গ্রেফতার বাণিজ্যের প্রমাণ মিললে পুলিশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা : বিপ্লব কুমার

প্রকাশিতঃ 5:01 pm | July 30, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম-কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার বলেছেন, কোনও পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্যের প্রমাণ পাওয়া গেলে শুধু প্রত্যাহার নয়, সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি সদর দফতরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

থানায় থানায় গ্রেফতার বাণিজ্য চলছে প্রশ্নের জবাবে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘গ্রেফতার বাণিজ্য অনেক পুরনো একটি শব্দ। ডিএমপি কমিশনার যেদিন থেকে ব্লক রেইডের নির্দেশ দিয়েছেন, সেদিন থেকেই গ্রেফতার বাণিজ্য শব্দের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। যদি এ ধরনের কোনও অভিযোগ আসে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে দায়ী পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে নিরস্ত্র মানুষকে পুলিশ গুলি করছে, এই বিষয়গুলো নিয়ে পুলিশ বিব্রত কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির এই যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘প্রত্যেকটি ঘটনার পূর্বাপর বিচার করতে হবে। আমাদের সদস্য যদি গুলি করে থাকে, কোনও প্রেক্ষাপটে গুলি করেছে, সেগুলো পর্যালোচনা করা হবে। যেসব ঘটনায় মামলা হয়েছে প্রত্যেকটি মামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করা হবে।

তিনি বলেন, ‘যখন একটি মামলা হয়, তখন কে কোন দলের, কে কোন মতের, কে পক্ষ বা বিপক্ষের এগুলো আমাদের কাছে বিচার্য বিষয় নয়। সাধারণ মানুষ যখন একটি এজাহার দায়ের করেন, তখন পুলিশের হস্তক্ষেপের কোনও সুযোগ নেই। কোনও দল-মত কিংবা পক্ষ-বিপক্ষের সুযোগ নেই এখানে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং যে দোষী হবে, তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অভিযোগ আছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে– এমন প্রশ্নের জবাবে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘ব্লক রেইড পরিচালনার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ, সাধারণ শিক্ষার্থী এবং নিরপরাধ কাউকে ধরার সুযোগ নেই। ডিএমপি কমিশনারের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এ কারণে ব্লক রেইডে ডিএমপির সিনিয়র অফিসারদের মোতায়েন করা হয়েছে। যেন ব্লক রেইডে কোনও ধরনের আইনের ব্যত্যয় না ঘটে, নিরপরাধ মানুষ যেন বিন্দুমাত্র পুলিশের দ্বারা হয়রানির শিকার না হয়। এরপরও যদি কোনও ব্যত্যয় হয়, আমরা সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তবে অপরাধী যে তাকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।’

সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের বিরোধ নেই জানিয়ে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থী আমাদের সন্তান সমতুল্য। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিষয়ে পুলিশ সংবেদনশীল। পুলিশের টার্গেট যারা নাশকতাকারী, যারা মেট্রোরেল, সেতু ভবন, টোল প্লাজা ও বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি পুড়িয়েছে। আমাদের শত্রু জামায়াত-শিবির চক্র এবং বিএনপির সন্ত্রাসীরা। তাদের ধরার জন্য ভিডিও ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দেখে কাজ করছি।’

ডিএমপির এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘গত কয়েক দিনে ঢাকা শহরে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও প্রাণহানির ঘটনায় ডিএমপির ৫০টি থানায় ২৬৪টি মামলা হয়েছে। আরও চার-পাঁচটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। এসব মামলায় ২ হাজার ৮৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিমান্ডে আনা হয়েছে অসংখ্য আসামিকে। রিমান্ডে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে যে তথ্য পেয়েছি, সেসব তথ্য আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি।’

২৬৪ মামলার ভেতরে নিহতের ঘটনায় কোনও মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় বিভিন্ন থানায় ৫৩টি হত্যা মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নিহতের পরিবার বাদী হয়েছে এবং কিছু মামলার রাষ্ট্রের পক্ষে পুলিশ বাদী হয়েছে।’

বিপ্লব কুমার সরকার আরও বলেন, ‘এসব মামলা শতভাগ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করা হবে। পুলিশ এখানে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে তদন্ত করবে। সেই মামলাগুলো ডিএমপি কমিশনার নিজে তদন্ত-তদারকি করবেন। সিনিয়র অফিসারদের এসব মামলা মনিটরিংয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেকোনও হত্যাকাণ্ড অবশ্যই দুঃখজনক। পুলিশ কোনও মৃত্যু প্রত্যাশা করে না।’

রাজধানীতে কিছু এলাকায় ব্লক রেইড, কিছু এলাকায় টার্গেট অভিযান চলছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

কালের আলো/ডিএস/এমএম