দুই বছরের মধ্যে চালু হতে পারে চট্টগ্রাম মেডিক্যালের বার্ন ইউনিট
প্রকাশিতঃ 8:39 pm | July 06, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
আগামী সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন ইউনিটের নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। শনিবার (৬ জুলাই) সকালে প্রস্তাবিত হাসপাতাল এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
বার্ন ইউনিটের নির্মাণ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প এ বার্ন ইউনিট। আমরা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছি। চীন সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী এই মাসেই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারেন। কারণ, চাইনিজরা কমিটেড যে দেড় বছর থেকে দুই বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ করবে। একই সঙ্গে আমরা জনবল, যন্ত্রপাতি সব নিয়েই একসঙ্গে কাজ করছি। এই বার্ন ইউনিট চালু হলে চট্টগ্রাম এবং আশেপাশের জেলা উপকৃত হবে। সবাইকে ঢাকায় ছুটতে হবে না।’
পরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী চটগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ইউরোলজি, পেডিয়াট্রিক, শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওই বিভাগে ভর্তি শিশু এবং তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেন। কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গেও তিনি চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত কথা বলেছেন।
পরিদর্শন শেষে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কর্তব্যরত ডাক্তারদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রোগী যাতে যথাযথ চিকিৎসা পায় সেটি দেখা যেমন আমার দায়িত্ব, তেমনি ডাক্তাররাও যাতে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে সুরক্ষা পায়, সেটি দেখাও আমার দায়িত্ব। রোগী ও ডাক্তার উভয়কেই সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্বটা আমার।’
চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিতদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যদি আমাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করেন তাহলে হাসপাতালের সব সমস্যার সমাধান করার জন্য প্রয়োজনীয় চেষ্টা আমার থাকবে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমআরআই, সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট– এটি শুনতেও আমার কাছে খারাপ লাগে। ঢাকার পর চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এগুলো জরুরি ভিত্তিতে ঠিক করার জন্য প্রয়োজনীয় যা যা করা দরকার আমি করবো।’
তিনি বলেন, ‘দেশে উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা থাকার পরেও মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশ চলে যায়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশেই চিকিৎসা করেন। সংসদ সদস্যরা যার যার স্থানীয় হাসপাতালে গিয়ে যদি চেকআপ করান তাহলে হাসপাতালে চিকিৎসার মান উন্নত হবে। দেশের চিকিৎসার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। ফলে মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবে না।’
এর আগে শুক্রবার রাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে অবস্থিত বেসরকারি মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। শনিবার ওই পরিদর্শন প্রসঙ্গে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি গতকাল চট্টগ্রামে একটা হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে আমার মন খারাপ হয়ে গেছে। একটি হাসপাতালে যদি ইমার্জেন্সি ডাক্তার না থাকে, অক্সিজেন সিলিন্ডার খালি থাকে, তাহলে তারা রোগীকে কী সেবা দেবে? প্রাইভেট ক্লিনিক অবশ্যই চলবে, আমি তার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু তাদের সব নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। সাংবাদিক ভাইদের বলবো, আমি হাসপাতালে অভিযান চালাই না, পরিদর্শন করি। প্রতিটি রোগী যাতে সুচিকিৎসা পায় সেটি দেখার দায়িত্ব আমার। ডাক্তাররা কীভাবে কাজ করছেন, তারা সুরক্ষিত আছেন কিনা সেটি দেখার জন্য আমি পরিদর্শনে যাই। দেশের চিকিৎসার মান উন্নত করতে আপনারা আমাকে সহযোগিতা করুন। তাহলে আমি আশা করি, দেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবে না, বিদেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য দেশে আসবে।’
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে গাইনি চিকিৎসকরা ঢাকায় চলে যেতে চায় উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্তলাল সেন আরও বলেন, ‘সবাই যদি ঢাকায় যেতে চায় তাহলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ চলবে কেমন করে? এ ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটা অনুশাসন দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, “যার যেখানে পোস্টিং তার সেখানেই চাকরি করতে হবে। কেউ যদি যেতে না চায় বা আসতে না চায়, তাহলে তাকে বলবে চাকরি ছেড়ে দিতে। যাকে যেখানে পোস্টিং দেওয়া হবে, সেখানে তাকে যেতেই হবে।” ’
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোর পোস্টিং নিয়ে কাজ করছেন জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটি অনেক সময়সাপেক্ষ কাজ। আমি মাত্র ছয় মাস হলো দায়িত্বে আছি। আপনারা ইতোমধ্যে জানেন, আমি ঠিক করেছি ঢাকায় দুই দিনের বেশি থাকবো না। সারা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা আমি নিজে গিয়ে দেখবো।’
কালের আলো/এমএএইচ/ইউএইচ