রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে

প্রকাশিতঃ 10:26 pm | October 24, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণের বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হতে পারে। এই তথ্য জানিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, যেহেতু দাবিটা ক্রমান্বয়ে জোরালো হচ্ছে, এটা এক ধরনের গণদাবি। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের অবস্থান ও সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এ কথা বলেন তিনি। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের বিষয়ে অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

রাষ্ট্রপতির বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাষ্ট্রপতি কী বলেছেন সেটা আমাদের নজরে আনা হয়েছে। তার পদত্যাগে যে দাবি উঠেছে সেটাও বিবেচনা হচ্ছে। একই সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক দল যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগে সাংবিধানিক সংকট হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে, সেটাও আলোচনা হয়েছে। আবার ওই দলের দুই-একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন সাংবিধানিক সংকট হবে না।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি জোরালো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের জোরালো দাবির বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। যদিও তাদের (রাজনৈতিক দল) সিদ্ধান্ত স্পষ্টভাবে বলেননি।

পদত্যাগ করা হলে সাংবিধানিক কোন ধারা মতে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেওয়া হবে–– এমন প্রশ্নে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমি ঘোড়ার আগে গাড়িকে নিয়ে গেলে সমস্যা। এ মুহূর্তে কথা হচ্ছে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগের দাবি নিয়ে আমরা কীভাবে ডিল করব। আমরা বলেছি এটি রাজনৈতিক বিষয়। যেহেতু দাবিটা জনগণ থেকে এসেছে, আমাদের সরকার গণঅভ্যূত্থানের ফসল হিসেবে এসেছে, কাজেই সংবিধানের প্রত্যেকটা বিষয় আক্ষরিক অর্থে মানা সম্ভব হবে কি না। রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে সেখানে ব্যারিয়ারগুলো আমাদের সহজ হয়ে যায় কি না, তা নিয়ে কথা হয়েছে। এটা যেহেতু রাজনৈতিক আলোচনা তাই এটির লিগ্যাল বা সাংবিধানিক ইস্যু হিসেবে দেখছি না।

আমরা স্বাভাবিক পরিবেশে নেই, অস্বাভাবিক পরিবেশে আছি। এখন সবকিছু সংবিধান মেনে করতে হবে, সেটা সম্ভব হবে কি না এটা ভাবতে হচ্ছে। এটিকে রাজনৈতিক বিষয় হিসেবে দেখছি। প্রচেষ্টা হচ্ছে রাজনৈতিক ঐকমত্যের, রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান স্পষ্ট করে যারা গণদাবি করছে তাদের জানাতে হবে, যুক্ত করেন রিজওয়ানা।

সিদ্ধান্ত নিতে কতদিন লাগতে পারে–– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করবে। তাদের সঙ্গে আমাদের কী ধরনের কথা হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর আশঙ্কার জায়গা কোথায়, সেগুলো আদৌ বাস্তবসম্মত কিনা। এটা নিয়ে যে খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে আছি তাও না, আবার বিলম্বিত করাও যাচ্ছে না। কারণ এটা এমন পদ, যেখানে দীর্ঘদিন যাবত অনিশ্চয়তার মধ্যে কেউ থাকতে চাইবে না। কারণ গণদাবির বিষয়ে বিলম্বিত করার সুযোগ নেই। কত দিন- এটা বলা যায় না।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রমুখ।

রাষ্ট্রপতির পদকে কেন্দ্র করে বলা হচ্ছে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। অন্যান্য বিষয়ও আসছে। বর্তমান সংবিধান থাকবে কিনা এটা নিয়ে দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। একদিকে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সংবিধান পরিবর্তন করে নতুন করে লিখত হবে, আর অন্য দিক থেকে কেউ কেউ বলছে যে সংবিধান পুরোপুরি পরিবর্তন করা যাবে না। উপদেষ্টা পরিষদ এ বিষয়ে কী ভাবছে–– এরকম এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, আমি আজও সংবিধান সংস্কার কমিশনের মিটিং এ ছিলাম। বিষয় হচ্ছে যে ব্যক্তিগতভাবে কে কী বলেছেন কমিশন গঠনের আগে সেটা গ্রাহ্য হবে না। বরং কমিশন স্বতন্ত্রভাবে সবগুলো স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কথা বলে এবং সব রাজনৈতিক দল-মত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে কনসালটেশনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে। এটি ব্যক্তি মাহফুজ আলম অথবা আলী রীয়াজের মতের রিফ্লেকশন হবে না। বরং কমিশন অ্যাজ এ হোল, অ্যাজ এন ইনস্টিটিউশন ওইটার মতামত রিফ্লেকশন হবে। এটা আপনারা দেখতে পারবেন যখন কমিশন নিয়মিত কার্যক্রম শেষ করে রিপোর্ট জমা দেবে, তখন আপনারা অবশ্যই দেখতে পাবেন।

কালের আলো/ডিএইচ/কেএ