সালাম মূর্শেদীর বিপক্ষে ফিফার দুটি অভিযোগ খারিজ, ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ায় গুণতে হবে ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ জরিমানা

প্রকাশিতঃ 6:05 pm | May 24, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

আর্থিক অনিয়মের দায়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ৩ বছর করেছে ফিফা। বেড়েছে তাঁর জরিমানার পরিমাণও। আগের ১০ হাজারের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে আরও ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ। একই সঙ্গে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সাবেক প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন ও সাবেক অপারেশন্স ম্যানেজার মিজানুর রহমানকে।

তবে কোন আর্থিক অনিয়ম বা দুর্নীতি না পেলেও শুধুমাত্র বাফুফের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যানের পদে থাকায় ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ জরিমানা গুণতে হবে বাফুফের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম মূর্শেদীকে। ফিফার স্বতন্ত্র এথিকস কমিটির বিচারিক চেম্বার কোড অব এথিকসের ১৪ নম্বর ধারা ভঙ্গে (সাধারণ কর্তব্য) দায়িত্ব পালনে আরও সতর্ক না হওয়ায় মূলত এ জরিমানা দিতে হবে দেশসেরা সাবেক এ ফুটবলারকে। তবে প্রতিবারের মতো এবারও মূল ঘটনাকে আড়াল করে ভিন্ন সমীকরণ দাঁড় করিয়ে কোন কোন বিশেষ মহলের অপপ্রচারের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে সালাম মূর্শেদীকে।

পুরো বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বাফুফের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মূর্শেদী এমপি। শুক্রবার (২৪ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বাফুফের আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত করছিলো ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা, যার প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এথিক্স কমিটির অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একটি শুনানির আয়োজন করে। যেখানে আমার বিরুদ্ধে ফিফার অনুচ্ছেদ ১৪, ১৬ ৬ ২৫ লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। (Art. 14 of the FIFA Code of Ethics (FCE)-General duties, Art. 16 of the FCE-Duty of loyalty, Art. 25 of the FCE-Forgery and falsification) উক্ত শুনানিতে আমি সালাম মূর্শেদী নিজেই আমার আইনজীবীদের সাথে উল্লিখিত অভিযোগ প্রত্যাহার করার পক্ষে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য যুক্তি স্থাপন করি।’

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ফলস্বরুপ ২০২৪ সালের ৭ মার্চ ফিফা এথিক্স কমিটির অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার কর্তৃক গৃহীত পরবর্তী সিদ্ধান্তে আমার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগের মধ্যে দুটি যথাক্রমে (Art. 16 of the FCE-Duty of loyalty and Art. 25 of the FCE-Forgery and falsification) খারিজ করে দেয়। সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, ফিফার এথিক্স কমিটির অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার কর্তৃক অধিকতর তদন্তের পর আমার বিপক্ষে মোট তিনটির মধ্যে অনৈতিক কার্যক্রম এবং জালিয়াতি বা মিথ্যাচারের মত গুরুত্বপূর্ণ দুইটি অভিযোগের কোন ভিত্তি পায়নি ফিফা। ক্রয় প্রক্রিয়ায় চারজন স্বাক্ষরকারীর মধ্যে দুইজনকে ইতোমধ্যেই নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দীনের সরাসরি জড়িত না থাকায় তাকে খারিজ করা হয়েছে। তবে আমি যেহেতু ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান সে কারণেই আমাকে গুনতে হচ্ছে নূন্যতম (CFR 10,000.00) আর্থিক জরিমানা।’

নীতি নৈতিকতার মানদণ্ডে অনড় দেশের ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তী আব্দুস সালাম মূর্শেদী এমপি আগেও বলেছিলেন, ‘ফিফা বাফুফের কোন দুর্নীতি পায়নি।’ আক্ষরিক অর্থেই মূর্শেদীর গত বছরের ১৭ এপ্রিলের এ বক্তব্য সঠিক বলেই প্রতীয়মান হয় ফিফার ৫১ পাতার তদন্ত প্রতিবেদনে। এদিকে, দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া আবু হোসেন ও মিজানুর রহমানও ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ জরিমানার কবলে পড়েছেন। এছাড়া বাফুফের প্রকিউরমেন্ট ও স্টোর অফিসার ইমরুল হাসান শরীফকে ফিফা প্রদত্ত কমপ্লায়েন্স ট্রেনিং নিতে বলা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে তার আচরণের ব্যাপারে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। পৃথক শুনানি ও প্রতিটি কার্যধারা গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিফার অ্যাডজুডিক্যাটরি চেম্বার।

কী আছে ফিফার রিপোর্টে, এসেছে কাজী সালাউদ্দিনের নামও

প্রত্যেকের জন্য পৃথক পৃথক ফাইলও প্রকাশ করেছে ফিফা। সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মূর্শেদীর ৫২ পাতার ফিফা রিপোর্টে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের নামও ওঠে এসেছে। ৫ নম্বর পাতায় ২৬ নম্বর পয়েন্টে ফিফার ইনভেস্টগরী চেম্বার বাফুফের তুলনামূলক কোটেশন বিশ্লেষণ করে দেখেছে ভেন্ডর নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাফুফের চার জন সব সময় জড়িত ছিল। এই চারজন হলেন বাফুফের সাবেক প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মূর্শেদী ও বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।

জানা যায়, বাফুফে ক্রয় নীতি অনুযায়ী কোনো দ্রব্য/সেবা ১ লাখ টাকার অধিকমূল্য হলে সেই দ্রব্য/সেবা কিনতে তিনটি কোটেশন প্রয়োজন। ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাফুফে এই কোটেশন প্রক্রিয়ায় ক্রয় করতে পারবে। কোটেশনের মাধ্যমে ভেন্ডার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সোহাগ, আবু হোসেন, সালাম মূর্শেদীর সঙ্গে সালাউদ্দিনের নামও যুক্ত হয়েছে ফিফা রিপোর্টে। দশ লাখ টাকার উর্ধ্বে কোনো কিছু ক্রয়/সেবার ক্ষেত্রে টেন্ডার আহবান করে ফেডারেশন।

ফিফা সালাম মূর্শেদীর প্রতিবেদনে বাফুফের চেক এবং বেশ কিছু ডকুমেন্টসও প্রকাশ করেছে। সেখানে একটি ডকুমেন্টে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের স্বাক্ষরও দেখা গেছে। গত বছর সোহাগ নিষিদ্ধের ঘটনায় বাফুফে সভাপতির নাম আসেনি। এবার পাঁচটি পৃথক ফাইলের মধ্যে সালাম মূর্শেদীর ওপর ফিফা প্রতিবেদনে বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিনের প্রসঙ্গ ওঠে এসেছে।

জানা যায়, প্রকাশিত পাঁচটি ফাইলেই ফিফা বাফুফের ক্রয় চাহিদা প্রক্রিয়া থেকে একেবারে পেমেন্ট চেক ইস্যু পর্যন্ত ধাপে ধাপে ছক আকারে প্রকাশ করেছে। ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন জড়িত না থাকলেও পেমেন্ট প্রদানে তার অনুমোদন আবশ্যক। বিশেষ করে কোনো দ্রব্য/জিনিস বাংলাদেশি টাকায় দশ লাখ টাকার বেশি হলে সেটার অনুমোদনের এখতিয়ার কেবল সভাপতিরই। দশ লাখের নিচে প্রধান অর্থ কর্মকর্তা, সাধারণ সম্পাদক ও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান অনুমোদন করতে পারেন। বাফুফের চেকে স্বাক্ষর করার এখতিয়ার রয়েছে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদী ও সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ। এই তিন জনের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সালাম মূর্শেদী ও কাজী নাবিল আহমেদের স্বাক্ষরই বেশি। এই দুই জনের এক জন অনুপস্থিত থাকলে সালাউদ্দিন ক্ষেত্র বিশেষে চেকে স্বাক্ষর করেন।

কালের আলো/এমকে/আরআই