সেনাবাহিনীকে নিয়ে গুজবের ‘মাস্টার মাইন্ড’ কারা?
প্রকাশিতঃ 8:57 pm | September 05, 2024

কালের আলো রিপোর্ট:
বাঙালি জাতির গর্ব ও আত্মমর্যাদার স্মারক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করতে ছড়ানো হচ্ছে একের পর এক গুজব। ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টার পাশাপাশি দেশে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টির ধারাবাহিক অপপ্রয়াস চালিয়ে আসছে একটি চক্র। মূলত দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ছাত্র-জনতার মুখোমুখি না দাঁড়িয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক স্থিতিশীলতায় ঐতিহাসিক সাহসী ভূমিকা পালন করায় পরিকল্পিতভাবে সেনাবাহিনীকে নিয়ে ভিত্তিহীন প্রচারণার মাধ্যমে বারবার আঘাত করার অপচেষ্টা দৃশ্যমান হয়ে ওঠেছে।
- মনগড়া, মিথ্যা ও বানোয়াট আষাঢ়ে গল্প
- ল্যাপটপ নিয়ে সেনাবাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করার নিন্দনীয় অপচেষ্টা
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেনাপ্রধানের ফেক অ্যাকাউন্ট, বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ
মনগড়া, মিথ্যা ও বানোয়াট আষাঢ়ে গল্প তৈরি করা হচ্ছে সেনাপ্রধানকে নিয়েও। তাঁর নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট তৈরির মাধ্যমেও প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। অরাজক একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার পায়তারা হচ্ছে একদিন-প্রতিদিন। কিন্তু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক। বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম দক্ষ ও পেশাদার সুশৃঙ্খল একটি বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এই বাহিনীর নামে আজগুবি গল্প তৈরি করে ফায়দা তোলার চেষ্টায় লিপ্ত ‘মাস্টার মাইন্ড’দের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে দেশের বিবেকবান ও সচেতন প্রতিটি মানুষ।
জানা যায়, দেশের প্রতিটি দুর্যোগ-সঙ্কট দক্ষ হাতে সামাল দিয়ে বারবার প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সম্প্রতি দেশের ভয়াবহ বন্যা কবলিত ১১টি জেলায় বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে থেকে তাঁরা মানবিকতার অনন্য এক উদাহরণ তৈরি করেছে। বন্যার্তদের রক্ষায় বীরচিত্তেই তাদের একের পর এক কার্যকর উদ্যোগ সফলতার সঙ্গেই বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাঁরা আবারও প্রমাণ করেছেন দেশের মানুষের কষ্ট ও দুর্দশা লাঘবে কখনও পিছপা হতে শিখেননি। চলমান এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, বিশ্বস্ততা ও দক্ষতার সঙ্গে নিরলসভাবে সেনাবাহিনীকে পরিচালনা করছেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। কিন্তু এরপরেও বিভ্রান্তিমূলক, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার ও প্রোপাগাণ্ডা চালানোর হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে নাম-পরিচয়হীন, আনাড়ি ও ভূইফোঁড় কতিপয় সোশ্যাল মিডিয়াকে।
মূলত প্রযুক্তির ‘আদর্শ ব্যবহার’ নিশ্চিত না হওয়ায় গুজব ভয়াবহ আকার নিয়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে, হিটলারের জামানায় গুজবের উদ্ভাবক তাঁর গুণধর তথ্যমন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলস নিজেও এখন বেঁচে থাকলে কৌশলী বা আনাড়ি-অথর্ব মার্কা গুজবের এসব প্রবণতায় রীতিমতো লজ্জা পেতেন! এ চক্রটির বিকৃত, ভন্ডামি, কপটতার মাধ্যমে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব বিপ্লব বিরোধী চেতনাকে ম্লান করতে অপকৌশল নেটিজেন দুনিয়াতেও ধিক্কৃত হয়েছে। কথিত কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ধূর্ত, নীচ ও মিথ্যাবাদীর যোগ্য চরিত্রায়ণে তাদের মতলববাজি ধরা পড়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একাধিকবার নিজের বক্তব্যে সেনাবাহিনী সম্পর্কে কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার জন্য সাধারণ জনগণকে আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘অনেক ধরনের গুজব চলছে। আমার সেনাবাহিনী নিয়ে, সেনানিবাসে বিভিন্ন কিছু হচ্ছে এ ধরনের রটনা করা হচ্ছে। এসব গুজবে আপনারা কান দেবেন না। এ ধরনের গুজব ছড়াতে সাহায্য করবেন না। প্যানিক থেকেই গুজব ছড়াচ্ছে, ইচ্ছাকৃত নয় সেটি আমি জানি। গুজব থেকে নিবৃত্ত থাকলে এটি ভালো হবে। কোনো ধরনের নিশ্চিত না হয়ে এ ধরনের সংবাদ দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। তাহলে এটি আমাদের সাহায্য করবে।’
সেনাবাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা অত্যন্ত নিন্দনীয়
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর জাতীয় সংসদ ভবনের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পরে সচেতন নাগরিকেরা হারানো রাষ্ট্রীয় সম্পদের কিছু অংশ ওই দিনই উদ্ধার করে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন। অথচ ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও’র মাধ্যমে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। বৃহস্পতিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর তুলে ধরেছে প্রকৃত ঘটনাপ্রবাহ।
তাঁরা বলছেন, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নেপথ্য কণ্ঠ (ব্যাকগ্রাউন্ড ভয়েস) যুক্ত করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সংসদ ভবন এলাকায় ল্যাপটপ হাতে হাসিমুখে হেঁটে যাচ্ছেন একজন সেনাসদস্য। ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড ভয়েসে দুটি ল্যাপটপ সেনাসদস্য অবৈধভাবে আত্মসাৎ করেছেন বলে দাবি করা হয়। এভাবে ওই সেনাসদস্য ও সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করা হয়। মূলত ওই দিন কিছু সচেতন নাগরিক সেনাসদস্যদের কাছে একটি ল্যাপটপ ও একটি স্ক্যানার হস্তান্তর করেন, যা ওই দিনই নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে জমা করেন সেনাসদস্য। পরে উদ্ধার করা অন্যান্য সামগ্রীর সঙ্গে ল্যাপটপ ও স্ক্যানারটি জাতীয় সংসদ ভবনের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেনাবাহিনী সংক্রান্ত এ ধরনের বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে জনগণের কাছে সেনাবাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
সেনাপ্রধানের নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভুয়া’ আইডি
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর নাম এবং ছবি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ভুয়া’ আইডি বা অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- ফেসবুক বা অন্য কোন সোশ্যাল মিডিয়াতে সেনাপ্রধানের ব্যক্তিগত কোন অ্যাকাউন্ট বা আইডি নেই। ফলে এসব ভুয়া আইডি বা অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত পোস্ট দেখে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
বৃহস্পতিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর সবাইকে সতর্ক করে বলেছে, ‘সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের ব্যক্তিগত কোন অ্যাকাউন্ট নেই। এপ্রেক্ষিতে, সেনাবাহিনী প্রধানের পরিচয়/ছবি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন ফেক অ্যাকাউন্ট হতে প্রচারিত পোস্ট দেখে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
খুলনায় সেই যুবকের মৃত্যু নিয়ে গুজব
খুলনায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কটূক্তিমূলক পোস্ট করায় স্থানীয় জনতা শ্রী উৎসব (২২) নামে এক এক যুবককে আটক করে। এরপর তার প্রকাশ্য শাস্তি দাবি করে স্থানীয় লোকজন কেএমপি’র ডিসি (দক্ষিণ) এর কার্যালয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপস্থিত হয়। পরবর্তীতে সেখানে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ স্থানীয় জনগণ উপস্থিত হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। ওই যুবককে প্রকাশ্যে শাস্তি প্রদান করার জন্য আন্দোলন করতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় কিছু উচ্ছৃঙ্খল জনতা কেএমপি’র ডিসি (দক্ষিণ) এর কার্যালয়ে প্রবেশ করে সেই যুবকের ওপর আক্রমণ চালায়। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আপ্রাণ চেষ্টায় তাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে তিনি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তিনি আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
আইএসপিআর জানায়, ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত প্রদানের কারণে ওই যুবকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাঁর সুস্থতা সাপেক্ষে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড রোধ ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সর্বদা সচেষ্ট। এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ওই ব্যক্তির মৃত্যু সংক্রান্ত গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য জনগণকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো
কালের আলো/এমএএএমকে