প্রবাসী আয় বাড়ায় বেড়েছে রিজার্ভ
প্রকাশিতঃ 4:09 pm | November 05, 2024
মো.শামসুল আলম খান, কালের আলো:
তলানিতে থাকা রিজার্ভ বাড়তে শুরু করেছে। প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো বাড়িয়েছেন। প্রবাসী আয় বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে ক্রমশ। এতে করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের অর্থনীতি। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে রিজার্ভের পতন থামানো সম্ভব না হলেও অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর রিজার্ভের পতন থেমেছে। আশার খবর হচ্ছে, গত এক সপ্তাহে রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আগের সপ্তাহেও রিজার্ভ তার পূর্ববর্তী তিন সপ্তাহের চেয়ে সাড়ে চার কোটি ডলার বাড়ার তথ্য দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রবিবার (৩ নভেম্বর) পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলার।
ক’দিন আগে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে সুখবর দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং স্থিতিশীল হচ্ছে। আগের সরকারের আমলে রিজার্ভ প্রতি মাসে ১.৩ বিলিয়ন ডলার করে কমে আসছিল, তবে এখন তা একটি ইতিবাচক প্রবণতায় ফিরছে।’
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার কথা জানিয়েছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদও। সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ পর্যালোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘দেশীয় শিল্পের বিকাশে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে।’
জানা যায়, গত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের মাস জুলাইয়ে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৬ বিলিয়ন ডলার। এখন এই গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়নে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ২৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া (বিপিএম-৬) মানদণ্ড অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ওই অবস্থান ছুঁতে পারেনি। বর্তমানে বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ রয়েছে ১৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের চার দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করে। ওই হিসাব অনুযায়ী, ৩০ জুলাই ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। নতুন সরকার গঠনের পর ২১ আগস্টও রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ছিল। পরে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধ শেষে ১২ সেপ্টেম্বর তা নেমে হয় ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে। তিন সপ্তাহ পর ২ অক্টোবর তা কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ৭৬ বিলিয়নে।
অবশ্য এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মাধ্যমে দুই মাসের (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) আমদানি বিল নিষ্পত্তি হচ্ছে চলতি সপ্তাহে। আকুভুক্ত ৯টি দেশের আমদানি বিল বাবদ মোট ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ হবে। এতে গ্রস রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ২৩ বিলিয়ন ডলারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের রিজার্ভ ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে গত দুই মাসের আকুর বিল ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বাদ যাবে। এতে মোট রিজার্ভ নেমে আসবে সাড়ে ২৩ বিলিয়ন ডলারে। ৩ নভেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নির্দেশিত (বিপিএম-৬) মানদণ্ড অনুযায়ী, বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে ১৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এ রিজার্ভ থেকে প্রায় ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ থাকবে ১৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারÑযা আইএমএফের বেঁধে দেওয়া সীমা ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে কিছুটা কম।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যেভাবে রেমিট্যান্স বাড়ছে, তাতে আইএমএফের বেঁধে দেওয়া সীমা অতিক্রম করতে বেশি সময় লাগবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের মতো সদ্য বিদায়ী অক্টোবর মাসেও প্রবাসী আয়ের গতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। অক্টোবরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২৪০ কোটি ডলার। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটির বেশি ডলার পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
কালের আলো/এমএসএকে/এমএএএমকে