শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর নিরলস সহায়তায় কৃতজ্ঞতা সেনাপ্রধানের
প্রকাশিতঃ 10:31 pm | May 29, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দেশের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা সুনামের সঙ্গে দীর্ঘ পথচলা ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছে বাংলাদেশ। শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে স্থাপন করেছে শান্তি ও সম্প্রীতির এক অনন্য নজির। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং নিরলস সহায়তায় অর্জিত হয়েছে বলে মনে করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদও জানান।
বুধবার (২৯ মে) আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৪’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ শান্তিরক্ষী হিসেবে নিজের বক্তব্যে এমনটিই উচ্চারণ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানকে মহিমান্বিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও আপনি আমাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানকে মহিমান্বিত করেছেন। এজন্য সকলের পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। এ বিরল সুযোগ আমাকে প্রদান করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জানাচ্ছি আমার গভীর কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।’
বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে একটি স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য নাম
আজ বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে একটি স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য নাম বলে জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘যা আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত সম্মান ও গৌরবের। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি আমাদের এই উন্নয়ন ও অর্জন কোনদিনই সম্ভব হতো না, যদি না বাংলাদেশ স্বাধীন হতো। তাই আজকের এই বিশেষ দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আমাদের স্বাধীনতার মূল রূপকার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।’
‘যার আজীবনের সংগ্রাম এবং অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন দেশ, একটি মানচিত্র ও একটি গর্বিত পরিচয় পেয়েছি। এখন সেই পরিচয়ের পদচিহ্ন আমরা ছড়িয়ে দিচ্ছি বিশ্বময় শান্তির পতাকা হাতে। আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি ৩০ লক্ষ শহীদসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। আমি বিশেষ শ্রদ্ধা জানাতে চাই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সকল শহীদদের প্রতি। আমি তাদের সকলের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি তাদের পরিবারের প্রতি রইলো গভীর সমবেদনা’- যোগ করেন সেনাপ্রধান।
বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের অর্জনের নেপথ্যে
বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ শান্তিরক্ষী জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের নৈতিক অবস্থান ও সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনা, তার প্রণীত সংবিধান আমাদের শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টার চেতনা বিনির্মাণ করছে। সেই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘের আহবানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে। বর্তমানে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪ হাজার ৯৭০ জন, নৌ বাহিনীর ৩৫২ জন, বিমান বাহিনীর ৪০৬ জন এবং পুলিশের ৩৬৪ জনসহ সর্বমোট ৬ হাজার ৯২ জন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১৩টি শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত আছেন। পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি নারীরাও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ থেকে ৩ হাজার ৩৮ জন নারী শান্তিরক্ষী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সফলভাবে অংশগ্রহণ করেছে। এ মুহুর্তে ৪৯৩ জন সদস্য শান্তিরক্ষা কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বশান্তি রক্ষায় আমাদের অর্জন আমাদের কঠোর প্রশিক্ষণ, পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা, মানবাধিকারের প্রতি যত্নশীলতা এবং সর্বোপরি ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার প্রতিফলন। এর পাশাপাশি আমাদের শান্তিরক্ষীদের উন্নত নৈতিক মূল্যবোধ, নিরপেক্ষ মনোভাব, নিরপরাধ জনগণের সুরক্ষা প্রদানে অগ্রণী ভূমিকা পালন ইত্যাদি পার্থক্য তৈরী মানবিক গুণাবলী জাতিসংঘ পরিমণ্ডলে বিশেষভাবে প্রশংসিত। যা আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমির মর্যাদা বিশ্বদরবারে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। এই বিশেষ অর্জনের জন্য আমাদের অনেক ত্যাগও স্বীকার করতে হয়েছে। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে আমাদের সেনাবাহিনীর ১৩১ জন, নৌবাহিনীর ৪ জন, বিমানবাহিনীর ৯ জন এবং পুলিশ বাহিনীর ২৪ জনসহ সর্বমোট ১৬৮ জন সদস্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং ২৬৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
নিরপেক্ষতার প্রমাণ রেখে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত
বিগত বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী সংঘাতের ধরন ও মাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে বলে জানান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের শান্তিরক্ষীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ, সততা, দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার প্রমাণ রেখে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন, সম্প্রতি শান্তিরক্ষা মিশনে প্রথমবারের মত আমাদের সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার কন্টিনজেন্ট ডিআর কঙ্গোতে মোতায়েন হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যবহারের জন্য পেরুর সশস্ত্র বাহিনীকে বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়কারী যান (রিমোটলি অপারেটেড ভেহিকেল) প্রদান করা হয়েছে-যা বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আরো উজ্জ্বল করেছে। আমাদের শান্তিরক্ষীদের এই সার্বিক মানোন্নয়ন এবং ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জনের পেছনে রয়েছে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বশান্তির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন এবং সর্বাত্মক পৃষ্ঠপোষকতা, যা আমাদের সকলের জন্য অপরিসীম অনুপ্রেরণা ও উৎসাহের মূল উৎস।’
কালের আলো/এমএএএমকে