বহির্বিশ্বের কোনো চাপ নেই, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা জানালেন সেনাপ্রধান

প্রকাশিতঃ 9:43 pm | August 13, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ডিভিশন এলাকা পরিদর্শনে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ডিভিশন এলাকাগুলো ঘুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ছুটে গেছেন রাজশাহীতে। এদিন বিকেলে রাজশাহী সেনানিবাসে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেছেন দেশের চলমান পরিস্থিতির। বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বহির্বিশ্বের কোনো চাপ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণভাবেই নিয়ন্ত্রণে থাকার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন।

এ প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেছেন, ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। পুলিশ স্বাভাবিক কাজকর্ম যখন শুরু করবে, তখন পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও আনসারসহ সবার সঙ্গেই কথা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। আমি বলবো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণভাবেই আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা
দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বহির্বিশ্বের কোনো চাপ নেই জানিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘কোনো চাপ নেই। তারা বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখছে। এটা বিশেষ একটা পরিস্থিতি। সবাই বুঝে। মাইনরিটি (সংখ্যালঘু) বিষয় নিয়ে কিছু কিছু কথাবার্তা হয়েছে। ২০টি জেলায় ৩২টির মতো জায়গায় মাইনরিটি নিয়ে একটা অরাজকতা হয়েছে, সেটা অবশ্যই একটাও কাম্য নয়। আমরা এই বিষয় দেখছি। যাঁরা অপরাধী, তাঁদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনব। রাষ্ট্র সংস্কার শেষে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে সেনাবাহিনী।’

সবকিছু সুন্দরভাবে চললে দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘সংখ্যালঘু যে ইস্যুটা আছে, আমরা ঘেঁটে দেখলাম যেভাবে বলা হচ্ছে একেবারেই ওরকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় ওরকম কিছু ঘটেনি। এটা অত্যন্ত ভালো দিক। এই যে একটা সুন্দর পরিবেশ সারা দেশে তৈরি হয়েছে, সেটা বজায় রাখতে হবে। আমরা সবাই মিলে কাজ করবো, দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাবো। আমরা সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে যেতে চাই। এভাবে সবকিছু সুন্দরভাবে চললে দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।’

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের সেনা হেফাজতে নেওয়ার প্রসঙ্গে
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের সেনা হেফাজতে নেওয়ার বিষয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘অবশ্যই আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তাদের প্রতি যদি কোনও অভিযোগ থাকে, মামলা হয়, তাহলে তারা শাস্তির আওতায় আসবেন। কিন্তু অবশ্যই আমরা চাইবো না, বিচারবহির্ভূত কোনও হামলা তাদের ওপরে হোক। তাদের জীবনের যে হুমকি আছে, সেটার জন্য আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। সে যেই দলেরই হোক।’

পুলিশ কিছুটা ট্রমার মধ্যে আছে
সেনাবাহিনী প্রধান আরও বলেন, ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। পুলিশ স্বাভাবিক কাজকর্ম যখন শুরু করবে, তখন পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও আনসারসহ সবার সঙ্গেই কথা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। আমি বলবো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণভাবেই আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে পুলিশ কিছুটা ট্রমার মধ্যে আছে। ট্রমাটা কাটিয়ে উঠলে তাদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতে পারবে। ইতোমধ্যে পুলিশ বিভিন্ন থানায় কাজ শুরু করেছে। আমরা পুলিশকে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি। তারা সম্পূর্ণভাবে যখন কাজকর্ম শুরু করে দেবে, তখন পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তখন আমরা সেনানিবাসে ফেরত যাবো। সেই পর্যন্ত আমরা থাকবো এবং কাজ করে যাবো।’

গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা ও গাড়ি পোড়ানোর বিষয়ে তদন্ত
গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা ও গাড়ি পোড়ানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে সেনাপ্রধান বলেন, ‘সেটা একটা ভুল–বোঝাবুঝি। পরিস্থিতি এখন একেবারেই শান্ত। তাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। তবে তারা যে অপরাধ করেছে, অবশ্যই তার তদন্ত হবে এবং তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।’

আগস্ট ঘিরে এই গণ-অভ্যুত্থানের পর ‘প্রতিবিপ্লব’-এর কথা শোনা যাচ্ছে, এ ব্যাপারে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমার এ বিষয়ে জানা নেই।’

এ সময় সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহম্মদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, ১১ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও বগুড়ার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল খালেদ আল মামুন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনিসুর রহমান, জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদ, পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে