তরুণ বীর ছাত্রদের সুচিকিৎসায় আন্তরিক সেনাবাহিনী, অনুসরণীয় ভূমিকায় ‘টিম সিএমএইচ’

প্রকাশিতঃ 5:27 am | September 01, 2024

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর:

কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরাসরি আন্দোলনে ছিলেন তাঁরা। লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বিজয়গাথা দেখিয়েছেন। আন্দোলনের তীব্রতার মাধ্যমে স্বৈরাচারের দম্ভ করেছেন চূর্ণ। অর্জিত হয়েছে সর্বোচ্চ বিজয়। অভ্যুদয় ঘটেছে নতুন এক বাংলাদেশের। অবশ্য এজন্য কম আত্মত্যাগও করতে হয়নি। বুলেটে ঝাঁজরা হয়েছে ছাত্র-জনতা; ঝরে গেছে অনেক অমূল্য প্রাণ। কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার স্বাদ পেতে ওদেরও ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের বিছানায়।

ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল বা সিএমএইচ ও দেশের অন্যান্য ১০টি সিএমএইচে ওদের জরুরি ও উন্নত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। কেউ অঙ্গ হারিয়েছেন। কেউ আবার গুরুতর আহত। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে হচ্ছে কাউকে কাউকে। কিন্তু কোন হতাশা বা দুশ্চিন্তা নেই। দীর্ঘ চিকিৎসার খরচও বহন করতে হচ্ছে না নিজেদের বা পরিবারকে। তরুণপ্রাণ শিক্ষার্থীদের সুস্থ করে তোলার পুরো দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

‘আয় দুরন্ত, আয়রে আমার কাঁচা’ বলে কবিগুরু চিরকাল তরুণদের ডাক দিতেন ‘অন্ধকারে বন্ধ করা খাঁচায়’ থেকে বুড়োদের ঘা মেরে জাগিয়ে তুলতে। কারণ রবীন্দ্রনাথ ছিলেন মনেপ্রাণে চিরতরুণ। আর এই তরুণপ্রাণ মানেই অপ্রতিরোধ্য, অমোঘ। তাদের প্রাণ অজেয়। তারা হয়ে থাকেন অপরিমেয় শক্তির অধিকারী। তারা জেগে উঠলে তাদের দমানোর জন্য, পায়ে শিকল পরাবার মতো কোন বাঁধন নেই। ফিনিক্স পাখির মতো দুর্বার শিক্ষার্থীরা যতবার জেগে উঠেছেন, ততবার বাঁকবদল ঘটেছে ইতিহাসের; বাংলাদেশের। প্রবেশ করেছে নতুন অধ্যায়ে। এ মাটির আহত তরুণ বীর সন্তানদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে দেশপ্রেমী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরলসভাবে ও সর্বোচ্চ আন্তরিকতায় কাজ করছে সিএমএইচসমূহে।

জানা যায়, স্বৈরশাসনের নাগপাশ ছিন্ন করে অভ্যুদয় ঘটা এক নতুন দিনের বাংলাদেশ গড়ার পথে নতুন এক যাত্রার স্বপ্নসারথি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহতরা। এসব ছাত্রদের দ্রুত সময়ের মধ্য সুস্থতা নিশ্চিতে ঢাকাসহ ১০টি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার যুগান্তকারী ও মানবিক এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

গত রবিবার (১৮ আগস্ট) রাতেই আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিএমএইচ’র ৫টি মোবাইল নম্বর উল্লেখ করে জরুরি চিকিৎসা সেবা গ্রহণে আগ্রহী আহত ছাত্রদের যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানায়। জানিয়ে দেয় আহত চিকিৎসাধীন ছাত্রদের প্রয়োজনীয় জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তিতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সদা তৎপর রয়েছে। বুধবার (২১ আগস্ট) সেনাপ্রধান ঢাকা সিএমএইচে আহত ছাত্রদের চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থা জানতে সেখানে যান। তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সিএমএইচ কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। তাঁর অপরিসীম দায়িত্ববোধ ও উদার অভিভাবকত্ব ছাত্রদের স্বজনদের মনের আকাশে হতাশার কালো মেঘ সরিয়ে ভরিয়ে দিয়েছে সোনালী রোদের উচ্ছ্বলতায়।

শনিবার (৩১ আগস্ট) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, ঢাকা সিএমএইচসহ দেশের অন্যান্য ১০টি সিএমএইচে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৮২৯ জন আহত ছাত্র চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে ২১৯ জন আহত ছাত্র সিএমএইচসমূহে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাদ বাকীরা চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন। এর আগে গুলিবিদ্ধ দুই ছাত্র মো. রাফি হোসেন (১৪) ও মো. মমিন হোসেন (২৩) এর সফল অস্ত্রোপচার গত রোববার (২৫ আগস্ট) ঢাকা সিএমএইচে সম্পন্ন হয়।

রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে গুরুতর আহত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহকে ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন তাকে দেখতে যান এবং তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক তসলিম অভি সিএমএইচে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালো বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রকৃত অর্থেই দক্ষ ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যবান্ধব সেবা নিশ্চিতের পথিকৃৎ দেশের সিএমএইচসমূহ। চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয়রা মিলে ‘একটি টিম’ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চিকিৎসাধীন আহত ছাত্রদের নিরবিচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করছেন প্রতিনিয়ত। এ যেন শুভ্র, সুন্দর, প্রীতি-উজ্জ্বল নতুন জীবনের জয়ধ্বনি। চিকিৎসাধীনদের বুদ্ধি-বোধে-মর্মে-কর্মে আর হৃদয়ানুভূতিতে নি:সন্দেহে গেঁথে গেছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর নাম। যাদের মূলমন্ত্রই ‘সমরে আমরা শান্তিতে আমরা সর্বত্র আমরা দেশের তরে’।

কালের আলো/এমএএএমকে