক জানান, মাসুদ ভুক্তভোগী তরুণীকে শায়েস্তা করতে তার বর্তমান প্রেমিক সানের সঙ্গে হাত মেলান। সালমাকে দিয়ে তাদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মাসুদের নির্দেশনায় কাজ করান। তরুণীর রুমে বসানো হয় গোপন ক্যামেরা। বিভিন্ন সময় সান ও তার বন্ধু হিমেল ভুক্তভোগী তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার দৃশ্য গোপনে ধারণ করে পাঠানো হতো মাসুদের কাছে। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে ভিডিও পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, “গোপনে ভিডিও করার বিষয়টি ভুক্তভোগী তরুণী জেনে যাওয়ার পর তার ওপর শুরু হয় নির্যাতন। হাত-পা ও মুখ বেঁধে পৈশাচিক নির্যাতন চালাতেন সান ও তার বন্ধুরা। যার প্রতিটি মুহূর্ত ভিডিও ধারণ করে পাঠানো হতো মাসুদের কাছে।”
২৫ দিন পর যেভাবে বন্দিদশা থেকে উদ্ধার: ডিসি আজিম বলেন, “গত ২৯ মার্চ রাত ৯টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল পেয়ে ভুক্তভোগী তরুণীকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় তরুণীকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। ভুক্তভোগী তরুণী ঘুমিয়ে গেলে বাইরে যান সালমা, সান ও অন্যরা। কিছুক্ষণ পর ঘুম ভেঙে গেলে বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে চিৎকার দিলে পথচারীরা ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ গিয়ে নবীনগরের একটি বহুতল ভবনের চারতলা থেকে তরুণীকে উদ্ধার করে।”
বর্তমানে ওই তরুণী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান ডিসি আজিম।
আজিমুল হক বলেন, “ভুক্তভোগী তরুণীকে নির্যাতনের বেশিরভাগ ভিডিও ও ছবি সালমার মোবাইলে তোলা। কিন্তু সে মোবাইলটি লুকিয়ে ফেলেছে। সেটি পেলে পৈশাচিক নির্যাতনের আসল তথ্য ও ভিডিওর গন্তব্য সম্পর্কে জানা যাবে।”
কালের আলো/ডিএস/এমএম