সেই মসলা গ্রাম সফলতার দ্বারপ্রান্তে

প্রকাশিতঃ 5:32 pm | September 21, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

সরকারি প্রণোদনায় গড়ে তোলা হয়েছে মসলা গ্রাম। ইতোমধ্যে গ্রামের সব রাস্তার পাশে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন মসলার চারা। বাড়ির আঙিনায়, পুকুর পাড়ে জিও ব্যাগে আবাদ করা হচ্ছে আদা ও হলুদ। মাঠে মাঠে চারা ও বীজতলার জন্য তৈরি করা হয়েছে শেড। সব মিলিয়ে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। গ্রামের কৃষকদের মসলা বীজের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে গড়ে তুলে উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি নির্ভরতা কমানোই এই প্রকল্পের লক্ষ্য।

কুষ্টিয়া সদরের বড়িয়া-ভাদালিয়াপাড়ার সেই মসলা গ্রাম সফলতার দ্বারপ্রান্তে। সড়কের পাশে লাগানো দারুচিনি, তেজপাতাসহ মসলার গাছের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। টিকে গেছে এসব গাছ। আর লাভ পেয়ে বাড়ির আঙিনা, উঠান, পুকুর পাড়সহ পতিত জায়গায় ব্যাগে বা বস্তায় আদা ও হলুদের চাষ বাড়াচ্ছেন কৃষক। তারা লাভ পাচ্ছেন পিঁয়াজ-রসুন, ক্যাপসিকাম, গোল মরিচ, জিরা ও মৌরি চাষেও।

বছরখানেক আগে রাস্তার পাশে রঙিন খাঁচায় এমন সারি সারি দারুচিনি, তেজপাতাসহ মসলার গাছ লাগিয়ে শুরু হয় মসলা গ্রাম প্রকল্প। দিনে দিনে খাঁচার সংখ্যা বেড়েছে, ছাড়িয়ে গেছে ৬ হাজার। দু-একটি গাছ মারা গেলে বা খাঁচা নষ্ট হলেও তা আবার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কৃষি বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে পরিচর্যা করেন গ্রামের মানুষই। বড় হতে থাকা এসব মসলার গাছ নিয়ে আশাবাদী তারা।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার জাহিদ বলেন, পলিনেটে চারা তৈরি করে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে পিঁয়াজ-রসুন, ক্যাপসিকাম, গোল মরিচ, জিরা ও মৌরিসহ দরকারি ১৩ পদের মসলার। কৃষকের বেশি আগ্রহ উঠান, বাড়ির আঙিনা, পুকুর পাড়সহ পতিত জায়গায় জিও ব্যাগ ও বস্তায় আদা-হলুদের চাষ।

পাঁচ বছরের এ প্রকল্পে এক বছরেই লাভও পেয়েছেন কৃষকরা। ভাদালিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, গত মৌসুমে ৩৬টি বস্তায় বাড়ির আঙিনায় আদা চাষ করেছিলাম। ২১ কেজি আদা হয়েছিল। ভালো দামে বিক্রি করি। এবার ৫০০ বস্তায় আদা লাগিয়েছি।

প্রতি বস্তায় ১ কেজি করে পাওয়া যাবে আশা করি। ২০০ টাকার ওপরে কেজি হিসেবে বিক্রি করতে পারছি। যদি কোন রোগ বালাই না হয় তাহলে এবারও আদার ভালো ফলন হবে এবং ভালো দামে বিক্রি করতে পারলে ভালো লাভবান হবো। এছাড়াও পলিনেটে পিঁয়াজের চারা তৈরি হচ্ছে এগুলো লাগানো হবে। সারা বছরই এখন আমরা ব্যস্ত।

এক এলাকার কৃষক নূর আলম বলেন, আদা, পিঁয়াজ-রসুন, তেজপাতা, দারুচিনি, চুই ঝাল চাষ করেছি। এসব চাষে কৃষি বিভাগ আমাদের উদ্বুদ্ধ করে আসছে। এবং তারা নিয়মিত খোজ খবরও নেওয়াসহ কিভাবে আমরা এসব মসলার যত্ন নিবো সেসব বিষয়েও ধারনা দিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবার আরও বেশি চাষ করা হচ্ছে। প্রথমে মসলার চারা সরকারই দিয়েছে। তারা জিও ব্যাগও দিয়েছে। এবার নিজ উদ্যোগেই অনেক বেশি বস্তায় চাষ করছি। গ্রামের সব কৃষকই এখন মসলার চাষে নেমেছে।

আমেনা খাতুন নামের এক নারী কৃষক জানান, আমরা বাড়ীর আঙ্গিনা এবং পুকুর পাড়েও মসলার আবাদ করেছি। প্রথনে কৃষি অফিসারদের কথা বিশ্বাস হতো না । তাই তাদের কথা রাখার জন্য বাড়ীর পাশে সামান্য জমিতে আদা এবং ক্যাপসিক্যাম চাষ করেছিলাম। পড়ে যখন দেখলাম এগুলো হচ্ছে এবং বাজারে বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে তখন গ্রামের অধিকাংশ মানুষই আগ্রহী হয়ে উঠে। তাই এখন এই গ্রামের নাম পরিবর্তন হয়ে মসলা গ্রাম হয়ে গেছে। গ্রামের রাস্তার দুইপাশে, বাড়ীর আঙ্গিনা, পুকুর পাড় বা পরিত্যাক্ত জমি সবখানেই মানুষ মসলার আবাদ করছে।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বলেন, আমদানি নির্ভরতা কমানোর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে সরকারি প্রণোদনায় মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়ায় এ মসলা গ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে। সারা দেশে মধ্যে এই একটি গ্রামকে বেছে নেওয়া হয়েছে। রাস্তার পাশের এসব চারা গাছ ঠিকমতো বড় হলে আগামী বছর থেকে তেজপাতা তুলতে পারবেন গ্রামের মানুষ, দারুচিনি নিতে পারবেন আরও এক বছর পর। সব মিলিয়ে এই প্রকল্প এখন সফলতার দারপ্রান্তে।

কালের আলো/ডিএইচ/কেএ