শ্রদ্ধা-আবেগ-ভালোবাসায় ছাত্রলীগের ‘দুর্দিনের কান্ডারি’ অশ্রুকে স্মরণ

প্রকাশিতঃ 1:55 am | February 10, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ‘দুর্দিনের কান্ডারি’ হিসেবে বিবেচনা করা হয় মঞ্জুরুল ইসলাম অশ্রুকে। ২০০২ সালে বিএনপি’র সন্ত্রাসীদের হাতে নিভে যায় সাহসী এ নেতার জীবন প্রদীপ। ১৪ বছর আগেও তাঁর স্মরণে কোন দোয়া মাহফিল বা কোন রকমের আনুষ্ঠানিকতা ছিল না।

দু:সময়ের শক্তিমান এক নেতার প্রতি এমন উদাসীনতা প্রকারান্তরে তাকে অবমাননার শামিল বলেই মনে করেন সৈয়দ মিজানুর রহমান। অশ্রু’র শ্রম-ঘামে গড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে প্রথমেই তাকে বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণের উদ্যোগ নেন তিনি।

শুরুটা ২০১৬ সাল। এরপর টানা তিন মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রাণভরেই তাকে স্মরণ করা হচ্ছে। শুক্রবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) মঞ্জুরুল ইসলাম অশ্রু’র ১৫ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ। রাজধানীর ধানমণ্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভায় বক্তাদের প্রায় সবাই আকাশের মতো উদার আর সমুদ্রের মতোই বিশাল হৃদয়ের অশ্রু’র প্রতি হৃদয়গ্রোথিত আবেগ আর ভালবাসার কথাই উচ্চারণ করেছেন।

এদিন নিজের ছেলেকে স্মরণে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের ঐক্যের মেলবন্ধন আর ভালবাসার শ্রদ্ধাঞ্জলি অশ্রু ঝরিয়েছে গর্বিত বাবা ফাইজুল ইসলাম ভূইয়ার। নিজেকে স্বাভাবিক করে তিনি বলেছেন, ‘আমার ছেলে অশ্রু নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসতেন ছাত্রলীগকে। ভালোবাসতেন তাঁর চারপাশের মানুষদের। দেশকে এবং বঙ্গবন্ধু কন্যাকে।’

ছেলে হারানোর বুকের ভেতরের সেই দগদগে ক্ষত নিয়ে কন্ঠে ধরলেন সেই তেজোদীপ্ত শ্লোগান ‘জয় বাংলা’। কৃতজ্ঞতা আর অফুরান ভালবাসার কথা জানালেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের নেতৃত্বের প্রতি।

তৃতীয়বারের মতো বেশ ঘটা করেই অশ্রু স্মরণে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীমও।

দল ও নেত্রীর প্রশ্নে জোরালো কন্ঠস্বর প্রয়াত এ ছাত্রলীগ নেতার আলোচনা সভায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করারও শপথ করান।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা জীবনবাজি রেখে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেন।

এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, বর্তমান সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এস.এম.জাকির হোসাইন প্রমুখ।

১৯৯২ সালে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন মঞ্জুরুল ইসলাম অশ্রু। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও ময়মনসিংহের নান্দাইলের কৃতি পুরুষ খালেক নেওয়াজ খানের নাতনি জামাই।

৯১’এ বিএনপি’র প্রথম সরকারের সময়কার জামানায় চরম দু:সময় পাড়ি দেয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। দলের কঠিন সেই দু:সময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সোচ্চার ছিলেন অশ্রু। যে কোন সময় প্রতিবাদী হয়ে উঠতেন তিনি।

বিএনপি’র সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ হারানোর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত ‘দুর্দিনের কান্ডারি’ ভূমিকাতেই দেখা গেছে তাকে। অথচ ২০০২ সালের এ দিনে নিহত হবার পর কেটে যায় ১৪ টি বছর। এ সময়টাতে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তাকে আনুষ্ঠানিক কোন শ্রদ্ধা জানানো হয়নি। অনাকাঙ্খিতভাবেই যেন তাকে ভুলেই যাওয়া হয়েছে।

নেতৃত্বে আসার পরই ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমানকে প্রয়াত সংগ্রামী এ নেতার প্রতি নুন্যতম শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টি ভাবিয়েছে। এ প্রসঙ্গে সৈয়দ মিজানুর রহমান কালের আলোকে বলেন, ‘নতুন প্রজন্ম অশ্রু ভাইয়ের আদর্শিক রাজনীতি ও ত্যাগ সম্পর্কে জানতো না।

তাছাড়া পূর্বসূরীদের ভুলে যাওয়া এক ধরণের ধৃষ্টতা। আমি চেয়েছি নতুন প্রজন্ম আমাদের দেখে শিখবে। যেদিন আমরা থাকবো না সেদিন ওরাই ঠিক এভাবে আমাদের স্মরণ করবে। শ্রদ্ধা জানাবে। আমরা গত তিন বছর যাবত হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় প্রিয় নেতাকে স্মরণ করছি।’

‘মির্জা ফখরুল দৌড়েছেন, রিজভী দাঁড়িয়ে ছিলেন এতিমের মতো’
প্রয়াত ছাত্রলীগ নেতা মঞ্জুরুল ইসলাম অশ্রু’র মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বলেন, দুর্নীতি মামলায় খালেদার রায়ের দিন টেলিভিশনে দেখলাম বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ তিন থেকে চার নেতা পুলিশ আসার আগোই দৌড়েছেন।

রিজভী সাহেবকে দেখলাম এতিমের মত দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এ দল কিভাবে আন্দোলন করবে। খালেদা ও তারেকের মত যারা সস্পদ লুটেপুটে খায় তারা কখনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে পারবেনা।’ সারা দেশে কোথাও বিএনপি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে পারেনি বলেও দাবি করেন তিনি।

এনামুল হক শামীম বলেন, আসলে দলের নেতা নেত্রীরা যদি অসৎ হয়, কর্মীরাও তাদের সাথে থাকে না। তাদের কর্মীরা জানে বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতিবাজ, তার পুত্র তারেক রহমানও দুর্নীতিবাজ। ক্ষমতায় থেকে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন, মানি লন্ডারিং করেছেন।

নির্বাচন থেকে বিএনপিকে দূরে রাখার জন্য খালেদার সাজা হয়েছে বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার দলের নেতাকর্মীরা বলেছেন, নির্বাচন থেকে সরানোর জন্য নাকি আমরা এটা করেছি। মামলা হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে, আওয়ামী লীগের আমলে নয়।

আওয়ামী লীগ যদি প্রতিশোধ পরায়ণ থাকতো তাহলে সরকারের প্রথম মেয়াদে সাজা দিতে পারতো, দ্বিতীয় মেয়াদে নয়। ৯ বছর সময় লেগেছে, ৩৬২ দিন কার্যদিবস হয়েছে। ২৮ দিন খালেদা জিয়া তার পক্ষে বক্তব্য রাখার জন্য তার অ্যাডভকেটদের নিয়োগ করেছেন।

খালেদার দুর্নীতি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত দাবি করে সাবেক এ মেধাবী ছাত্রনেতা বলেন, খালেদা জিয়া আগেই দুর্নীতিবাজ ছিলেন। তিনি কালো টাকাকে সাদা করেছেন। তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বিএনপির মত একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান ছিলেন, তিনি যে দুর্নীতি করেছেন সেটা সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রের অ্যাকাউন্টে বিদেশ থেকে টাকা এসেছে। সেখান থেকে চেকের মাধ্যমে খালেদা জিয়া তার পরিবার ও অনান্য আসামীদের একাউন্টে দিয়েছে। এখানে গোপন করার কিছু নেই, ষড়যন্ত্র বা চক্রান্ত করারও কিছু নেই।

কালের আলো/এএ