আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী’র ‘টিমওয়ার্ক’

প্রকাশিতঃ 10:50 am | March 01, 2019

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

বাংলাদেশ পুলিশের ‘প্রধান অধিকর্তা’ তিনি। জনস্বার্থ, জনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা সবকিছুই সমান তালে নিশ্চিত করার গুরুদায়িত্ব তাঁর কাঁধে। ফলে দিন-রাত ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করতে হয় পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীকে।

একাগ্রতা ও আন্তরিকতার সঙ্গেই পেশাদারি কর্মকৌশল, দক্ষতা, কর্মনিষ্ঠা ও দূরদর্শিতার মাধ্যমেই নিজ দায়িত্ব তিনি পালন করছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদার দুর্নীতির মামলার রায় থেকে শুরু হওয়া চ্যালেঞ্জের প্রতিটি ধাপ সাহসের সঙ্গে পেরিয়ে বড় রকমের সফলতা দেখিয়েছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাঁকোটাও ভালোভাবেই পাড়ি দিয়ে।

বলা চলে, রক্তপাতহীন সংসদ নির্বাচন উপহার দেওয়ার পাশাপাশি দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও পুলিশের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন ‘দলপতি’ ড.জাবেদ পাটোয়ারী। এসবের মাধ্যমে দীর্ঘদিন মাঠ পর্যায়ে কাজ করেননি বলে একদা ‘ঠকঠক করা’ বর্ণচোরাদের সমুচিত জবাবও দিয়েছেন।

পুলিশ প্রধান হিসেবে ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার) দায়িত্ব নেওয়ার সময়েই টিমওয়ার্ককেই গুরুত্ব দেন। দীর্ঘ ৩২ বছরের বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতায় তিনি বেশ ভালোভাবেই জানতেন টিমওয়ার্কের দৌলতেই যে কোন কঠিন কাজ সহজেই করা সম্ভব। এর মাধ্যমে ডিঙানো যায় পাহাড়সম বাঁধাও। জঙ্গিবাদ নির্মুল ও মাদকের রাশ টেনে ধরে সাফল্যের স্বর্ণদুয়ারে নিয়ে গেছেন পুলিশ বাহিনীকে।

‘পুলিশের জীবনে প্রতিদিন ইউনিক। প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা ঘটে’ এমন সত্যই আইজিপি পদে এসে শুরুতেই উচ্চারণ করেছিলেন ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। তিনি বলেছিলেন, ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শত্রুদের সঙ্গে লড়েছে। কিন্তু পিছপা হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নে লালিত পুলিশ সব সময় জয়ী হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে। সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলো কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে।’ নিজের এমন বক্তব্য পেশাদারিত্ব দিয়ে বাস্তবায়নের পাশাপাশি নিত্যদিনই আরো বেশি উদ্যম নিয়ে প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন।

আরো পড়ুন:
জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-আইজিপির শ্রদ্ধা

পুলিশকে একটি শক্তিশালী ও সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে অব্যাহত রেখেছেন সংগ্রাম। থানাগুলোতে সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সেতুবন্ধন রচনা করেছেন। পুলিশের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন জেলা সফর করেছেন।

পুলিশ কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনার পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট গাইড লাইন দিয়েছেন। জঙ্গিবাদের মতোই মাদকের বিরুদ্ধেও শুন্য সহিষ্ণু নীতি (জিরো টলারেন্স) অনুসরণের কথা জানিয়েছেন। গত দুই সপ্তাহে কক্সবাজার, রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম সফরকালেও গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করেছেন পুলিশ প্রধান।

বিমান ছিনতাই চেষ্টার মতো একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করা যায় না বলেও সেখানে মত দেন তিনি।

মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাঙামাটির পুলিশ লাইন সুখী নীলগঞ্জে নবনির্মিত জেলা পুলিশের অস্ত্রগার, তিনটি উপজেলা থানা ভবন ও একটি পুলিশ ফাঁড়ির উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের সামনে আইজিপি বলেন, পাহাড়ে অন্য বাহিনীর মতো পুলিশও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ পালন করছে।

পাহাড়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে সব রকম সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ট্যুরিস্ট ও নৌ-পুলিশের উন্নয়নে কাজ করা হবে। অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ যৌথভাবে কাজ করবে এবং পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে। একই সাথে পার্বত্যাঞ্চলের অপরাধ দমন ও মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কর্মদক্ষতা আরও বৃদ্ধি করা হবে।

যেকোন অপরাধের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান পুলিশ মহাপরিদর্শক। তিনি বলেন, পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার বিষয়ে সেনাবাহিনী অন্যান্য বাহিনীসহ সমন্বিতভাবে পুলিশ কাজ করছে। আশা করি ওই সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিশেষ পরিকল্পনা তা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।

বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইন্স মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিয়োগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও যোগ দেন আইজিপি। দিন কয়েক আগে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিমান ছিনতাইয়ের চাঞ্চল্যকর ঘটনার তদন্ত কাজ নিয়েও গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

পুলিশ প্রধান বলেন, ‘বিমান ছিনতাই ঘটনা সংক্রান্ত যে মামলাটি হয়েছে, সেই মামলার তদন্ত শুরু করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। মাত্র আমাদের কাছে মামলাটি এসেছে। মামলার আলামতও মাত্র কাউন্টার টেররিজম ইউনিট জব্দ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তেই মামলার অগ্রগতি নিয়ে বলার মতো কিছু নেই। আলামতগুলো আদালতের নির্দেশক্রমে সিআইডির ফরেনসিক ইউনিটে পাঠানো হবে। পরে সিআইডির কাছ থেকে ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়া যাবে।

অন্য বিষয়গুলো এখনও শুরু করতে পারেননি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। তদন্ত কর্মকর্তা সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। তাদের কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবেন। এরই মধ্যে ঘটনাস্থল অর্থাৎ বিমানটি পরিদর্শন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। সিএমপি কমিশনার এই বিষয়ে নিয়মিত ব্রিফ করবেন।

কালের আলো/এএ