সবার সহযোগিতায় দেশকে সুশৃঙ্খল ও শান্তির পথে নিয়ে যেতে চান সেনাপ্রধান

প্রকাশিতঃ 8:00 pm | August 12, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় দেশজুড়ে সংগঠিত হচ্ছে পুলিশ। থানায় থানায় জোরদার হচ্ছে পুলিশের কার্যক্রম। স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও। পুরো কার্যক্রম নিজ চোখে দেখতে সেনাবাহিনীর ডিভিশন এরিয়াগুলো পরিদর্শন শুরু করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সোমবার (১২ আগস্ট) ৫৫ পদাতিক ডিভিশনে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলেন সেনাপ্রধান। তাঁর হিসাবে দেশের ৯০ শতাংশের ওপরে থানা ও রাজধানীর ৮৫ শতাংশ থানায় পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুলিশ সংগঠিত হওয়ার পর সাম্প্রতিক সময়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে জড়িত অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন সেনাবাহিনী কবে কখন সেনানিবাসে ফিরে যাবে সেই কথাও। বলেছেন, ‘পুলিশ ফোর্স যখন আবার সুন্দরভাবে তাদের কাজ শুরু করতে পারবে তখন আমরা সেনানিবাসে ফেরত যাবো।’ দেশকে সুশৃঙ্খল ও শান্তির পথে নিয়ে যেতে দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।

পুলিশ ফোর্সকে বিভিন্ন থানায় কর্মক্ষম করে গড়ে তুলতে প্রটেকশন দিচ্ছি
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, দেশে একটি উদ্ভুত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। অরাজক পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়। ৫ তারিখ বা তাঁর পরবর্তী সময়টা আরও একটু ভিন্ন। সেখানে অনেক ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় লুটপাট হয়েছে। অগ্নিসংযোগ হয়েছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশ ফোর্সের ওপরে আক্রমণ হয়েছে। পুলিশ ফোর্সের সংখ্যা ২ লক্ষ। এই একটা বড়সংখ্যক পুলিশ ফোর্স যখন ইন অ্যাকটিভ (অকার্যকর) ছিল তখন এটাকে কভার করা সেনাবাহিনীর জন্য দুরূহ হয়ে যাচ্ছিল। পরবর্তীতে আমরা সুন্দরভাবে আমাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। পুলিশ ফোর্সকে বিভিন্ন থানায় কর্মক্ষম করে গড়ে তুলতে তাদের প্রটেকশন দিচ্ছি, তারা কার্যক্রম শুরু করেছে।’

প্রধান উপদেষ্টাকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিফ
খুলনা ডিভিশনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও আত্মতুষ্টির কোন কারণ নেই জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমাদের আরও ভালোভাবে কাজ করতে হবে। পুলিশকে আরও সংগঠিত করতে হবে তাহলে আমরা নিশ্চিত স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত যেতে পারবো। এজন্য আমরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ডিভিশনগুলো ডেপ্লয় আছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। ইনশাআল্লাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পুলিশ ফোর্স যখন আবার সুন্দরভাবে তাদের কাজ শুরু করতে পারবে তখন আমরা সেনানিবাসে ফেরত যাবো। আজকে সকালেও প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার কাছ থেকে ব্রিফ নিয়েছেন। দেশের ৯০ শতাংশের ওপরে থানা ও রাজধানীর ৮৫ শতাংশ থানা তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। এ পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে।’

দেশের ২০ জেলায় ৩০টি মাইনরিটি রিলেটেড অপরাধ
মাইনরিটি রিলেটেড (সংখ্যালঘু সংক্রান্ত) অপরাধ বিষয়ে নিজের স্টাডির কথা তুলে ধরেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, ‘আমি স্টাডি করে দেখেছি দেশে ২০টি জেলায় ৩০টি মাইনরিটি রিলেটেড (সংখ্যালঘু সংক্রান্ত) অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ লুটপাট ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি। আমি আশা করি এই বিষয়গুলো নরমাল হয়ে যাবে। আমি সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ করবো তারা যেন শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তারা যেন কোন ধ্বংসাত্মক কাজ না করে। তাঁরা বুঝবেন জনগণের দাবি কী? যদি জনগণ অরক্ষিত থাকে, যদি অশান্তি বিরাজ করে আমি নিশ্চিত তারা সেই রাজনীতি করবেন না, সেটি জনগণের রাজনীতি হবে না। আমি নিশ্চিত সবাই আমাদের সাহায্য করলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবশ্যই স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হবো। সেই উদ্দেশ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আসুন আমরা দেশকে সুশৃঙ্খল ও শান্তির পথে নিয়ে যাই।’

রাজনীতি থাকবে, রাজনীতি থাকতেই হবে
রাজধানী ঢাকায় ডাকাতির সুলুক সন্ধান করে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘ডাকাতি হচ্ছে এর ৮০ পার্সেন্ট প্যানিক, ২০ পার্সেন্ট ফ্যাক্ট। মানুষের মধ্যে হানাহানি কমে আসছে। কমে আসলে এগুলো থাকবে না। অতীতেও রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়েছে, এটি কাম্য না। রাজনীতি থাকবে। রাজনীতি থাকতেই হবে, মিটিং মিছিল হবে। কিন্তু ধ্বংসাত্মক কোন কার্যকলাপ আমরা চাই না। এটি কখনো দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক না। পুলিশকে আমরা সংগঠিত করে ফেলেছি। যারা যতো অপকর্ম করেছে তার জন্য অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এটি অবশ্যই দু:খজনক। পুলিশ সংগঠিত হলে তদন্ত করবে, তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, বিজিবি ও র‍্যাবও তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। আপনারা আমাদের সাহায্য করেন। সবাই মিলে দেশকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যাবো। প্রেসক্লাব বা জনগণের টাকায় নির্মিত স্থাপনা পুড়িয়ে দিলে, ধ্বংস করে দিলে জনগণের ক্ষতি। সবাইকে এটি বুঝতে হবে।

এ সময় সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও যশোরের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাহবুবুর রশীদ, খুলনা নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল গোলাম সাদেক, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার, কেএমপি কমিশনারসহ উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সেনাপ্রধান গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার গোপীনাথপুরে বিক্ষোভকারীদের হামলায় আহত অফিসার, জেসিও এবং অন্যান্য পদবির সেনাসদস্যদের দেখতে যশোর সিএমএইচ এ গমন করেন। এরপর তিনি খুলনায় অবস্থিত সেনাবাহিনী ক্যাম্পে মোতায়েনরত সেনাসদস্যদের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি সকল পদবির সেনাসদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

কালের আলো/এমএএএমকে