রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যু; বিএনপি’র সঙ্গে একমত অন্যরাও

প্রকাশিতঃ 11:34 pm | October 27, 2024

কালের আলো রিপোর্ট :

রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবি, সংবিধান বাতিল ও প্রক্লেমেশন অব সেকেন্ড রিপাবলিক ইস্যুতে এখনও অনড় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। জাতীয় নাগরিক কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যাচ্ছে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ একাধিক দলের সঙ্গে বৈঠকের পর রবিবার (২৭ অক্টোবর) বিকাল ৪টা থেকে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। যদিও এই ইস্যুতে বিএনপি’র সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন অন্যরাও। রাষ্ট্রপতির অপসারণ বা পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সরকার রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ইস্যুতে সরকারকে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতীয় ঐক্য ছাড়া কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মহাসচিব, বিএনপি

১২ দলীয় জোটের নেতারা জানান, এই বৈঠকটি অনেকটাই অম্লমধুর ছিল। ছাত্রনেতারা যেসব বিষয়ে ঐকমত্য চাইছেন, এরমধ্যে অন্যতম রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবি। আর এক্ষেত্রে ১২ দলীয় জোট জানিয়ে দিয়েছে, রাষ্ট্রপতির প্রতি তাদের কোনও দুর্বলতা বা সহানুভূতি না থাকলেও এই মুহূর্তে তার অপসারণ সাংবিধানিক সংকটের কারণ হতে পারে। এর থেকে নানাবিধ সমস্যার উদ্রেক করতে পারে।

জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা দুরূহ কাজ
শাহাদাত হোসেন সেলিম
মুখপাত্র, ১২ দলীয় জোট

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির বিষয়ে কোনও সহানুভূতি নাই আমাদের জোটের। এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতিকে সরালে বহুবিধ সমস্যার আশঙ্কা করছি আমরা। বৈঠকে আমরা ছাত্রনেতাদের বলেছি, এই বিষয়ে সম্পূর্ণ জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা দুরূহ কাজ হবে। একইসঙ্গে বিএনপির ভূমিকার সঙ্গে আমরা একমত।’

সরকার রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ার চেষ্টা করছে
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
উপদেষ্টা
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়

জানা যায়, শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানী গুলশানে বিএনপরি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে আলাপ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তবে গণমাধ্যমের সামনে বিএনপি’র কেউ কোন কথা বলেননি সেদিন। রোববার (২৭ অক্টোবর) জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর শেরে-বাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির যে সর্বোচ্চ ফোরাম রয়েছে, সেই ফোরামে এই বিষয়ে আলোচনা হবে। আলোচনা শেষে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করবো।

তিনি আরও বলেন, আমরা এর আগেও বলেছিলাম, গণঅভ্যুত্থানের ফসলকে ঘরে তোলার জন্য ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে সংহত করতে হবে। সেজন্য জাতীয় ঐক্য ছাড়া কোনো রকম হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। এ বিষয়টি সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। তারজন্য বেশি প্রয়োজন অতিদ্রুত নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার শেষে নির্বাচন করা। নির্বাচন বিলম্বিত হলে কোনো ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছেন কি না, এমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বারবার বলছি, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন করা দরকার। একটি সাংবিধানিক রাজনৈতিক শক্তির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

রাষ্ট্রপতির অপসারণ বা পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ার চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ রাজনৈতিক ঐকমত্য হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। রোববার (২৭ অক্টোবর) সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা জানান।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এটা একটা বড় সিদ্ধান্ত। এটাতে আমাদের যেমন তাড়াহুড়ো করার সুযোগ নেই। তেমনি অতিরিক্ত বিলম্ব করার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক ঐকমত্য যেহেতু গড়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, ওইটা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি বলছে, রাষ্ট্রপতি অপসারণ বা পদত্যাগে সংকট সৃষ্টি করবে; এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থানটা হচ্ছে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ার চেষ্টা করব। রাষ্ট্রপতির বিষয়টা এমন, এখানে গোপনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। যখন একটা সিদ্ধান্ত হবে সেটা প্রকাশ্যেই।

তিনি বলেন, এখানে তাড়াহুড়োর কোনো সুযোগ নেই। আবার বিষয়টাকে দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখারও সুযোগ নেই। এখন রাজনৈতিক ঐক্য যত তাড়াতাড়ি হবে, তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। সিদ্ধান্ত কী হবে তা আমি বলতে পারব না। কারণ রাজনৈতিক ঐক্য কোন দিকে যাবে, মতামত কোন দিকে বেশি যাবে—সেটা তো আমি বলতে পারব না। এ মুহূর্তে কারও প্রেডিক্ট করাও সম্ভব নয়।

এ রাষ্ট্রপতির অধীনে অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ নেওয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয় না বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডকট্রিন অব নেসেসিটি বলে একটা কথা শুনেছেন। এটা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত একটা মতবাদ, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতাই ছিল আমাদের একমাত্র অপশন। বিএনপি বলছে, তারা রাজনৈতিক সংকট দেখছে; আবার বিএনপিরও দুই-একজন নেতা বলছেন, তারা সে সংকট দেখছেন না। এখন যারা দাবি করছেন, তার অপসারণ দরকার এবং যারা বলছেন, এটা হলে রাজনৈতিক সংকট হবে -মূলত ঐক্যটা তাদের মধ্যে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। উপদেষ্টা বলেন, হয়তো সবার সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন নেই। যারা মনে করেন অপসারণ বা পদত্যাগ প্রয়োজন বনাম যারা মনে করেন অপসারণে সংকট হবে—আলোচনাটা মূলত তাদের মধ্যে হবে ৷ এখন উপদেষ্টা পরিষদ পরিষ্কার করেছে যে -রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে।

কালের আলো/ডিএস/এমএম