দরিদ্র কোটাতেও শিক্ষার্থী পাচ্ছে না বেসরকারি মেডিকেল
প্রকাশিতঃ 5:45 pm | May 26, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অটোমেশন নীতির কারণে দরিদ্র ও মেধাবী কোটাতেও শিক্ষার্থী পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)। চলতি শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এক হাজার ২০০ সিট ফাঁকা বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
শনিবার (২৫ মে) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বেসরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং ভর্তি প্রক্রিয়ায় চলমান শিক্ষার্থী সংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, বিশাল জনগোষ্ঠীর এই দেশে সরকারের একার পক্ষে সবার চিকিৎসা-শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চিকিৎসা শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি মেডিকেল চালু হাওয়ার পর সব সময় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ভর্তিতে পছন্দমতো কলেজে মেধার ভিত্তিতে সুযোগ পেয়ে আসছিলেন। পূর্বের ভর্তির নিয়ম অনুযায়ী সারাদেশে একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। গত বছর বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির বিষয়ে বিস্ময়কর পরিবর্তন আনা হয়। স্বাস্থ্য শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণের নামে সংশ্লিষ্টদের তীব্র বিরোধিতার মধ্যে গত বছর অটোমেশন চালু করা হয়। এই পদ্ধতি চলতি বছর অব্যাহত রাখা হয়েছে।
অটোমেশনের সমস্যা তুলে ধরে মেডিকেল মালিকরা বলেন, এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এক হাজার ২০০ সিট খালি রয়েছে। এমনকি মেডিকেল কলেজগুলোর অর্ধেকেরও বেশি আসনই ফাঁকা থেকে যাচ্ছে। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটি হুমকির মুখে। অটোমেশন পদ্ধতির কারণে দেশের সকল বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীসহ কলেজ কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
বিপিএমসিএ সভাপতি এম এ মুবিন খান বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ সেক্টর ধ্বংস করার নীলনকশা করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে-প্রতিষ্ঠান গড়া কঠিন, ধ্বংস করা সহজ। প্রাইভেট সেক্টরে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা নিজের চয়েজমতো ভর্তি হবেন। কিন্তু অটোমেশনের কারণে তারা তা পারছেন না। এতে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সবাই হতাশ। হাত-পা বেঁধে পানিতে সাঁতার কাটতে দেওয়ার মতো অবস্থায় অটোমেশন। যার জন্য এই পেশায় আসতে শিক্ষার্থীরা নিরুত্সাহিত হচ্ছেন। অটোমেশনের নামে এই সেক্টরকে ধ্বংস করার অপপ্রয়াস চলছে।
দেশের মেডিকেলগুলোতে প্রতিবছর অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী থাকলেও চলতি বছর তাতে ধস নেমেছে বলে জানান তিনি।
সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ হাবিবুল হক বলেন, অটোমেশন পদ্ধতিটি অন্য দেশ থেকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটি নিজেদের ক্ষেত্রে প্রয়োগের বিষয়ে অন্য দেশের পরিস্থিতি আর আমাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করা হয়নি। অন্য দেশে এক আসনের বিপরীতে ১০ জন পরীক্ষা দেয়। সেখানে অটোমেশন প্রয়োজন। আমাদের দেশে তো সে রকম না। এখানে কয়েকটা সিটের বিপরীতে একজন আগ্রহী।
তিনি আরও বলেন, ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে যেখানে আবেদনের সংখ্যা ছিল ১৫ জন, সাক্ষাৎকারের জন্য অনুপস্থিত ছিল এক জন। এবং কোনো শূন্য আসন ছিল না। ২০২৩ থেকে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ৪ জনের আসন খালি পাওয়া যায়। একইভাবে কিশোরগঞ্জের একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের ডাটা অনুযায়ী ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে আবেদনে আহ্বানের সংখ্যা ১৪ জনের হলেও, সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করে মাত্র এক জন। অথচ এটি দেশের সনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান। ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে অস্বচ্ছল কোটায় ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী বিগত বছরে ২ জন থাকলেও চলতি বছরে এর সংখ্যা শূন্যের কোঠায়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি মেডিকেল সেক্টর মান নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা মানে না। টাকার বিনিময়ে ভর্তি করা হয়। এ কারণে মান নিয়ন্ত্রণ ও সত্যিকার অর্থে যারা মেধাবী, তাঁদের পড়ার সুযোগ করে দিতে অটোমেশন চালু করেছি।
কালের আলো/এমএএইচ/ইউএইচ