বিশাল ও জটিল বইগুলো পড়বেন কীভাবে?
প্রকাশিতঃ 11:32 am | October 08, 2024
রায়ান কুগান:
আমাদের প্রত্যেকের সংগ্রহে এমন অনেক বই আছে যেগুলো কখনো খুলে পড়ার চিন্তাও করতে পারি না। হয়ত এমন এক লেখকের লেখা যিনি খুব ‘জটিল ভাষায়’ লেখার জন্য বিখ্যাত। হয়ত এমন একটি বিষয়ে, আমরা আগে কখনো যার সম্মুখীন হইনি, বা মনে হয় এ বিষয়ে আলোচনা করার মতো আমাদের প্রয়োজনীয় জ্ঞান নেই। হয়ত ৯০০ পৃষ্ঠার বিশাল বইーযেটাকে ছুঁড়ে মেরে কাউকে অনায়াসে হত্যা করা যেতে পারে।
কিন্তু সাবেক ইংরেজি শিক্ষক, পিএইচডি গবেষক, সম্পাদক, লেখক এবং বইপ্রেমী হিসেবে, আমি আপনাকে একটি গোপন কথা বলি, বইগুলো আপনার থেকেও বেশি ভীত।
আমি এমন একটি এলাকায় বড় হয়েছি যেখানে বইপড়াকে সর্বোচ্চ সন্দেহের চোখে দেখা হয়, এবং অন্তত একবার হলেও শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। তাই সাহিত্যের সাথে আমার সম্পর্ক সবসময় জটিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার বয়সে আমার একটি অস্পষ্ট ধারণা ছিল আমি হয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য পড়তে চাই। কিন্তু সি গ্রেডের ছাত্র (যোগাযোগে দক্ষ) হওয়ায় এই ভেবে শান্তি পাচ্ছিলাম যে, আমি দস্তয়েভস্কি পড়তে যাচ্ছি না। তলস্তয় পড়তে যাচ্ছি না। আমি কাফকার দুনিয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছি না।
আমার কলেজ লাইব্রেরিতে সত্যিই সুন্দর ক্ল্যাসিকের সংগ্রহ ছিল। যেখানে ডিকেন্স, শেক্সপিয়ার, কিছু ব্রন্টে ইত্যাদি অনেকের বই পাওয়া গেলেও এমন অনেক লেখকও ছিল যাদের নাম আমি আগে কখনো শুনিনি। মার্সেল প্রুস্ট কে? অথবা নিকোলাই গোগল? সেই লোকের নাম কি সত্যিই “বালজাক”? নিশ্চয়ই নামটি যেভাবে লেখা হয়েছে সেভাবে উচ্চারিত হয় না?
মনে মনে ভাবতাম আমি এজন্য হাসাহাসির সম্মুখীন হব আনা ক্যারেনিনা কে না জানার জন্য? বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে শেষপর্যন্ত আমি এলোমেলোভাবে বইগুলো নাড়াচাড়া করি এবং পড়ার চেষ্টা করতে থাকলাম। শুরু করলাম ২০০ পৃষ্ঠার কম বইগুলো দিয়ে, ধীরে ধীরে আরো মোটা এবং জটিল ভলিউমের দিকে যেতে লাগলাম।
বেশিরভাগ সময় আমি যা করছিলাম তাকে ‘পড়া’ বলব না—আসলে আমি কেবল পৃষ্ঠায় চোখ বোলাচ্ছিলাম, মাঝে মাঝে কিছু বাক্যাংশ নিয়ে। যদি আমি কোনো প্লট, সারাংশ বা স্পার্কনোটস পেতে পারি, আমি কখনো কখনো বইটির সাথে চলমান বিষয়গুলোও পড়তাম, যাতে সম্পূর্ণ ব্যাপারটা অনুভব না করতে পারি—কিন্তু সাধারণভাবে আমি কেবল শব্দগুলোর স্বাদ নিচ্ছিলাম।
এখন হয়ত তা সময়ের অপচয় মনে হতে পারে, কিন্তু এভাবে পড়াটাকে পরামর্শ হিসেবে নিতে পারেন। আমি জেমস জয়েসের বই ধারাবাহিকভাবে পড়েছি, ইউলিসিস এবং ফিনেগানস উইকসহ, যদিও তার প্রায় ১ শতাংশও বুঝতে পারিনি। In Search of Lost Time কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পড়েছি—কেবল একটি মূঢ় ধারণা নিয়ে যে কী ঘটেছিল। আমি এমিল জোলা’র Les Rougon-Macquart সিরিজের কয়েকটি বই পড়েছি তার আগেই বুঝতে পারলাম যে, এগুলো আসলে একে অপরের সাথে সংযুক্ত।
যদিও আমার বোঝাপড়া ছিল ন্যূনতম—আমি খুঁজে পেয়েছিলাম পড়ার কাজটি নিজেই মূল্যবান। হয়ত অদ্ভুত শোনাচ্ছে, কিন্তু তা পেশীর ব্যায়ামের মতো, মানে চর্চা করলে সুফল পাবেন। যখন আপনি এজরা পাউন্ডের Cantos সম্পূর্ণ পড়ে ফেলবেন, তখন নিজেই বুঝবেন ‘সাধারণ’ বইগুলো পড়া কতটা সহজ। পাশাপাশি এও বুঝবেন প্রথমবার যে বইগুলো আপনার মাথার ওপর দিয়ে গিয়েছিলーযেগুলো, যতটা ধারণা করেছিলেন বুঝতে পারেননি, তার থেকেও বেশি বুঝতে পেরেছেন।
অর্থাৎ লাভ মূলত পড়ার বাইরেই থাকে। আপনি ১০০০ পৃষ্ঠার আধুনিক কোনো বই ধৈর্য ধরে পড়তে পারলে অন্যান্য জটিল বা আকারে বইগুলো পড়তে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠবে। Gravity’s Rainbow হয়ত এখন আপনার কাছে দুর্বোধ্য, কিন্তু বিশ্বাস করুন—আপনি হয়ত কিছুই পাবেন না, কিন্তু শেলফে ধুলোবালি জমে নষ্ট হওয়ার থেকে বেশিকিছু পাবেন।
বই দ্বারা “ভয়” পেতে হবে না। শব্দগুলোর ভয়ে ভীত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনাকে যা করতে হবে, তা হল বই খুলে পড়তে শুরু করা।
সূত্র : ইন্ডিপেন্ডেন্ট
কালের আলো/এমএএইচ/ইউএইচ