শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতার প্রধান কারণ ঝুট ব্যবসার দলবদল

প্রকাশিতঃ 5:18 pm | September 06, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

গাজীপুর ও আশুলিয়ায় কর্মরত শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর অভিযোগ, কারখানাগুলোকে কেন্দ্র করে ঝুট ব্যবসার যে প্রচলন, তাদের ক্ষমতার হাতবদল হওয়া না হওয়ার একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে তারা অসন্তোষ জিইয়ে রাখতে চায়। ৪ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যেসব কারখানার দেনা-পাওনা বাকি আছে, সেগুলো মিটিয়ে দেওয়ার বিষয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নানা সময় যে মিথ্যা মামলাগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। আলোচনায় অংশ নেওয়া গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সমন্বয়ক তাসলিমা আখতার বলেন, ‘যেসব কারখানা বন্ধ আছে, সেসব কারখানা সরকারি উদ্যোগে চালু করার প্রস্তাব আমাদের দিকে থেকে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ঝুট ব্যবসায়ীরা যেন কাজের পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে, সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এতদিন ধরে শ্রমিকরা কথা বলতে পারতো না, এখন পারছে, এটা খুব ভালো। সেই পরিবেশটা যেন কেউ নষ্ট করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি দেওয়ার কথাও আমরা বলেছি।’

গাজীপুর ও আশুলিয়ার অস্থির পরিস্থিতির পেছনের কারণ বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। সেটাকে পুঁজি করে ঝুট ব্যবসায়ীরা তাদের দলবদলের রাজনীতি করছেন। কার কাছে ঝুটের ব্যবসাটা যাবে, সেটা নিরসনে শ্রমিকদের হাতিয়ার করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু কারখানায় শ্রমিকদের বেতন বকেয়া পড়েছে, কিছু কারখানা হুট করে বন্ধ করে দেওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ছিলই। এগুলো নিরসন করলে কেউ সুযোগ নিতে পারতো না।’

এদিকে ঝুট ব্যবসা নিয়ে অস্থিরতা প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি আবু আশফাক বলেন, ঝুট ব্যবসা দখলকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীদের অস্থিরতা সৃষ্টির কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও অনেক জায়গায় কারখানার অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকেও শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। পোশাক কারখানার বিপর্যয় আনার জন্য একটি পক্ষ চক্রান্ত করছে কি না সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে।

কারা অস্থির করে তুললো পরিবেশ জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষমতার পালাবদল হলে বাইরের শক্তি অবৈধ কিছু ব্যবসায়ীকে অস্থিরতা তৈরি করতে দেখে থাকি। সবসময় কিন্তু এরকম বড় পরিসরে এর আগে দেখিনি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পরে শিল্প পুলিশ ও থানা পুলিশ সবাই ট্রমায় ছিল। শ্রমিকরা কাজে ফিরতে শুরু করেছেন। আশা করি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। সরকারের যত গোয়েন্দা সংস্থা আছে, তাদের কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। আমরা বলেছি—করণীয় কী, পরিস্থিতি কীভাবে স্বাভাবিক হতে পারে তা জানাতে আমরা সঙ্গে আছি।’ যে দাবিগুলো সামনে এসেছে সেগুলো অযৌক্তিক ও শ্রম আইন পরিপন্থি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নারী শ্রমিকের তুলনায় পুরুষ শ্রমিক কম, সেখানে সমতা আনার যে কথাটা বলেছে, সেটাতো কোনোভাবেই মানার মতো না। একদিকে বায়ারদের চাপ আছে নারী শ্রমিক বাড়ানোর বিষয়ে, আরেক দিকে তারা দক্ষও না। ফলে এ ধরনের দাবি পূরণের সুযোগ নেই।’

কালের আলো/এমএএইচ/ইউএইচ