ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে দেশ

প্রকাশিতঃ 9:26 pm | September 10, 2024

কালের আলো রিপোর্ট:

দেশে ভয়াবহ তাপদাহের সঙ্গে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহর থেকে গ্রাম কোথাও নেই বিদ্যুতের স্বাভাবিক সরবরাহ। লোডশেডিংয়ের তীব্রতায় নাকাল জনজীবন। হঠাৎ লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সবাইকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোডশেডিং বেড়েছে।

বিদ্যুৎ বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দৈনিক প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় ১ হাজার ৮৭৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। এর আগে গত রোববারও (০৮ সেপ্টেম্বর) দেশে গড়ে ১ হাজার ২৯১ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়।

ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজধানীর বনশ্রী ও মিরপুর এলাকার বাসিন্দা জোবায়ের হোসেন ও খোকন আহমেদ জানান, দিন-রাতে দফায় দফায় লোডশেডিং হচ্ছে। তীব্র গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত।নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের সুবিধা মিলছে না।

রাজধানীর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র মতিঝিল
এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুরু করে অন্যান্য ব্যাংক, বিমা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই মতিঝিলেই এখন ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। দিনে দুই থেকে তিন বার টানা আড়াই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। একই খবর পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর অন্য এলাকা থেকেও। বার বার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে আইপিএস, জেনারেটরে।

জানা যায়, ইলেক্ট্রো-হাইড্রোলিক ওয়েলপাম্প নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই কেন্দ্র থেকে কোনো বিদ্যুৎ আসছে না। ফলে সারা দেশে ২৮০ থেকে ২৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে লোডিশেডিং। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগবে।

রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রাম, বরিশাল, পটুয়াখালী, রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, কুমিল্লা, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও সাভার এলাকা থেকে লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। ময়মনসিংহ সদরে সানকিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান জানান, গত বছর গ্রীষ্মকালে ভয়াবহ গরমেও এতবার বিদ্যুৎ যায়নি। কিন্তু এবার একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে টানা দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা আসে না। রংপুরের একজন বলেন, ‘লোডশেডিংয়ের কারণে চাপ পড়ছে আইপিএস জেনারেটরে। বেশিক্ষণ সাপোর্ট দিতে পারছে না।’

বিতরণ সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্বালানি সংকট ও মেরামতের কারণে আরও বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় উৎপাদন কমে গেছে, যে কারণে বাড়ছে লোডশেডিং। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩১ হাজার ৫২০ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় গত ৩০ এপ্রিল।

বিতরণ কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা জানান, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আবার জ্বালানি সংকটের কারণে ছয় হাজার ২৮৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে।

জ্বালানি সঙ্কটের পাশাপাশি ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি কমেছে। ত্রিপুরা থেকে ঘণ্টায় ১৬০ মেগাওয়াটের স্থানে ৬০ থেকে ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। ভারতের সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ভেড়ামারা দিয়ে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার কথা থাকলেও মিলছে ৮৮০ মেগাওয়াট। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও ৪০০ মেগাওয়াট কম আসছে।

দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্তত তিন জেলায় বিদ্যুৎ যোগান দেওয়া দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিটই উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। জানা গেছে, সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩ নম্বর ইউনিটের ওয়েলপাম্প নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে, গত ৭ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিট বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, ওভারহোলিং কার্যক্রমের জন্য গত দুই বছর ধরে ২ নম্বর ইউনিট বন্ধ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমাদের ইক্যুইপমেন্ট ফেল করার কারণে ৩০০ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ৩ নম্বর ইউনিট বন্ধ রয়েছে। বন্ধ থাকা ইউনিট ফের চালু করতে দুই সপ্তাহের মতো সময় লাগতে পারে।’ এখানকার উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে অন্তত তিনটি জেলায় সরবরাহ করা যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রটি বন্ধ থাকার কারণে ২৮০ থেকে ২৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাবে। ফলে এই পরিমাণ বিদ্যুতের লোডশেডিং দিতে হবে।’

বাংলাদেশকে আদানি গ্রুপের তাগাদা
বিদ্যুৎ বিক্রয় বাবদ বকেয়া অর্থ আদায়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে তাগাদা দিচ্ছে ভারতের ধনকুবের গৌতম আদানির প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রুপ। গ্রুপের কর্মকর্তাদের দাবি, বাংলাদেশের কাছে তাদের পাওনা বর্তমানে প্রায় ৫০ কোটি ডলার।

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে আদানি গ্রুপের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা জানি বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়নি। (দেশটির) নতুন সরকারের সঙ্গে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি এবং বকেয়া পরিশোধ সংক্রান্ত আলোচনার পাশাপাশি সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখা নিয়েও আমাদের কথাবার্তা হচ্ছে।

কালের আলো/এমএএইচ/ইউএইচ