পূর্বাচলে ঘুরতে নিয়ে স্ত্রীকে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করেন স্বামী

প্রকাশিতঃ 8:16 pm | May 22, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানাধীন পূর্বাচল ২৪নং সেক্টরে স্ত্রীকে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় আসামি উবার চালক স্বামী মিজানুর রহমান সুমনকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১।

র‍্যাব জানায়, সুমনের এক মেয়ে ও স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও দেড় বছর আগে বিলকিসকে বিয়ে করে একটি ভাড়া বাড়িতে রাখেন। কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে দ্বিতীয় স্ত্রীর আর্থিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়ে তাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৯ মে পূর্বাচলে ঘুরতে নিয়ে তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেন। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিলকিসের মৃত্যু হয়।

বুধবার (২২ মে) দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় র‍্যাব-১ এর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক আহমেদ।

তিনি বলেন, “সুমনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে হলেও প্রথম স্ত্রী শিমু ও দেড় বছরের ছোট মেয়ে এবং মাসহ তুরাগ থানার রানাভোলা নামক স্থানে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন। দেড়-দুবছর আগে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার বিলকিসকে (২৬) তার অভিভাবকের অগোচরে বিয়ে করেন এবং রানাভোলা থেকে আনুমানিক দুই কিলোমিটার দূরে নয়াপাড়া নামক স্থানে অন্য একটি বাসা ভাড়া করে রাখেন।

উবারে গাড়ি চালিয়ে স্বল্প আয়ে তাকে দুটি সংসার চালানোর দায়িত্ব নিতে হয়। গত তিন-চার মাস ধরে দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিস তার কাছে একটু বেশি টাকা দাবি করা শুরু করেন। ফলে উভয়ের মধ্যে তিক্ততা শুরু হয়। এক পর্যায়ে সুমন তার দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিসকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। মাঝে মধ্যে তিনি বিলকিসকে নিয়ে পূর্বাচল এলাকায় ঘুরতে যেতেন এবং সুযোগ খুঁজতেন।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, হত্যার উদ্দেশ্যে গত ১৯ মে দুপুরের পর সুমন তার স্ত্রী বিলকিসকে নিয়ে পূর্বাচল এলাকায় ঘুরতে যান। পথে চা পান করেন এবং জায়গা ও সুযোগ খুঁজতে থাকেন। বিকাল ৪টার পর ২৪নং সেক্টরে একটি জঙ্গল এলাকায় নিয়ে যান। জায়গাটা খুবই নিরিবিলি দেখে সেখানে গাড়ি থামান। বিলকিস গাড়িতে বসে থাকেন এবং আসামি সুমন গাড়ি থেকে বের হয়ে পাইপ দিয়ে পেট্রোল বের করে একটি বোতলে ভরেন। গাড়িটি তখনো স্টার্ট অবস্থায় ছিল। কিছুক্ষণ পর বিলকিস গাড়ি থেকে নামলে সঙ্গে সঙ্গে সুমন বোতলের পেট্রোল বিলকিসের গায়ে ছিটিয়ে দিয়ে ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে দ্রুত গায়ে ছুঁড়ে মারেন। আগুন দাউদাউ করে জ্বলে উঠলে বিলকিস বাঁচার জন্য জোরে চিৎকার শুরু করেন। এরপর সুমন গাড়ি নিয়ে দ্রুত সরে পড়েন।

ডাক চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন এবং বিলকিসকে একটি ড্রেনের মধ্য থেকে উদ্ধার করে প্রথমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাকে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন ২০ মে সকাল ৯টায় তিনি মারা যান।

এদিকে ঘটনার পর সুমন আত্মগোপনে চলে যান। গত মঙ্গলবার বিকাল ৬টার সময় গাজীপুর জেলার বাসন থানায় অভিযান চালিয়ে সুমনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১ এর একটি দল।

এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

কালের আলো/ডিএস/এমএম