বন্যাপীড়িত এলাকায় সাহসিকতা ও দায়িত্ববোধের মেলবন্ধন বিমান বাহিনীর
প্রকাশিতঃ 11:37 pm | August 24, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
বন্যা কবলিত ফেনী জেলার লালপুর। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, অনিদ্রা আর অস্থিরতায় গর্ভবতী নারী রেহানা আক্তার। মানবিক বিপন্নতায় অনাগত সন্তানের জীবন ঝুঁকি। বিমান বাহিনীর কর্ণকুহরে এ খবর পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই শুরু নিরাপদে উদ্ধার তৎপরতা। বাহিনীটির এডব্লিউ-১৩৯ হেলিকপ্টারে করে তাকে সেখান থেকে নিরাপদে বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারের এয়ার মুভমেন্টে স্থানান্তর করা হয়। এরপর দ্রুত তাকে বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্সে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে তার চিকিৎসার সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর মানবিক উদ্যোগের এ চিত্রটি শনিবারের (২৪ আগস্ট)।
দেশের জন্য সাহসিকতা, মানবিকতা ও দায়িত্ববোধের মেলবন্ধনের উদাহরণ তৈরি করা শুধুমাত্র এ ঘটনাই নয়; একই দিনে একই জেলার পশুরামপুর মডেল স্কুল মাঠ থেকে বিমান বাহিনীর এমআই-১৭এসএইচ হেলিকপ্টারের মাধ্যমে পাঁচজনকে উদ্ধার করে ঢাকা সেনানিবাসস্থ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারের এয়ার মুভমেন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে। নিরাপদ স্থানে তাদের পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সফলতার সঙ্গেই। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ছিলেন- তারিকুল ইসলাম, অজিত কর্মকার, অভিজিত কর্মকার, শারমিন এবং সাইদুর রহমান।
দুর্যোগেই যেহেতু মানবিকতার বড় পরীক্ষা ফলশ্রুতিতে বেদনা মথিত হৃদয়ে বিভিন্ন প্রান্তে বানভাসী এসব মানুষের পাশে সর্বোচ্চ প্রয়াস নিয়েই দাঁড়িয়ে দেশপ্রেমের পরীক্ষায় বিমান বাহিনী প্রতিনিয়ত উত্তীর্ণ করে চলেছে নিজেদের। আবারও তাঁরা প্রমাণ করেছে দুর্যোগে-দুর্বিপাকে তাঁরা সর্বদা পাশে রয়েছে মানুষের। সর্বগ্রাসী শূন্যতার ভেতরেও এসব ঘটনাপ্রবাহ মানসিক স্বস্তি ও শক্তি জুগিয়েছে বন্যাপীড়িত মানুষকে, বিশেষত গোটা দেশবাসীকে।
জানা যায়, বানভাসীদের রক্ষায় নিজেদের প্রস্তুতির কথা আগেই জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় যখন দিশেহারা দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষ তখন হাত গুটিয়ে বসে নেই বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ শুরু হলেও পৌঁছানো যাচ্ছে না অনেক দুর্গম এলাকায়। মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ। এ অবস্থায় আকাশ থেকে হেলিকপ্টার ড্রপিং এর মাধ্যমে দুর্গম এলাকায় পুরোদমে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। দু:সাধ্য এ কাজটিই করে জনমনে কুড়িয়েছে প্রশংসাও। ভাগ্য বিপর্যস্ত মানুষের সেবায় তাদের নানাবিধ তৎপরতা দেশবাসীকে দেখিয়েছে আশার আলো।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, এসব অভিযান কেবলমাত্র বিমান বাহিনীর দক্ষতা এবং সাহসিকতার পরিচায়ক নয়, বরং এটি প্রমাণ করে যে তারা জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় সবসময় প্রস্তুত এবং মানুষের জীবনের সুরক্ষায় নিজেদের নিঃস্বার্থভাবে উৎসর্গ করতে সক্ষম। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এই সাহসী ও মানবিক উদ্যোগ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রশংসিত হচ্ছে। এমন উদ্ধার অভিযানের মাধ্যমে বিমান বাহিনী আবারও তাদের সক্ষমতা এবং প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছে, যা ভবিষ্যতে জাতির সেবায় তাদের অগ্রণী ভূমিকার প্রতিফলন ঘটিয়েছে বলে মনে করছে আইএসপিআর।
কালের আলো/এমএএএমকে