মূর্তি ও ধাতব মুদ্রা নিয়ে প্রতারণা, ক্ষুব্ধ হয়ে ভায়রাকে অপহরণ
প্রকাশিতঃ 5:55 pm | May 03, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতব মুদ্রা পাচারের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে অপহরণের শিকার আনোয়ার হোসেন খানকে (৪৪) নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন তুষারধারা এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় চক্রের মূল হোতাসহ ৭ জনকে। তাদের কাছ থেকে ৮ রাউন্ড গুলিসহ একটি রিভলবার ও একটি শটগান জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- হাজি ওয়াজী উল্লাহ্ খোকন (৬৫), মো. আরিফ হোসেন (৫৫), সাইফ উদ্দিন আহমেদ মিলন (৬২), সিরাতুল মোস্তাকিম (৫৮), মো. রুহুল আমিন (৬০), মো. জাকির হোসেন (৩০) ও মো. স্বাধীন (৫২)।
শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর এ তথ্য জানান।
র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত বুধবার (১ মে) রাত ৮টার দিকে ফতুল্লা থানাধীন তুষারধারা এলাকায় একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে খোকন হাজির নেতৃত্বে ৮-৯ জনের একটি অপহরণকারী চক্র আনোয়ারকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জিম্মি করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।
পরে কেরানীগঞ্জ থানাধীন চুনকুটিয়া এলাকায় খোকন হাজির মালিকানাধীন ‘চুনকুটিয়া রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’ অফিসের ভেতরে আটকে রাখে। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা অপহৃতকে লোহার রড, পাইপ ও লাঠি দিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালায়। পরে মোবাইলে তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ বাবদ ৯৫ লাখ টাকা দাবি করে।
অপহৃতের ছোট ভাই তার ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে অপহরণকারী চক্রের দেওয়া একটি ব্যাংক হিসাব নাম্বারে পাঠায়। ওই টাকা প্রদানের পরও অপহরণকারীরা অপহৃতের ওপর নির্যাতন অব্যাহত রাখে এবং তার পরিবারকে বাকি টাকা প্রদানের জন্য হুমকি দিতে থাকে। বাকি টাকা না দিলে তাকে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়।
এরই প্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর গোয়েন্দা দল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় ওই অপহরণকারী চক্র ও অপহৃতের অবস্থান শনাক্ত করে। অপহৃতকে উদ্ধার এবং অপহরণকারী চক্রকে ধরতে সেই অফিসের ভেতরে অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, আসামি খোকন হাজি ২০১৫ সাল থেকে দেশের মূল্যবান কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পিতলের ধাতব মুদ্রা ভারতে পাচার করে আসছিলেন। তার এ দুষ্কর্মে সহযোগী ছিল ভারতীয় নাগরিক মিলন চক্রবর্তী। যিনি নিজেকে একটি বিখ্যাত ভারতীয় কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দিতো।
কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পিতলের ধাতব মুদ্রার মূল ক্রেতা ছিল মিলন চক্রবর্তী। গ্রেপ্তার খোকন হাজি ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতব মুদ্রার ৭টি চালান ভারতে পাচার করেছিলেন। এসব সংগ্রহের কাজে নাঈম (৩৫), মোস্তফা হাওলাদার (৫০) ও রবি বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দেশব্যাপী কাজ করতো। বিনিময়ে তাদের মাসিক ৩০ হাজার টাকা করে বেতন দিতেন।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে ভারতীয় নাগরিক মিলন চক্রবর্তী খোকন হাজিকে বিশেষ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও পিতলের ধাতব মুদ্রা কেনার প্রস্তাব দেন। যার বিনিময় মূল্য ৪০০ কোটি টাকা। খোকন হাজির বিশ্বস্ত মোস্তফা হাওলাদার দুষ্প্রাপ্য মূর্তি ও ধাতব মুদ্রা দেওয়ার কথা বলে নকল মূর্তি ও ধাতব মুদ্রা দিয়ে খোকন হাজির কাছ থেকে ৯৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
ফিরোজ কবীর বলেন, এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে মোস্তফা হাওলাদারকে পাগলের মতো খুঁজতে থাকেন খোকন হাজি। কিন্তু তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। এ জন্য মোস্তফা হাওলাদারের ভায়রাভাই আনোয়ার হোসেনকে অপহরণ করা হয়।
তিনি বলেন, অপহরণের ঘটনায় র্যাব-৩-এর একটি দল বৃহস্পতিবার (২ মে) রাত ২টায় ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে আনোয়ার হোসেনকে উদ্ধার ও অপহরণকারী চক্রের মূল হোতাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাব-৩ এর সিও আরও জানান, খোকন হাজি একজন ঠিকাদার ও মতিঝিল এলাকায় তার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গ্রেপ্তার খোকন হাজি ১৯৭৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তার ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। ঠিকাদারি ব্যবসার আড়ালে খোকন হাজি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য ধাতব মুদ্রার কারবার করে আসছিলেন।
এ অপহরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তার অপরাপর সহযোগীরা সবাই তার অবৈধ কষ্টিপাথর ও ধাতব মুদ্রার কারবারের অন্যতম সহযোগী। অপহৃতকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর।
কালের আলো/এস/এমএম