সংবিধান বাতিল ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রপতি করতে হবে: ফরহাদ মজহার

প্রকাশিতঃ 8:30 pm | August 21, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কারের আলো:

গণ আন্দোলনে পতনের পর শেখ হাসিনা সরকারের সংবিধান চালু আছে, সেটি বাদ দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও তাত্ত্বিক ফরহাদ মজহার। বলেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে পদত্যাগ করিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জনগণের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিতে হবে।

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে প্রতিবাদী নাগরিক সমাজ আয়োজিত গণঅভ্যূত্থান ও আমাদের করনীয় শীর্ষক এক সেমিনারে মূল আলোচকের বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এই সংবিধান বাতিল করতে হবে। কেননা এটি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের সংবিধান। তাই এ সংবিধান মেনে নেওয়া যায় না। নতুন সংবিধানের আলোকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিতে হবে।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে জনগণের দ্বারা ‘নির্বাচিত’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করিয়ে ড. ইউনূসকে জনগণের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সংবিধানে আমাদের অলিখিত মনোভাবনাগুলো স্থান দিতে হবে।’

বক্তব্যে দ্রুত নির্বাচন চাওয়ায় বিএনপির সমালোচনা করেন ফরহাদ মজহার। বলেন, বিএনপি সমাবেশ করে ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। এটি কেন করল? আগে দেশের সংস্কার করতে হবে তারপর নির্বাচন হবে।’

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিএনপির আরেকটি ভুল ধারণা। এই চিন্তা থেকে বের হতে হবে। গণতন্ত্র চালু থাকলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দরকার নেই। তারেক রহমান আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। তিনি যদি আমার বক্তব্য বুঝতে না পারেন আমি লন্ডনে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলবো।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করার পাশাপাশি লিখিত বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণ ছাত্রসমাজ এই বিপ্লবের, এই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। ছাত্র-জনতার বহু ত্যাগ তিতিক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশে সূচনা হয়েছে নবযুগের। বীরের এই রক্তস্রোত, মাতার এই অশ্রুধারা যায়নি বৃথা, যাবে না বৃথা।’

এসময় তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কয়েকটি আশু দায়িত্ব নির্ধারণ করতে হবে জানিয়ে তাও উল্লেখ করেন। এরমধ্যে রয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা; জুলাই-আগষ্টে সংগঠিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার করা; সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া হত্যা, লুটপাটসহ সকল ধরনের অপরাধের তদন্ত ও বিচার করা; সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি বজায় রাখা; কর্মকর্তাদের ক্ষমতাচ্যুত বা পুরস্কৃত করার ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার পরিচয় দেওয়া, সবক্ষেত্রে দুর্নীতির মূল উৎপাটন করা; গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়াকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা এবং শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি একটি সর্বজনীন গণমুখী শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা।

অপর বক্তা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে সারা বিশ্বে শেখ হাসিনাকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তাকে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমীন গাজী দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সম্পর্কে বলেন, ‘বাংলাদেশের চেয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিশ্বের কোথাও নেই। এখানে জামায়াত-শিবির মন্দির পাহারা দিয়েছে। এর চেয়ে সম্প্রীতি আর কি হতে পারে?’

চাঁদাবাজ ও দখলদার মুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো ভাবেই চাঁদাবাজ ও দখলদারদের স্থান হবে না। আমরা সবাই এদের প্রতিহত করবো।’

সিনিয়র সাংবাদিক এম এ আজিজ বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা উপযোগী নয়। এজন্য শিক্ষায় আমূল পরিবর্তন করতে হবে। পুলিশ থেকে শুরু করে প্রশাসনের সব পর্যায়েও সংস্কার করতে হবে।’

কালের আলো/ডিএইচ/কেএ