বরাদ্দ মেলেনি ৬ হাজার কোটি টাকা, আটকে আছে ময়মনসিংহ বিভাগের জমি অধিগ্রহণ
প্রকাশিতঃ 3:51 pm | February 10, 2018
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
প্রয়োজনীয় টাকা বরাদ্দ না পাওয়ায় আটকে আছে ময়মনসিংহ বিভাগের নতুন শহর প্রতিষ্ঠার জন্য জমি অধিগ্রহণ কাজ। ফলে ময়মনসিংহ বিভাগ প্রতিষ্ঠার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। দৈনিক কালের আলো’র সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা নিজেদের ক্ষোভের কথা জানান।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠিত হয়। দেশের অষ্টম বিভাগ হিসেবে নিকার এ বিভাগ গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। এর ঠিক এক মাসের মাথায় ময়মনসিংহ বিভাগের গেজেট প্রকাশিত হয়।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের অফিস, রেঞ্জ ডিআইজি’র কার্যালয় সবকিছুই চলছে অস্থায়ী কার্যালয়ে। এরই মধ্যে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড গঠন করা হলেও সেটিরও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়নি।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্র জানায়, ব্রক্ষপুত্র নদের ওপারে নতুন বিভাগীয় শহর প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন ব্যয়ের জন্য গত বছরের ৪ জুলাই ৬ হাজার ৩’শ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে জমি অধিগ্রহণের জন্য ৩ হাজার ৩’শ কোটি টাকা নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে স্থানীয় জনসাধারণ সোচ্চার হওয়ায় একাধিকবার তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। কিন্তু তারা জমি অধিগ্রহণের বিরোধীতা করায় এ বিষয়টিরও কোন সুরাহা হয়নি।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্র আরো জানায়, যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে তাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন বাবদ আরো ৩ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। ফলে মোট ৬ হাজার ৩’শ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে ৬ মাস আগে চিঠি দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
অর্থমন্ত্রীকে দেয়া জনপ্রশাসনমন্ত্রীর চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ব্রহ্মপুত্র নদের অপর পাড়ে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ৮টি মৌজায় ৪ হাজার ৩৬৬ দশমিক ৮৮ একর ভূমিতে একটি আধুনিক, পরিকল্পিত নতুন বিভাগীয় শহর ও বিভাগীয় সদর দফতর প্রতিষ্ঠার জন্য নগর উন্নয়ন অধিদফতর মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।
২০১৬ সালের পহেলা আগস্ট প্রধানমন্ত্রী ১৪টি নির্দেশনাসহ মহাপরিকল্পনাটি অনুমোদন দেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর তিনটি নান্দনিক সেতু তৈরি করা হবে। এগুলোর মাধ্যমে নতুন শহরটি পুরাতন শহরের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। নতুন শহরের রাস্তাগুলো প্রস্থে দেড়শ’ ফুট থেকে একশ’ ফুটের হবে। দাফতরিক, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খেলাধুলা বিনোদনসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। সুপরিসর প্রাকৃতিক লেকের পাড়ে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, মিউজিয়াম, হোটেল-মোটেলসহ নান্দনিক অনেক স্থাপনা থাকবে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জি.এম.সালেহ উদ্দিন দৈনিক কালের আলোকে বলেন, জমি অধিগ্রহণসহ সবকিছুর জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রীকে টাকা বরাদ্দের জন্য চিঠি দিয়েছে। কিন্তু টাকা বরাদ্দ না হওয়ায় জমি অধিগ্রহণ কাজ আটকে আছে। এছাড়া জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজনও বিক্ষোভ করছেন। আলোচনা করে তাদের বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা চলছে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রশাসনের এ শীর্ষ কর্মকর্তা দাবি করেন, টাকা বরাদ্দ না পেলেও ময়মনসিংহ বিভাগের কার্যক্রম থেমে নেই। সব ধরণের কার্যক্রমই জোর গতিতে চলছে। অর্থ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিলেও জমি অধিগ্রহণ, অবকাঠামোসহ সব ধরণের কাজ শুরু হবে।
এদিকে, ময়মনসিংহ বিভাগের দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। এ সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী নুরুল আমিন কালাম বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর গড়ে তুলতে অবিলম্বে অর্থ মন্ত্রণালয় এ টাকা ছাড় করবে বলে আমরা আশাবাদী। কোন ব্যত্যয় ঘটলে যেভাবে বিভাগ পেয়েছি সেইভাবেই এ টাকা আদায় করেও ছাড়বো।
ময়মনসিংহ বিভাগের গণদাবি বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে আদায় করেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য বেগম রওশন এরশাদ।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দৈনিক কালের আলোকে তিনি বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগ প্রতিষ্ঠার জন্য জমি অধিগ্রহণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বরাদ্দের টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় যেন দ্রুত ছাড় করে এ বিষয়টি আমি জাতীয় সংসদে তুলে ধরবো।
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ময়মনসিংহ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি এ অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের প্রাণের দাবি পূরণ করেছেন। ময়মনসিংহ বিভাগ যেন দ্রুত পূর্ণতা পায় এজন্য প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক। আমি বিশ্বাস করি তিনিই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
কালের আলো/এসএ