মণ্ডপে মণ্ডপে উৎসবের আমেজ, অসাম্প্রদায়িক ও সম্প্রীতির বাংলাদেশের বারতা তিন বাহিনী প্রধানের
প্রকাশিতঃ 12:05 am | October 12, 2024
এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর:
জনাকীর্ণ রাজধানী ঢাকার প্রায় ৩’শ বছরের পুরাতন রমনা কালী মন্দির। শারদীয় দুর্গোৎসবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই তীর্থস্থানটিতে উৎসবের আমেজ। ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত এই মন্দিরটিতে ভক্ত, পূজারী ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ে জমজমাট এক পরিবেশ। অপরূপ স্থাপত্যশৈলীর নীরব সাক্ষী এই মন্দিরটিতে শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় সত্য-সুন্দরের আলোকে ভাস্বর দুর্গোৎসব বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদযাপনের চিত্র অবলোকন করলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। বারতা দিলের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির চিরকালীন ঐতিহ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ঐক্য ও পারস্পরিক সহমর্মিতায় সুসংহত অসাম্প্রদায়িক এক বাংলাদেশের।
সার্বজনীন দুর্গাপূজার বর্ণাঢ্য বিশাল ক্যানভাস সব ধর্মের মানুষের মিলনমেলার কেন্দ্রবিন্দুতে রূপ নিয়েছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাস্তবিক শক্তিতে। যেন এক চিরায়ত ঐকতান স্পর্শ করেছে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়কে। নিরাপত্তা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতে সব শঙ্কা-ভয় কাটিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় সন্তুষ্ট সনাতনধর্মী নেতারাও। তাঁরা বলছেন, সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধান শুরু থেকেই দুর্গোৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বিশেষ করে সেনাপ্রধান বিভিন্ন সময়ে পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি সেটি রক্ষা করেছেন। ফলে অনুপম প্রীতিময় এই আনন্দ উৎসব এবার যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে রমনা কালীমন্দির পরিদর্শনকালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘দুর্গাপূজা উপলক্ষে সব রকম নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আগামীতেও সবোর্চ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে দেশের মানুষের মাঝে সহমর্মিতা ও সহাবস্থান বজায় আছে বলেও মন্তব্য করেন সেনাপ্রধান।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সেনাপ্রধানের পত্নী সারাহনাজ কমলিকা জামান পূজা উপলক্ষে উপস্থিত অন্যান্যদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের সময় তিনি উপস্থিত সকলকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানান এবং পূজার আনন্দ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে একসঙ্গে সময় কাটান।
শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা তিন বাহিনী প্রধানের
দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীতে রমনা কালী মন্দিরে তখন ভক্ত-পূজারীদের উৎসবমুখর পদচারণা। মন্দির ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। পোশাকী নিরাপত্তার বাইরেও ছিল বাড়তি নজরদারি। এদিন বিকেলে এমন সময়ে রাজধানীর রমনা কালী মন্দির পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। তাঁরা সবাইকে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা জানান। মন্দিরটিতে তিন বাহিনী প্রধান পৌঁছালে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান কালী মন্দির পূজামণ্ডপ উদযাপন কমিটির নেতারা।
প্রথমেই কথা বলেন বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। তিনি বলেন, ‘যেকোন উৎসব আমরা যেন এক সাথে উদযাপন করতে পারি সেটাই আমরা চাই। যেটা যুগে যুগে এদেশে হয়ে আসছে এবং হবে ইনশাআল্লাহ।’ বিমান বাহিনী প্রধান বলেন, ‘দেশের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিমান বাহিনীও সর্বোচ্চ সতর্কতায় দায়িত্ব পালন করছে।’ তিনি সকল ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সহযোগিতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানান।
নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমরা সবাই এই দেশের জন্য একত্রে কাজ করবো। সবাই যার যার ধর্ম পালন করবো। ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করবো আনন্দ সুখ ও শান্তির সঙ্গে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ নৌবাহিনী পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’ এডমিরাল এম নাজমুল হাসান সকলের জন্য নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পূজা উদযাপনের প্রত্যাশা করেন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্যে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আপনারা উৎসবমুখর সুন্দর পরিবেশে পূজা উদযাপন করতে পারছেন, তা দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। শুধু ঢাকাতেই না, ঢাকার বাইরে সব জায়গায় আমাদের লোকজন মোতায়েন আছে। আমরা আপনাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’
এতদিন ‘খুব ভালোভাবেই’ সব চলেছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘বাকি যে সময়টা আছে সেটাও সুন্দরভাবে উদযাপন করতে পারবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’ পূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে জেনারেল ওয়াকার বলেন, ‘শুধু এখানেই নয়, সারা দেশেই যে যেখানে এই উৎসব পালন করছেন, সবার জন্যই থাকবে আমার শারদীয় শুভেচ্ছা।’
‘শতাব্দীর পর শতাব্দী আমরা একসঙ্গে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বসবাস করে আসছি এই দেশে। এটা আমাদের সহাবস্থান। একজনের প্রতি অন্যজনের যে সহমর্মিতা, এটা অতীতে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে’-যোগ করেন সেনাপ্রধান।
কালের আলো/এমএএএমকে