শেখ হাসিনার পদত্যাগ বিতর্কের রহস্য
প্রকাশিতঃ 11:27 pm | October 21, 2024
মো.শামসুল আলম খান, কালের আলো:
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ওইদিনই জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এরপর দেখতে দেখতে কেটে গেছে প্রায় আড়াই মাস। এর আগেই রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। গঠন হয় শান্তিতে নোবেল জয়ী ড.মুহাম্মদ ইউনূস এর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু শেখ হাসিনা নিজেই কিছুদিন আগে তাঁর দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফাঁস হওয়া আলাপে দাবি করেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেননি। যেকোনো সময় চট করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়বেন। তাঁর পদত্যাগ নিয়ে শুরু হয় ধোঁয়াশা।
- দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়
- বিতর্কের পালে হাওয়া লেগেছে ‘জনতার চোখ’ এ রাষ্ট্রপতির বিশেষ সাক্ষাৎকারকে ঘিরে
- রাজপথে কর্মসূচির ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
এরই মধ্যে এই বিতর্কের পালে নতুন করে হাওয়া লাগে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’ এ রাষ্ট্রপতির এক বিশেষ সাক্ষাৎকারকে ঘিরে। ম্যাগাজিনটির প্রতিবেদনে রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে-শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র তাঁর কাছে নেই। রাষ্ট্রপ্রধানের প্রকাশিত এমন মন্তব্যের পর রোববার (২০ অক্টোবর) রাত থেকে তুঙ্গে ওঠে আলোচনা-সমালোচনা। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ইতোমধ্যেই অভিযোগ করে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি বলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করে শপথের লঙ্ঘন করেছেন।
মীমাংসিত বিষয়ে নতুন করে কোনও বিতর্ক সৃষ্টি না করার আহ্বান
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়
সোমবার (২১ অক্টোবর) দিনমান এসব ঘটনাপ্রবাহে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে রাজপথের কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ। রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য জানান আন্দোলনের অন্যতম দু’সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমও। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরপরই রাষ্ট্রপতির বক্তব্য ও মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত বক্তব্যে সৃষ্টি হয় ধূম্রজাল। যদিও এদিন রাতে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় এক বিবৃতিতে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যু ‘মীমাংসিত’, বিতর্ক সৃষ্টি না করার আহ্বান জানানো হয়।
শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগের ইস্যুতে নতুন করে জলঘোলা হচ্ছে। দেশ ও অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করতে এমন পাঁয়তারা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন অনেকেই। সংসদ ভেঙে দেয়ার মধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিশ্চিত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘পদত্যাগপত্র জমা দেয়া, না দেয়ার কিছু নাই। সাংবিধানিক শূন্যতার আলাপটি অপ্রাসঙ্গিক। এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।’
রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করে শপথের লঙ্ঘন করেছেন
ড. আসিফ নজরুল
বিশেষ সেই সাক্ষাতকারে যা বলা হয়েছে
সম্প্রতি মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’- এ সাক্ষাতকারটি প্রকাশিত হয়েছে। ‘উনি তো কিছুই বলে গেলেন না…’ শিরোনামে প্রকাশিত লেখায় মতিউর রহমান চৌধুরী উল্লেখ করেছেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন কি করেন নি এই নিয়ে বিতর্ক এখনো জারি রয়েছে। হয়তো অনেক দিন থাকবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় একাধিকবার দাবি করেছেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান মিডিয়ার সামনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর জানিয়েছিলেন।’
প্রশ্ন উঠেছে প্রধানমন্ত্রী যদি পদত্যাগ করে থাকেন তাহলে সেটা গেল কোথায়? কারও কাছে এই প্রশ্নের জবাব নেই। তিন সপ্তাহ ধরে এই বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন মতিউর রহমান চৌধুরী। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র থাকার কথা যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে, সেখানেও তিনি খোঁজ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনের মুখোমুখি হন মতিউর রহমান চৌধুরী।
আপনার কাছে কি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্রটা আছে? মতিউর রহমানের এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি’।
রাষ্ট্রপতির বিষয়ে ছাত্রসমাজই নির্ধারক
সারজিস আলম
৫ আগস্ট ছাত্র-আন্দোলন ও গণবিক্ষোভের মুখে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সংবিধানের ৫৭ (ক) ধারা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার কোনো পদত্যাগপত্র তার কাছে নাই। কথোপকথনের সময় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘৫ই আগস্ট সকাল সাড়ে দশটায় বঙ্গভবনে ফোন এলো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে। বলা হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে আসবেন মহামান্য প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। এটা শুনেই প্রস্তুতি শুরু হলো বঙ্গভবনে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফোন এলো তিনি (শেখ হাসিনা) আসছেন না’।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘চারদিকে অস্থিরতার খবর। কী হতে যাচ্ছে জানি না। আমি তো গুজবের ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে পারি না। তাই সামরিক সচিব জেনারেল আদিলকে বললাম খোঁজ নিতে। তার কাছেও কোনো খবর নেই। আমরা অপেক্ষা করছি। টেলিভিশনের স্ক্রলও দেখছি। কোথাও কোনো খবর নেই। এক পর্যায়ে শুনলাম, তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আমাকে কিছুই বলে গেলেন না।’
সাংবিধানিক শূন্যতার আলাপটি অপ্রাসঙ্গিক
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার যখন বঙ্গভবনে এলেন তখন জানার চেষ্টা করেছি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন কি না? একই জবাব। শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন।… সব কিছু যখন নিয়ন্ত্রণে এলো তখন একদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এলেন পদত্যাগপত্রের কপি সংগ্রহ করতে। তাকে বললাম, আমিও খুঁজছি’।
মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এ বিষয়ে আর বিতর্কের সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন এবং এটাই সত্য। তবুও এই প্রশ্নটি যাতে আর কখনও না ওঠে তা নিশ্চিত করতে আমি সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়েছি।’
রাষ্ট্রপতির পাঠানো রেফারেন্সের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ সম্পর্কে তাদের মতামত দেন। এতে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক শূন্যতা দূর করতে এবং নির্বাহী কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামণ্ডলীকে রাষ্ট্রপতি শপথবাক্য পাঠ করাতে পারবেন বলে আপিল বিভাগ মতামত দেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করে শপথের লঙ্ঘন করেছেন
সোমবার (২১ অক্টোবর) মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে মুখ খুলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি বলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করে শপথের লঙ্ঘন করেছেন।’ ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি পদে তার থাকার যোগ্যতা আছে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উনি যদি তার বক্তব্যে অটল থাকেন তাহলে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে যাবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ৫ আগস্ট উনি নিজের মুখে ভাষণে উনার কাছে পদত্যাগপত্র (সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার) দেওয়া এবং গ্রহণ করার কথা বলেছেন। একের পর এক কার্যাবলির মধ্য দিয়ে পুরো জাতির কাছে এটি স্পষ্ট যে উনি পরিষ্কার করেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন। আজ যদি উনি বলেন- প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দেননি, এতদিন পরে, প্রায় আড়াই মাস পরে, তাহলে এটা এক ধরনের স্ববিরোধিতা হয়। এটায় উনার শপথ লঙ্ঘন হয় এবং এই পদে উনার আর থাকার যোগ্যতা আছে কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি বলেছেন উনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি। এটা একটি মিথ্যাচার। এটা হচ্ছে উনার (রাষ্ট্রপতির) শপথ লঙ্ঘনের শামিল। কারণ উনি নিজেই ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে, পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন’ এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন। এরপর রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কাছে জানতে চাওয়া হয়Ñএই পরিস্থিতিতে করণীয় কী আছে? সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপদেশমূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে জানতে চাওয়া হয়। এটার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য সব বিচারক মিলে একটি মতামত দেন।
সেই মতামতের প্রথম লাইন হচ্ছেÑ‘দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন…’। এই যে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, এর প্রেক্ষিতে যে একটি অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করা যায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে একটি নোট আমরা মন্ত্রণালয়ের দফতর থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাই। এই অভিমত রাষ্ট্রপতি দেখেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। এরপর উনি নিজে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন, যুক্ত করেন আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, আপনার যদি মানসিক এবং শারীরিক সক্ষমতা না থাকে বা আপনি যদি গুরুতর অসদাচরণ করেন, তখন রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারেন কিনা সেটা নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আমাদের সংবিধানে আছে।
তিনি আরও বলেন, একজন সর্বোচ্চ পদে থাকা মানুষ পুরো জাতির সামনে ভাষণ দিয়ে পদত্যাগের বিষয়ে জানিয়ে, দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে অভিমত নেওয়ার পরও উনি কীভাবে এটা বলতে পারেন এটি আমার বোধগম্য না। এখন উনার স্ববিরোধী কথাবার্তা বলার কোনও সুযোগ নেই। যদি তিনি তার বক্তব্যে অটল থাকেন তাহলে উনি নিজ পদে থাকার যোগ্য আছেন কিনা সেটি আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখতে হবে।
পদত্যাগপত্র সরকারের কাছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, পদত্যাগ উনি করার কথা রাষ্ট্রপতির কাছে। রাষ্ট্রপতির দফতরে পদত্যাগপত্র থাকার কথা এবং বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী এটি নিয়ে কোনও আদালতে প্রশ্ন তোলারও সুযোগ নাই। এখন উনি যদি বলেন পদত্যাগপত্র নাই, তাহলে পদত্যাগপত্র উনি কী করেছেন আপনারা সেটা উনাকেই জিজ্ঞেস করবেন।
রাষ্ট্রপতির বিষয়ে ছাত্রসমাজই নির্ধারক
সোমবার (২১ অক্টোবর) সেগুনবাগিচায় বিএমএ ভবনের শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন সভাকক্ষে ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের মতো মানুষ যদি বলেন শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের ডকুমেন্টস তিনি রাখেননি, তাহলে তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা ছাত্রসমাজই নির্ধারণ করবে।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহও। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শক্তির উত্থান ও পুনর্বাসন ঠেকাতে দল-মত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। আপনারা দেখেছেন রাষ্ট্রপতি বলেছেন শেখ হাসিনা তার কাছে কোনো পদত্যাগপত্র জমা দেননি। গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন আবারও বিভিন্ন পাঁয়তারা শুরু করেছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা স্বৈরাচারের পতিত আত্মারা বিভিন্ন জায়গায় জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেছে।
হাসনাত আরও বলেন, ৫ আগস্টের আগে আমাদের একটাই পরিচয় ছিল আওয়ামী লীগ ছিল জালিম আর আমরা ছিলাম মজলুম। কিন্তু ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে আমরা পৃথক হয়েছি যার কারণে একটি গ্যাপ তৈরি হয়েছে। এই গ্যাপটির সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমাদের আবার একত্রিত হতে হবে। আমরা দলীয় স্বার্থে যদি আলাদা হয়ে যাই তাহলে আওয়ামী লীগ আবারও সুযোগ নিবে। আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন ঠেকাতে আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, রাষ্ট্রপতি যে দ্বিমুখী বক্তব্য দিয়েছেন তাতে স্পষ্ট যে তিনি শেখ হাসিনাকে বৈধতা দিতে চান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাষ্ট্রপতির এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে।’
মীমাংসিত বিষয়ে নতুন করে কোনও বিতর্ক সৃষ্টি না করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগকে কেন্দ্র করে মীমাংসিত বিষয়ে নতুন করে কোনও বিতর্ক সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বিতর্ক সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল কিংবা বিব্রত করা থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (২১ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে প্রচার চালানো হয়েছে, তা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার ওপর যত ধরনের প্রশ্ন জনমনে উদ্রেক হয়েছে, সেগুলোর উত্তর আপিল বিভাগের আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি গত ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামত চান। এরপর আপিল বিভাগ জানান, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করানো যেতে পারে। এরপরই ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টাদের শপথ পড়ানো হয়।
কালের আলো/এমএসএকে/এমএএএমকে