নিজেদের নয়, জনগণের ভাগ্য গড়তে এসেছি : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 2:29 pm | February 14, 2018

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতি করতে আসিনি, বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য গড়তে এসেছি। নিজেদের ভাগ্য না। আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন চাই। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নত হোক সেটাই আমরা চাই। সেটা সম্ভব যখন দেশে দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, স্বজনপ্রীতি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।

তিনি বলেন, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস যারা করবে, জঙ্গিবাদের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার হতেই হবে। কারণ বাংলাদেশকে আমরা একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আনতে চাই।

ইতালির রাজধানী রোমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরকালীন আবাসস্থল পার্ক দ্যা প্রিনসিপি গ্র্যান্ড হোটেলে এ সংবর্ধনা আয়োজন করে ইতালি আওয়ামী লীগ।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ড পেয়ে কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার আমলে বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। তিনি একজন প্রধানমন্ত্রী হয়েও কালো টাকা সাদা করেছেন। এ টাকা কোথা থেকে এলো? বিএনপি ক্ষমতায় থেকে দেশকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করে।

তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়ার দুই ছেলে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। যাদের টাকা আমরা ফেরত এনেছিলাম।

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এতিমের টাকা নিজের কাছে কুক্ষিগত করতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, টাকাগুলো বিদেশ থেকে এসেছিল এতিমদের জন্য, সে টাকা এতিমদের কাছে যায় নি। তাদের ব্যক্তিগত তহবিলে চলে গিয়েছিল। হ্যাঁ যদি খালেদা জিয়া বলতেন আমার দুই ছেলে এতিম তার জন্য রেখেছি। তাও একটা যুক্তি ছিল। সেটাও উনি করেননি।

তখন দুই কোটি টাকায় ধানমণ্ডিতে চারটি ফ্ল্যাট কেনা যেত মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, টাকার মায়া ছাড়তে পারেনি। নিজের কাছে কুক্ষিগত করতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার প্রশ্ন আজকে যারা বিএনপি দরদি, আমাদের আঁতেলরাও আছে তারা বলে দুই কোটি টাকার জন্য কেন এই মামলা। তাহলে দুর্নীতির করার জন্য একটা সিলিং থাকবে যে এত কোটি পর্যন্ত দুর্নীতি করা জায়েজ। তারা কি সেটা বলতে চায়। বিএনপি তাহলে একটা দাবি করুক যে এত কোটি পর্যন্ত তারা দুর্নীতি করতে পারবে। দেখি সেটা দিয়ে একটা রিট করুক।

বিশেষ কেউ দুর্নীতি করলে তা কি অপরাধ নয়, প্রশ্ন করেন তিনি।

সরকার প্রধান বলেন, আদালত রায় দিয়েছে। এখানে আমাদের তো করার কিছু নেই। আর আমরা যদি করতামই তাহলে ১০ বছর তো চলতে দিতাম না। ২০০৮ এ যখন ক্ষমতায় আসলাম, তখনই তো করতে পারতাম। আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন। এখানে আমাকে গালি দেয়া বা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কী যুক্তি থাকতে পারে আমরাতো সেটা বুঝি না।

জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদের শাসনামলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত বলা যায়, সেই সময় ছিল ‘স্বর্ণযুগ’। সবকিছুতে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। ২০০১ সালে বিএনপি আসল, আবার সব থেমে গেল। আবার সব খুন, হত্যা, জঙ্গি-সন্ত্রাস, বাংলা ভাই সৃষ্টি এগুলো শুরু হল। বিএনপির ‘অপকর্মের কারণেই’ ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগের বিরুদ্ধে ‘চ্যালেঞ্জ’ জানানোর বিষয়টিও উল্লেখ করে বলেন, কানাডার ফেডারেল কোর্ট ঘোষণাই দিয়েছে যে, বিশ্ব ব্যাংকের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি বলতেই পারি, আমি, আমার ছোট বোন, আমাদের ছেলেমেয়ে কখনো এমন কোনো কাজ করিনি, যাতে বাংলাদেশের মানুষের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।

ইতালি আওয়ামী লীগের সভাপতি ইদ্রিস ফারাজির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী প্রমুখ।