জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পদ থেকে ব্যারিস্টার খোকনকে অব্যাহতি
প্রকাশিতঃ 6:14 pm | April 21, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহ-সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শনিবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের দপ্তর সম্পাদক জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম গত ৬ ও ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আপনাকে মনোনীত করে। বিগত দুই বছরের মতো এবারের নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনরা নজিরবিহীনভাবে ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও মনগড়া ফলাফল ঘোষণা করে। এমনকি সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগ দলীয় দুজন প্রার্থী, প্রথমে নাহিদ সুলতানা যুথী পরে শাহ মঞ্জুরুল হককে তথাকথিত বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা নির্বাচনের অব্যবহিত পরে ৮ মার্চ সকালে সমিতির অডিটোরিয়ামে হামলা চালিয়ে আইনজীবীদের মারধর ও ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ওই ঘটনা আওয়ামী লীগের দুজন সম্পাদক পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত হলেও সরকারের একজন বেতনভুক্ত আইন কর্মকর্তা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ও আরও তিনজন আইনজীবী ফোরাম নেতাকে আসামি করে বিগত ৯ মার্চ শাহবাগ থানায় একটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ফৌজদারি মামলা দায়ের করে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পালনকারী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরী ও নির্বাচনে সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজলকে যথাক্রমে গত ৯ ও ১০ মার্চ মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় গ্রেপ্তার করে তাদের যথাক্রমে ৩ দিন ও ৪ দিন ডিবি অফিসে রিমান্ডে নেওয়া হয়। তারা উভয়েই দুই সপ্তাহ কারাভোগ করেন। তাদের কারাগারে রেখে গত ১০ মার্চ লুট হয়ে যাওয়া ব্যালট পেপার গণনার নাটক সাজিয়ে তথাকথিত ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম মনোনীত পুরো প্যানেলেরই বিজয় সুনিশ্চিত ছিল বলে দাবি করা হয়। এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার খোকনকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, সেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি জায়েজ করতে আপনাকে সভাপতি পদে ও অ্যাডভোকেট ফাতিমা আকতার, অ্যাডভোকেট মো. শফিকুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট সৈয়দ ফজলে এলাহী অভিকে নামকাওয়াস্তে সদস্য পদে বিজয়ী দেখানো হয়।
নির্বাচনের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে গত ২৪ মার্চ ব্যারিস্টার খোকনের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি-সম্পাদকদের এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয় বলে ফোরামের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খোকনসহ বিজয়ী ঘোষিত তিনজন সদস্যকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২০২৫ এর মেয়াদকালের দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে বিগত ২৭ মার্চ এক চিঠিতে আহ্বান জানানো হয়। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে সদস্য পদে বিজয়ী ঘোষিত তিনজন ফোরাম সদস্য দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকলেও সংগঠনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ব্যারিস্টার খোকন গত ৪ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
একইদিন সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সক্রিয় উপস্থিতিতে এক মতবিনিময় সভার মাধ্যমে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী তিনজন এমপি প্রার্থী ও বিএনএম নেতা, তৃণমূল বিএনপি, দল থেকে বহিষ্কৃত ও দলছুট কতিপয় সদস্যকে দিয়ে দল ও এর দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বিষোদগার করিয়েছেন বলে অভিযোগ আনা হয়।
এছাড়া তিনি তার বক্তব্যে আইনজীবী ফোরামের শীর্ষ নেতাদের সম্পর্কে অবমাননাকর ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত মানবেন না বলে ঘোষণা করেছেন, অবৈধভাবে ঘোষিত আওয়ামী লীগ দলীয় তথাকথিত একজন সম্পাদকের হাতে হাত রেখে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে গত ৬ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানস্থ কার্যালয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি-সম্পাদকদের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে ব্যারিস্টার খোকনের কার্যক্রমকে দলীয় চরম শৃঙ্খলাপরিপন্থি হিসেবে গণ্য করে সর্বসম্মতভাবে তাকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৬ ও ৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সম্পাদক পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী রাতেই ভোট গণনা শেষ করে ফলাফলের দাবি জানান। কিন্তু বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ মনোনীত প্যানেল থেকে সম্পাদক পদপ্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হকসহ অন্যরা শুক্রবার বিকালে ভোট গণনার দাবি জানান। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষ হট্টগোল এবং হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। সে সময় সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবু সাইদ একটি পক্ষের হাতে মারধরের শিকার হন। এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পর থেমে যায় ভোট গণনা ও ফলাফল। পরে ৯ মার্চ ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
তাতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল) প্রার্থী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনকে সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের (সাদা প্যানেল) প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হককে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
সমিতির পরিচালনা পর্ষদের ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি এবং তিনটি সদস্য পদে বিএনপি সমর্থক নীল প্যানেলের জয় হয়। আর আওয়ামী লীগ সমর্থক সাদা প্যানেল পায় সহ-সভাপতি, সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ দশটি পদ।
ভোট গণনার সময় হট্টগোল ও হাতাহাতির মামলায় নীল প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
কালের আলো/এমএইচ/এসবি