আজ সংলাপে বসছে অন্তর্বর্তী সরকার : নির্বাচনের রোডম্যাপের প্রস্তাব দেবে বিএনপি
প্রকাশিতঃ 12:05 am | October 05, 2024
মো. শামসুল আলম খান, কালের আলো:
তৃতীয়বারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ছয় সংস্কার কমিশন গঠনের পর আজ শনিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর হেয়ার রোডে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’য় দুপুর আড়াইটায় এই সংলাপ শুরু হবে। সংলাপে উপদেষ্টামণ্ডলী গঠিত ছয়টি কমিশনের সার্বিক কার্যক্রমের অগ্রগতি ও দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গুরুত্ব পাবে। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করবে সরকার। এর আগে গত ৩১ আগস্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সংলাপে যোগ দিতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দুপুর আড়াইটা থেকে এই সংলাপ শুরু হবে।
এদিকে, সংস্কার প্রস্তাবের বাইরে সংলাপে নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে প্রস্তাব তুলে ধরার কথা জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তাঁরা বলছেন, কাউকে আলাদাভাবে খুশী করতে আসেনি অন্তর্বর্তী সরকার। তাই নির্বাচিত সরকার উপহার দিতে না পারলে তারা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং সালাউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, গেলো দু’মাসেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারেনি সরকার। এজন্য সরকারের সদিচ্ছার অভাব না থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সংলাপে ডেকেছে, গণতন্ত্র মঞ্চ সংলাপে যাবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান কি বলতে চান তা শুনবো। তারপর দেশের পরিস্থিতি ও করণীয় সম্পর্কে আমাদের কিছু বক্তব্য থাকবে।’
ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ডেকেছেন। সংস্কার কমিশনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। আমরা যাব, দেখি প্রধান উপদেষ্টা কি বলেন।’
বিএনপিসহ নিবন্ধিত কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হতে যাচ্ছে। আইন সংবিধান নির্বাচন দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশসহ ছয়টি সংস্কার কমিশনের কাজ শুরুর আগে দলগুলোর সাথে এই সংলাপকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে সরকার। সংলাপের সময়সূচি অনুযায়ী দুপুর আড়াইটায় বিএনপি, বিকেল তিনটায় জামায়াতে ইসলামী, বিকেল সাড়ে তিনটায় গণতন্ত্র মঞ্চ এবং বিকেল চারটায় বাম গণতান্ত্রিক জোট, বিকেল সাড়ে চারটায় হেফাজতে ইসলাম, পাঁচটায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও সাড়ে ৫টায় এবি (আমার বাংলাদেশ) পার্টি। বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে থাকবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, বাম গণতান্ত্রিক জোটের (সিপিবি, বাসদ-খালেকুজ্জামান), বাসদ (মাক্সসবাদী), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ (বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি)-এর সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতন্ত্র মঞ্চের (জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন) সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ চেয়ারম্যান চরমোনাই পীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, হেফাজতে ইসলামের (জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ নেজামী ইসলাম পার্টি) মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান, এবি পার্টির এএফএম সোলায়মান চৌধুরী নিজ নিজ দলের নেতৃত্ব দেবেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলে গত ৭ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেন। গত ১ অক্টোবর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের কথা জানান। পরে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনে বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনে সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসনে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনে অধ্যাপক আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) এই ছয় কমিশনের সদস্যদের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
সংলাপে প্রস্তাবের বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা এবং নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না গণমাধ্যমকে বলেছেন, সংস্কারে যত সময় প্রয়োজন তা দিতে চাই আমরা। তবে যে সংস্কারই হোক সেটি হতে হবে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে।
কালের আলো/এমএসএকে/এমএএএমকে