জোরালো রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি
প্রকাশিতঃ 10:15 pm | October 22, 2024
কালের আলো রিপোর্ট:
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের কোন দালিলিক প্রমাণ তাঁর হাতে নেই, এমন স্বীকারোক্তিতে ফেঁসে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তাকে নিয়ে কোনভাবেই বিতর্ক থামছে না। তিনি ‘মিথ্যাচার’ করে শপথ লঙ্ঘন করেছেন এমন অভিযোগ প্রথমে তুলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এরই ধারাবাহিকতায় ‘মিথ্যাচার’ করে তিনি এ পদে থাকতে পারেন কীনা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাঁর পদত্যাগ দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিস্কার করে ড.আসিফ নজরুলের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে। রাষ্ট্রপতিকে পদ থেকে সরাতে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে এমন খবরও ভেসে বেড়াচ্ছে। তাঁর পদত্যাগ দাবিতে এখনও অনড় রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর আগে সোমবার (২১ অক্টোবর) রাতে রাষ্ট্রপতির প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে শেখ হাসিনার পদত্যাগকে ঘিরে মীমাংসিত বিষয়ে বিতর্ক না সৃষ্টি করার আহ্বান জানানো হয়। তবে এই আহ্বানকে কেউ কানে তুলেনি। উল্টো তাঁর পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠেছে রাজনৈতিক ময়দান।
- পদত্যাগ দাবিতে বঙ্গভবন এলাকায় বিক্ষোভ
- দাবিতে অনড় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
- আসিফ নজরুলের বক্তব্যের সঙ্গে একমত সরকার
- প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দু’উপদেষ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক
- বঙ্গভবনের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা আন্দোলনকারীদের
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দু’উপদেষ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি জোরালো হওয়ার পর মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন সরকারের প্রভাবশালী আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। বৈঠকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে কে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হবেন সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদকে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি এবং আপিল বিভাগের বর্তমান জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামকে বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি করার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র। দুই উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধান বিচারপতি আইজিপি, র্যাব ডিজি ও ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি জোরালো হওয়ার পর থেকে সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে আবারও সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাইতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। এমন অবস্থায় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এই রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন দু’উপদেষ্টা।
বঙ্গভবনের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা আন্দোলনকারীদের
এদিকে, এদিন দুপুরের পর থেকে বঙ্গভবনের সামনের মোড়ে অবস্থান নিয়ে রাষ্ট্রপতির অপসারণ চেয়ে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে আসা বিক্ষুব্ধ জনতা। এরপরেই ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। আনা হয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর এপিসি ও জলকামান। সন্ধ্যার পর এই উত্তেজনা বড় আকার নেয়। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে বঙ্গভবনের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিপেটা করে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। পরে সেনা সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। সর্বশেষ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত পৌনে ১০ টায় আন্দোলনকারীরা বর্তমানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের বেরিক্যাডের সামনে অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ব্যারিকেডের উপরে ওঠে ভুয়া ভুয়াসহ নানা স্লোগান দিচ্ছেন।
জানা যায়, সম্প্রতি মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’- এই সাক্ষাতকারটি প্রকাশিত হয়েছে। ‘উনি তো কিছুই বলে গেলেন না…’ শিরোনামে প্রকাশিত লেখায় মতিউর রহমান চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র তাঁর কাছে নেই। রাষ্ট্রপ্রধানের প্রকাশিত এমন মন্তব্যের পর রোববার (২০ অক্টোবর) রাত থেকে তুঙ্গে ওঠে আলোচনা-সমালোচনা।
আসিফ নজরুলের বক্তব্যের সঙ্গে একমত সরকার
সোমবার (২১ অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসিফ নজরুল বলেন, একজন সর্বোচ্চ পদে থাকা মানুষ পুরো জাতির সামনে ভাষণ দিয়ে পদত্যাগের বিষয়ে জানিয়ে, দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে অভিমত নেওয়ার পরও উনি কীভাবে এটা বলতে পারেন এটি আমার বোধগম্য না। এখন উনার স্ববিরোধী কথাবার্তা বলার কোনও সুযোগ নেই। যদি তিনি তার বক্তব্যে অটল থাকেন তাহলে উনি নিজ পদে থাকার যোগ্য আছেন কিনা সেটি আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি বলেছেন উনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি। এটা একটি মিথ্যাচার। এটা হচ্ছে উনার (রাষ্ট্রপতির) শপথ লঙ্ঘনের শামিল।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীরকে প্রশ্ন করা হয় এটা কি আসিফ নজরুলের ব্যক্তিগত মতামত, নাকি প্রধান উপদেষ্টাসহ পুরো উপদেষ্টা কাউন্সিলের মতামত? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল যা বলেছেন সেটার সঙ্গে সরকার একমত পোষণ করে। রাষ্ট্রপতিকে সরানোর কোনও উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আগামীতে রাষ্ট্রপতিকে সরানোর কোনও উদ্যোগ নেওয়ার চিন্তাভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, ভবিষ্যৎ বলে দেবে।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগসহ ৫ দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার
আগামী বৃহস্পতিবারের (২৪ অক্টোবর) মধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগসহ পাঁচটি দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এই দাবি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তাদের দাবির মধ্যে আছে- মুজিববাদী ৭২ এর সংবিধান বাতিল করতে হবে; এই সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নিষিদ্ধ করতে হবে; এই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে পদত্যাগ করতে হবে; এই সপ্তাহের মধ্যে জুলাই বিপ্লবকে ‘প্রোক্লেমেশন অব রিপাবলিক’ ঘোষণা করতে হবে এবং বিগত তিনটি নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সাল) অবৈধ ঘোষণা করে নির্বাচিতদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে, তারা যেন কখনও বাংলাদেশে নির্বাচন করতে না পারে সেজন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। এই সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ দফা দাবি না মানা হলে আবার রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল শুরু করে বঙ্গভবনের দিকে যাত্রা শুরু করে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটি। হাইকোর্ট মাজার মোড় এলাকায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। কিন্তু বাধা অতিক্রম করে বঙ্গভবন পর্যন্ত এগিয়ে যায় তারা। সেখানে তারা বঙ্গভবনের সামনের খালি জায়গায় অবস্থান করতে চাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। উপায় না পেয়ে বঙ্গভবন মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে তারা। এর আগে গত সোমবার দিবাগত রাতে ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লিখেন, ‘সন্ত্রাসী ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও ফ্যাসিবাদের দোসর রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র-জনতার গণজমায়েত হবে।’
কালের আলো/এমএসএকে/এমকে