কলমদরদি এক চিকিৎসক

প্রকাশিতঃ 12:44 pm | February 13, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :

জ্ঞানের শক্তিশালী অস্ত্র কলম। কাগজ আবিস্কারের পর মধ্যযুগে শুরু হয় পালকের কলমের ব্যবহার। প্রাচীনকালেও খাগের কলমের কদর ছিল বেশ। এরপর বাজারে আসে আভিজাত্যের প্রতীক ফাউন্টেন কলম। ওই সময় টানা কয়েক যুগ বাজার দখল করে রাখে এ কলম। এখন সময় বল পয়েন্ট পেন বা বলপেনের।

সাধারণত ঘন প্রকৃতির কালি ব্যবহার করা হয় বলপেনে। দাম কম হওয়ায় লেখালেখির কাজে এ কলমের জনপ্রিয়তাও অনেক। এরকমই নানা রঙ ও আঙ্গিকের প্রায় দেড় হাজার সুন্দর কলম রয়েছে চিকিৎসক প্রদীপ চন্দ্র করের ভান্ডারে। মূলত নেশা থেকেই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পুরনো ও দুষ্প্রাপ্য কলমের এক সুন্দর সাম্রাজ্য গড়েছেন তিনি।

কথায় বলে শখের তুলা আশি টাকা। শখের বিচিত্র দুনিয়ায় কেউ ডাকটিকিট সংগ্রহ করেন। কেউ কেউ সংগ্রহ করেন কয়েন, টাই বা সুগন্ধি। তবে ময়মনসিংহের নামি চিকিৎসক প্রদীপ করের শখটা একটু ভিন্ন। শখ মানুষের ভেতরের চিন্তাধারাকে প্রকাশ করে।

আর তাই গত পাঁচ বছর যাবত এক রকম নেশা থেকেই কলমের সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছেন এ চিকিৎসক। নানা ব্র্যান্ডের পুরনো ও মূল্যবান কলম তার সংগ্রহে রয়েছে। তবে কলম নির্বাচনে প্রদীপ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন মসৃণ নিব।

পুরনো জিনিসের প্রতি টান থেকেই নানা ডিজাইনের কলম সংগ্রহ করে রাখাটাই এক সময় নেশা হয়ে উঠে। অনেকেই বলতে পারেন, তিনি চিকিৎসক। কলম সংগ্রহ তো তিনি করতেই পারেন। কিন্তু শৌখিন এ মানুষটি পরম যত্নে সৌন্দর্যের পরশে সাজিয়ে রাখেন এসব কলম।

কলমপ্রেমীদের কাছে ফাউন্টেন পেন আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত। এখনো এ কলম পছন্দের তালিকায় অগ্রভাগে, স্বতন্ত্র স্থান দখল করে আছে প্রদীপ করের কাছে। ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে অনেক কলম পেয়েছেন। আবার নিজেও কিনেছেন। তাই তাকে কলমপ্রিয় বললেও ভুল হবার কথা নয়।

ময়মনসিংহ নগরীর জমির মুন্সী লেনে (পিয়ন পাড়া) চিকিৎসক প্রদীপ করের বাসা ‘সেবাঙ্গন’। তিনি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান (মেডিসিন) হিসেবে কর্মরত। নিজের বাসার নিচতলায় রোগী দেখার কক্ষের একটি শোপিসে হরেক রকমের কলম সংগ্রহ করে রাখেন।

তার বাড়িতে গেলে আলাপ হয় প্রদীপ করের সঙ্গে। বেশ পরিপাটি করে সাজানো গুছানো কক্ষ। শৈল্পিক আঙ্গিকে কক্ষের চারপাশের সেলফে সাজানো অনেক বই।

কীভাবে কলম সংগ্রহের দিকে ঝোঁক সৃষ্টি হলো জানতে চাইলে প্রদীপ কর বলেন, ‘আগে ব্যবস্থাপত্র লিখে কলম ফেলে দিতাম। তখন মায়া লাগতো। কলমের রিফিলও পাওয়া যেতো না। ভাবলাম সংরক্ষণ করি। সেই পাঁচ বছর আগে থেকে শুরু। কলমের কালি ফুরালেও আমার কাছে মহামূল্যবান কলম।’

কী কী রকমের কলম সংগ্রহে রয়েছে এর জবাব দেন প্রদীপ কর। জানান, দেশ-বিদেশী বিভিন্ন রকমের জেল ও বলপয়েন্ট সংগ্রহে রয়েছে তার। আছে নিব, ফাউন্টেন পেন, ইয়ুথ কালি, সুলেখা কালিসহ হরেক রকমের কলম।

প্রদীপ করের সংগৃহীত কলমের ভান্ডার নিয়ে গর্ব করেন তার কন্যা দেবযানী কর ফুল। উল্টিয়ে পাল্টিয়ে সৌখিন বাবার ভান্ডারে থাকা কলমগুলো দেখাচ্ছিলেন। দেবযানী বলেন, বাবার সংগৃহীত কলমগুলো অনেক সুন্দর। কলমগুলোর প্রতি আমাদেরও মায়া বসে গেছে।’

চিকিৎসক প্রদীপ কর ময়মনসিংহ নগরীর নাসিরাবাদ কলেজিয়েট স্কুল ও আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত রংপুর মেডিকেল কলেজে পড়াশুনা করেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত সৌদি আরবে চাকরি করেন। এরপর দেশে ফিরে আসেন।

কলমের মতো বই পড়ার শখও রয়েছে এ চিকিৎসকের। সময় পেলেই বই পড়েন। রাজনৈতিক প্রবন্ধের দিকে তার ঝোঁক বেশি। মাঝে মাঝে লেখালেখিও করেন। প্রদীপ কর বিশ্বাস করেন কলমের যুগ এখনো শেষ হয়নি।

সর্বত্রই ডিজিটালাইড হলেও মানুষের জীবন থেকে কলম কোনদিনই হারিয়ে যাবে না। অর্থের শক্তির চেয়ে কলম এখনো ঢের শক্তিশালী যোগ করেন কলমদরদি এ চিকিৎসক।

 

কালের আলো/এসএ/ওএইচ