খাগড়াছড়িতে নবীন সৈনিকদের কুচকাওয়াজ, পদাতিক কোরে একেকজন দক্ষ সেনা হিসেবে আত্মপ্রকাশের প্রত্যাশা জিওসি’র
প্রকাশিতঃ 11:21 pm | November 04, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
দীর্ঘ কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে সেনাবাহিনীর নবীন সদস্য হিসেবে ৭৫৮ গর্বিত সেনার শপথ গ্রহণ। সুশৃঙ্খল ও মনোজ্ঞ এক কুচকাওয়াজ। ধন্যি ধন্যি চারপাশ। নবীন সৈনিকদের পদভারে মুখর খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সেনানিবাসের ‘ফরমেশন এডহক রিক্রুট ট্রেনিং সেন্টার, সংক্ষেপে এফএআরটিসি। সোমবার (০৪ নভেম্বর) সমাপনী কুচকাওয়াজ শেষে শৃঙ্খলা ও দায়িত্ব পালনে দৃপ্ত শপথে বলীয়ান তাঁরা। দৃঢ় কণ্ঠে দেশ মাতৃকার সেবায় জীবন উৎসর্গ করার দৃপ্ত শপথ। সাফল্যের সঙ্গে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার জন্য নবীন সৈনিকদের অভিনন্দন জানলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মীর মুশফিকুর রহমান। তিনি বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভবিষ্যত আলোকবর্তিকা আজকের এই নবীন সেনা দল।
- সেনাবাহিনীর নবীন সদস্য হিসেবে মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ৭৫৮ জনের শপথ গ্রহণ
- বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভবিষ্যত আলোকবর্তিকা আজকের এই নবীন সেনা দল
- ব্যক্তিগত ব্যবহার ও আচরণে সংযত ও সৃশঙ্খল হতে পরামর্শ
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সেনানিবাসে ‘ফরমেশন এডহক রিক্রুট ট্রেনিং সেন্টারে (এফএআরটিসি)’ রিক্রুট ব্যাচ-২০২৪ এর মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্যারেডে সালাম গ্রহণ করে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মীর মুশফিকুর রহমান ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও বাংলাদেশ ইনফ্রেন্টি রেজিমেন্টের নবীন সদস্য হিসেবে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবহার ও আচরণে সংযত ও সৃশঙ্খল হতে পরামর্শ দিয়েছেন।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সেনাবাহিনীর নবীন সদস্য হিসেবে মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ৭৫৮ জনের শপথ গ্রহণ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এই কুচকাওয়াজ ছিল নান্দনিক ও চৌকস। এর মাধ্যমে পদাতিক রেজিমেন্টের সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়েছে নবীন এই সৈনিকরা। দেশমাতৃকার সেবায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করার প্রত্যয়ে এই নবীন সৈনিকরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রশিক্ষণ চলাকালীন বিভিন্ন বিষয়ে সেরা নৈপূণ্য প্রদর্শন করার জন্য ৬ জন নবীন সৈনিকের মাঝে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মীর মুশফিকুর রহমান আলোকপাত করেন ‘ফরমেশন এডহক রিক্রুট ট্রেনিং সেন্টারের (এফএআরটিসি) গৌরবময় ইতিহাস। তিনি তথ্য-উপাত্তে উপস্থাপন করেন প্রায় ৮ বছর আগে, ২০১৬ সালের ১৩ জুলাই প্রশিক্ষণের সুবিধার্থে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ফরমেশন এডহক রিক্রুট প্রশিক্ষণ সেন্টার প্রতিষ্ঠার আদ্যোপান্ত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালের ১৭ জুলাই এফএআরটিসি এর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম রিক্রুট ব্যাচে সর্বমোট ৮১১ জন রিক্রুট যোগদান করে। অদ্যাবধি ১১টি রিক্রুট ব্যাচের মাধ্যমে মোট ৯ হাজার ৫৯০ জন রিক্রুট এই সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও বাংলাদেশ ইনফ্রেন্টি রেজিমেন্টের বিভিন্ন ইউনিটে যোগদান করেছেন।’
জিওসি মেজর জেনারেল মীর মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘২০১৮ এর তিন রিক্রুট ব্যাচের সঙ্গে এই সেন্টার থেকে ইঞ্জিনিয়ার্সের ৮১ জন রিক্রুট প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে বিভিন্ন ইউনিটে যোগদান করেছেন। বর্তমান রিক্রুট ব্যাচ ২০২৪ এর সর্বমোট ৮১০ জন যোগদান করে। ৭৫৮ জন রিক্রুট আজ সেনাবাহিনী প্রধান কুচকাওয়াজ প্যারেডে অংশগ্রহণ করছে। তোমাদের সকলকে অভিনন্দন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভবিষ্যত আলোকবর্তিকা আজকের এই নবীন সেনা দল। আধুনিক সামরিক পাঠ্যক্রম সুশৃঙ্খল প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের প্রত্যেককে একেকজন প্রশিক্ষিত, গর্বিত ও আত্মবিশ্বাসী সৈনিক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রশিক্ষণকে অক্লান্ত পরিশ্রম ও সংশ্লিষ্ট সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে তোমাদের প্রত্যেককেই আজকের এই অবস্থানে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে।’
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও বাংলাদেশ ইনফ্রেন্টি রেজিমেন্টের নবীন সদস্য হিসেবে তোমাদের ব্যক্তিগত ব্যবহার ও আচরণ হতে হবে সংযত ও সৃশঙ্খল, এমনটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শত্রুকে ধ্বংস করতে হলে অর্জন করতে হবে উন্নতমানের শারীরিক যোগ্যতা, সাহসিকতা, সহিষ্ণুতা ও পেশাগত দক্ষতা। পদাতিক বাহিনীর সৈনিক হিসেবে ভূমিতে হতে হবে অপ্রতিরোধ্য, অকুতোভয় এবং কৌশলী। ফরমেশন এডহক রিক্রুট প্রশিক্ষণ সেন্টার তোমাদেরকে গর্বিত সৈনিক হিসেবে তৈরি করার লক্ষে অপরিহার্য ও মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে মাত্র। এই প্রশিক্ষণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। ইউনিট জীবনে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ছাড়াও হাতে-কলমে বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও পারদর্শিতা অর্জন করবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, অদূর ভবিষ্যতে কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলনের মাধ্যমে তোমরা পদাতিক কোরে একেকজন দক্ষ সেনা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে ইনশাআল্লাহ।’
সামরিক জীবন কষ্টের কিন্তু গর্বের বলে মনে করেন ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি। চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মীর মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘মাতৃভূমির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা থেকে তোমরা আজ এই কষ্টের জীবন বেছে নিয়েছো। মনে রাখবে তোমাদের দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকবে। সর্বোপরি মনে রাখবে ভালো মানুষ হওয়ার প্রত্যয় সব সময় হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। আজকের এই কুচকাওয়াজ অত্যন্ত আকর্ষণীয়, সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর হয়েছে। তোমাদের কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য্য, একাগ্রতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্যই এটি সম্ভবপর হয়েছে। এজন্য আবারও তোমাদের সকলকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।’
শপথগ্রহণ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসানসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এমএএএমকে