ড. ইউনূসের সফলতা নিয়ে আশাবাদী সেনাপ্রধান, বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ
প্রকাশিতঃ 6:54 pm | August 07, 2024
কালের আলো রিপোর্ট:
ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের পর জনরোষে শেখ হাসিনার পতনের পর অবশেষে গঠিত হতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) তিনি শপথ নিতে যাচ্ছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে তিনি অত্যন্ত সফলভাবে তাঁর কাজ সমাধান করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
বুধবার (৭ আগস্ট) বিকেলে সেনা সদর দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ড.ইউনূসের হাত ধরে দেশ সুন্দর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাবে বলেও মনে করেন সেনাপ্রধান। দেশের চলমান সঙ্কটকালে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন তিনি। এর আগে রক্তসমুদ্রে গোটা দেশ ভাসার পর গত সোমবার (০৫ আগস্ট) স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতন ঘটে। সেদিনই বিকেলে দেশের রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে ঘোষণা দেন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার কথা। আশ্বাস দেন নিজেদের সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা। বুধবার (৭ আগস্ট) বিকেলে সেনা সদর দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়েও তিনি একই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি দেশবাসীকে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী জনগণের সঙ্গে আছে এবং থাকবে বলেও জানান সেনাপ্রধান। এ সময় নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ বৃহস্পতিবার
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, আগামীকাল (অন্তবর্তীকালীন সরকার) শপথের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। একটা প্রস্তাব ছিল বিকেলে করার। বিকেলে খুব টাইট হয়ে যেতে পারে। উনি (অন্তবর্তী সরকারের প্রস্তাবিত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস) ২টা ১০ এর দিকে এখানে (ঢাকায়) আসবেন। তাকে আমরা রিসিভ করার জন্য বিমানবন্দরে যাবো। তিনি আমাদের কাজকে স্বাগত জানিয়েছেন। আমরা সবাই মিলে তাকে সাহায্য করবো।
তিনি বলেন, শপথ অনুষ্ঠান আমরা হয়তো তাহলে রাতের বেলা, রাত ৮টার দিকে করতে পারি। অন্তর্বর্তী সরকারের আকার কেমন হতে পারে— এমন এক প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব পালনের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ জন শপথ নিতে পারেন। তবে এই সংখ্যা দুয়েকজন বাড়তে বা কমতে পারে। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে ৪০০ জনের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে বলেও জানান সেনাপ্রধান।
যারা লুটতরাজ বা অপরাধ করছেন তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। আগামী তিন চারদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তিনি বলেন, এই সময়ে যারা লুটতরাজ বা অপরাধ করছেন তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে। সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও লুটতরাজ বন্ধে ছাত্ররা ভালো কাজ করছে। তাদের এই কাজকে আমরা স্বাগত জানাই। তারা যেন এই ভালো কাজগুলো চালিয়ে যায়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারা দেশে সেনাবাহিনীর প্যাট্রোলিং চলছে। তারপরও যে লুটতরাজ ও খুনোখুনি হয়েছে সেজন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। বলেন, রাজনৈতিক নেতারা কথা দিয়েছিলেন এগুলো হবে না। তারপরও যদি কোনও ব্যর্থতা থাকে সেটা আমার।
পুলিশের শূন্যতা প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান
খুব শিগগিরই পুলিশ তাদের দায়িত্বপালন শুরু করবে আশা প্রকাশ করে সেনাপ্রধান বলেন, পুলিশ পুনর্গঠনের কাজ চলছে। একজন পুলিশপ্রধান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি নিশ্চিত যে পুলিশের মনোবল আবার ফেরত আসবে, পেশাদার বাহিনী হিসেবে পুলিশ ভালোভাবে আবার তাদের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবে।
পুলিশের শূন্যতা প্রসঙ্গে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, পুলিশ কিন্তু ডিউটিতে নেই। পুলিশের মতো একটা ফোর্সের অনুপস্থিতিতে যে শূন্যতা (ভয়েড) সৃষ্টি হয়েছে এই শূন্যতা সেনাবাহিনীর সক্ষমতা দিয়ে পূরণ করা সম্ভব না। তারপরও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনী সর্বদা জনগণের সঙ্গে আছে এবং থাকবে। আমরা সবার সঙ্গে মিলে কাজ করে যাবো। সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারবো বলে আমি বিশ্বাস রাখি।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উপরে যে চাপ যাচ্ছিলো তা নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীও সহায়তা করেছে। আমরা অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছি এর পরেও যা হয়েছে তার বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি ছিল না। আমি নিশ্চিত যে যখন পুলিশ পুনর্গঠন হয়ে যাবে তখন পরিস্থিতি আবারো স্বাভাবিক হবে। পুলিশ একটি বিরাট বাহিনী, যদি এটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় তাহলে তা সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়’ বলেন ওয়াকার-উজ-জামান।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ছাত্রদের কাজের প্রশংসা
রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন স্থানের ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার এবং রাস্তাঘাটে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ছাত্ররা যে ভূমিকা রাখছে তা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ছাত্ররা আমাদের সাহায্য করছে। গ্রামগঞ্জে ছাত্ররা কাজ করছে। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। তিনি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ছাত্রদের কাজের প্রশংসা করেন। তিনি ছাত্রদের তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সব ইতিবাচক কাজ অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান।
কালের আলো/এমএএএমকে