গ্রাফিতিজুড়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, বিপ্লব-বিজয়ের চিত্র অবলোকনে ‘মুগ্ধ’ প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশিতঃ 10:34 pm | October 16, 2024

রাইসুল ইসলাম খান, কালের আলো:

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। বিজয় উদযাপনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র আঁকেন তরুণ বিপ্লবী শিক্ষার্থীরা। রংতুলির আঁচড়ে ফুটে ওঠে বিপ্লব, বিদ্রোহ ও বিজয়ের চিত্র। এর আগে জুলাই ও আগস্টের শুরুতেও চলে গ্রাফিতি আঁকা। গ্রাফিতিতে স্থান পায় বিভিন্ন বাণী। দেয়াল লিখনে দেশের প্রতি দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানানো হয়। ফুটিয়ে তোলা হয় শিকল ভেঙে স্বাধীন হওয়ার চিত্র। কোথাও গ্রাফিতির ওপর খেলা চলে আলো-ছায়ার। আন্দোলনের সময় প্রেরণা জুগানো গান বা কবিতা কী নেই গ্রাফিতিতে? ঘুরেফিরে ওঠে আসে বিদ্রোহী কবি নজরুলের সেইসব গান। বিশেষ করে গুলির সামনে বুক টান করে দাঁড়ানো শহীদ আবু সাঈদের রক্তের দৌলতে আক্ষরিক অর্থেই সূচিত হয়েছে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের গল্প।

তরুণ বিপ্লবীদের আঁকা এসব গ্রাফিতি এবার প্রথমবারের মতো সশরীরে গিয়ে দেখেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (১৬ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিভিন্ন দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতিগুলো হেঁটে দেখেন তিনি। এমন কিছু ছবি ফেসবুকে নিজের পেজে পোস্ট করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ‘ঢাকা ডায়রি’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে ফেসবুক পোস্টে তিনি ছবির ক্যাপশনে লিখেছেন- ‘প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই-আগস্টের ছাত্র-অভ্যুত্থানের সময় তরুণ বিপ্লবীদের আঁকা গ্রাফিতি দেখতে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পরিদর্শন করেন।’

প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ‘চিফ অ্যাডভাইজর গভ’ থেকেও বিষয়টি জানানো হয়। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ এবং আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। এছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

গ্রাফিতি অবলোকন করে প্রধান উপদেষ্টা প্রশংসা এবং উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বলে জানান ঢাবির প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে যে গ্রাফিতিগুলো আছে, জুলাই বিপ্লবের সময় যে গ্রাফিতিগুলো আঁকা হয়েছে সেগুলো দেখেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জগন্নাথ হল-শহীদ মিনার ক্রসিংয়ে নেমে পলাশীর দিকে যাওয়ার সড়কে বুয়েট এবং জগন্নাথ হলের দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতি ঘুরে ঘুরে দেখেন।’

সাইফুদ্দীন আহমেদ আরও বলেন, ‘ওনাকে আমরা অবহিত করেছি যে, শিক্ষার্থীরা জুলাই বিপ্লবে কর্মসূচি দেওয়া যাচ্ছিল না তখন শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ হিসেবে এগুলো করেন। আমাদের বাচ্চাদের সৃজনশীলতা, বিগত সরকারের প্রতি এক ধরনের ক্ষোভ, ব্যঙ্গাত্মক-প্রতিবাদী ভাষায় লেখা গ্রাফিতিগুলোর তিনি প্রশংসা করেছেন, উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। বিপ্লবের স্পিরিট ধরে রাখার ব্যাপারে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।’

দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের দেয়ালগুলো এখন শুধু ইট-কাঠের নয়, বরং সেগুলো বিপ্লবের প্রতীক হয়ে ওঠেছে। এই গ্রাফিতিগুলো মানুষকে আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেয় প্রতিনিয়ত। তাদেরকে সমাজের পরিবর্তনের জন্য প্রেরণা জোগায়। শিল্পের মাধ্যমে পরিবর্তনের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার এই যাত্রা একটি অনন্য অভিজ্ঞতা এবং এটি সমাজে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন সবাই।

কালের আলো/আরআই/এমএএএমকে