আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সেমিনার আয়োজনে বাংলাদেশের সক্ষমতা দেখলো বিশ্ব, ভবিষ্যতে নিরাপদ উড্ডয়নের জন্য শুভ কামনা বিমান বাহিনী প্রধানের

প্রকাশিতঃ 9:18 pm | October 23, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

স্বার্থক ও সাফল্যমণ্ডিত অনিন্দ্য সুন্দর এক আয়োজন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) যৌথ আয়োজনে তিন দিনব্যাপী ৭ম আন্তর্জাতিক উড্ডয়ন নিরাপত্তা সেমিনার আয়োজনে মুন্সীয়ানায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও বেবিচক এর সামর্থ্য ও সক্ষমতা আরও একবার দেখলো বিশ্ব। ১৩টি দেশের বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে বিমান চলাচলের নিরাপত্তায় স্থাপিত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক। সূচনা হয়েছে বৈশ্বিক বিমান বাহিনীর মধ্যে চলমান সহযোগিতার, যা ভবিষ্যতে বিমান চলাচল নিরাপত্তার পথ আরও প্রশস্ত করবে। সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন প্রগাঢ় বন্ধুত্বের নির্মল আনন্দের বারতা ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রত্যেকের প্রাণে প্রাণে। এর মাধ্যমে তিনি পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের নতুন পটভূমি রচনা করেছেন।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও এ আন্তর্জাতিক এই সেমিনারের সমাপনী অনুষ্ঠানে আলোকময় উচ্চারণে নিজেদের মধ্যকার বন্ধন আরও সুদৃঢ় করার প্রত্যয়দীপ্ত উচ্চারণ করেন বিমান বাহিনী প্রধান। তিনি বিশ্বব্যাপী বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মধ্যে আরও শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরীর জন্য মূল্যবান আলোচনা এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন। আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তুলে ধরেন উড্ডয়ন নিরাপত্তা প্রসারে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুবিধাও। ভবিষ্যতে নিরাপদ উড্ডয়নের জন্য জানান শুভ কামনা।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন পরে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন। এর আগে সোমবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও এ এই সেমিনারটির উদ্বোধন করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান।

সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সমন্বিতভাবে কাজ করে নিরাপদ বিমান উড্ডয়ন-চলাচল-অবতরণ নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গত বছর ২২ হাজার ৯২৯ নিরাপদ উড্ডয়ন ঘণ্টা অর্জনে সফলতা দেখিয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও বেবিচক এর যৌথ ব্যবস্থাপনায় ঢাকায় আন্তর্জাতিক উড্ডয়ন নিরাপত্তা সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার মাধ্যমে উড্ডয়ন নিরাপত্তা সম্প্রসারণে আধুনিকায়নের গুরুত্ব তুলে ধরে এবারের সপ্তম সেমিনারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়-‘প্রমোটিং ফ্লাইট সেফটি বাই এমব্রেসিং টেকনোলোজিক্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট’। আয়োজক বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ছাড়াও বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, রাশিয়া, কাতার, মালদ্বীপ, চীন, কেনিয়া, পাকিস্তান, সৌদি আরব, শ্রীলংঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র ও জিম্বাবুয়ের বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। সেমিনারটিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, এমআইএসটিসহ বিভিন্ন সংস্থা ও বেশিরভাগ বেসরকারি এয়ারলাইন্সসমূহের প্রতিনিধিরা যোগ দেন।

গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বিমান বাহিনী প্রধানের
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নি:স্বার্থ আত্মত্যাগকৃত শহীদদের প্রতি সমাপনী অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যের শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। তাদের এই সাহসিকতা বিমান বাহিনী সদস্যদের দায়িত্ব পালনে অনুপ্রাণিত করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন। সময়ের গতিধারায় একটি আধুনিক, শক্তিশালী ও পেশাদার বিমান বাহিনী আজ বাস্তব। নিজেদের প্রায়োগিক অপারেশনাল সক্ষমতাকে আরও উন্নত করার প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়ে আধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত ও পেশাদার বিমান বাহিনী গঠনের মাধ্যমে জাতীয় দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিমান বাহিনী প্রধান আরও বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে আজকের বিমানসেনা, প্রযুক্তিবিদ এবং বিমান চলাচল সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জের সঙ্গে সমন্বয় করে নিতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিমান শিল্পের ক্রমবিকাশের সাথে সাথে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেয়া উড্ডয়ন নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পরিকল্পনা) এয়ার ভাইস মার্শাল মো. শরীফ উদ্দীন সরকার, বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়াসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

এই সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে বরাবরের মতো এবারও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও বেবিচক একটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড স্থাপন করেছে। সুযোগ তৈরি করেছে বিমান উড্ডয়ন নিরাপত্তার বিষয়েও পেশাগত মান উন্নয়নের। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে বিশ্বের ১৩টি দেশের অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বেগবান হবে এবং এই অঞ্চল তথা বিশ্বে বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রকাশ ও সুনাম আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন বক্তারা।

কালের আলো/এমএএএমকে