স্বপ্নের পূর্ণতায় মাতৃভূমি রক্ষার শপথ নবীন সৈনিকদের, ধৈর্য্য আর ত্যাগে অর্জিত বিরল সম্মান অক্ষুণ্ন রাখার উপদেশ সিজিএস’র

প্রকাশিতঃ 10:54 pm | November 05, 2024

কালের আলো রিপোর্ট:

দীর্ঘ ৯ মাসের কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে স্বপ্নের পূর্ণতার অপার আনন্দ নবীন সৈনিকদের হৃদয়ে। মেধার সঙ্গে নিরলস শ্রম, কঠোর অভিনিবেশ আর অসামান্য পেশাদারিত্বের মাধ্যমে প্রত্যেকে গড়ে তুলেছেন নিজেকে। স্বভাবতই নির্মল আনন্দে উদ্ভাসিত হওয়ার মুহুর্ত। আত্নজের বিজয় কেতনের সুখ আবেশ যেন ছুঁয়ে যায় অভিভাবকদেরও। দেশপ্রেমী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভবিষ্যতের আলোকবর্তিকাদের স্বপ্নকে যেন এদিন আরও স্বার্থক ও মহিমান্বিত করলেন সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম। উপদেশ দিলেন দীর্ঘদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম, ধৈর্য্য এবং ত্যাগে অর্জিত এই বিরল সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে নতুন করে আরও দৃঢ় প্রত্যয়ী হওয়ার। নিজের প্রজ্ঞা আর দূরদৃষ্টিতে সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও দেশপ্রেমের মন্ত্র তিনি গেঁথে দিলেন নতুন সেনাদের মস্তিষ্কে।

অনন্য এক মিলনমেলায় আনন্দের অবগাহনে তাঁর প্রিয় টাইগারসদের উদ্দেশ্যে আলোর দিশারি হয়েই বলে চললেন-‘আজকের দিনটি তোমাদের প্রত্যেকের জীবনে একটি বিশেষ দিন। আজ তোমাদের ওপর অর্পিত হলো দেশমাতৃকার স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতা রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে মনেপ্রাণে তোমরা সদা প্রস্তুত এবং সতর্ক থাকবে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন তোমাদের সহায় হোন এবং অর্পিত দায়িত্ব পালনে তোমাদেরকে শক্তি প্রদান করেন।’

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) চট্টগ্রাম সেনানিবাসের দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে (ইবিআরসি) অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের রিক্রুট ব্যাচ-২০২৪ এর সেনাবাহিনী প্রধান কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে নিজের দীর্ঘ বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে পেশাদারিত্বের নির্যাসে দূরদৃষ্টির পরিচয়বহ ও দিকনির্দেশনামূলক এক দীর্ঘ বক্তব্যই উপস্থাপন করলেন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে নিজ বাহিনীর অবিস্মরণীয় ভূমিকা, দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল এবং বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানসহ অনেক জানা ও অজানা শহীদদের বীরত্ব ইতিহাস, সৈনিক জীবনের সাফল্যের পরতে পরতে নৈতিক মূল্যবোধের অপরিহার্যতা সবকিছুই তুলে আনলেন নির্মোহ যুক্তিতে। কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করলেন, গ্রহণ করলেন অভিবাদনও। আশা প্রকাশ করলেন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নতুন সৈনিকরা অতীতের মতো দেশপ্রেম ও পেশাগত দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে লড়ে যাবেন।

জানা যায়, ৯ মাসের কঠোর অনুশীলনের পর ১ হাজার ৩৮১ জন নবীন সৈনিক এদিন শপথ নিয়েছেন। এতে রিক্রুটদের ৬টি কন্টিনজেন্ট অংশগ্রহণ করেন। শ্রেষ্ঠ রিক্রুটসহ অন্যদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম। দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের গৌরবগাঁথা উপস্থাপন করে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই রেজিমেন্টের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল এবং বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানসহ অসংখ্য জানা ও অজানা শহীদদের বীরত্ব ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল, যা তোমাদের ভবিষ্যতের দীপ্ত চেতনায় অনুপ্রাণিত করবে।’

পদাতিক পরিবারের নবীন সদস্যদের সেনাবাহিনীতে গর্বিত সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্তিতে স্বাগত জানান সেনাবাহিনীর এই তিন তারকা জেনারেল। তিনি বলেন, ‘কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা ও পারদর্শিতার এই স্বীকৃতি তোমরা আজ পেয়েছো। যা সকল দেশপ্রেমিকের জন্য চিরকাক্সিক্ষত এবং দুর্লভ সম্মান। আমি আশা করি আজকের এই নবীন সদস্যরা দীর্ঘদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম, ধৈর্য্য এবং ত্যাগে অর্জিত এই বিরল সম্মান অক্ষুণ্ন রাখার জন্য নতুন করে দৃঢ় প্রত্যয়ী থাকবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হলে, বাহিনীর সঙ্গে সুসর্ম্পক স্থাপিত হলো তা সত্যিই গর্বের বিষয়, যা মনেপ্রাণে ধারণ করবে।’

‘একটি বলিষ্ঠ এবং দক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তোলার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো সৎ চরিত্র, মানসিক দৃঢ়তা, কঠোর অধ্যাবসায়, শৃঙ্খলাবোধ এবং সঠিক নেতৃত্ব। সৈনিক জীবনের সাফল্যের মূলে রয়েছে নৈতিক মূল্যবোধ, আনুগত্য, শৃঙ্খলা এবং নিরলস প্রশিক্ষণ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস তোমরা এই গুণসমূহ অনুশীলন এবং অনুসরণ করে চলবে। ধর্মীয় এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকলে তোমরা সত্যিকারের মানুষ হয়ে দেশের সেবা করতে পারবে। আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে তাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে আজকের এই প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিতি থাকার জন্য তাদেরকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বিশেষ করে আগত নবীন সৈনিকদের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি আমাদের অনুষ্ঠানকে করেছে মহিমান্বিত’- যোগ করেন সিজিএস।

তিনি নবীন সৈনিকদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবন সুন্দর, উজ্জ্বল এবং অর্থবহ হোক এমন প্রত্যাশা করে বলেন, ‘ভবিষ্যতে নিজেকে আদর্শ ও নির্ভীক সৈনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তোমরা জীবনে স্বার্থক হও এই প্রত্যাশাই করছি। পরিশেষে আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সামগ্রিক উত্তরোত্তর সফলতা এবং অগ্রগতি কামনা করছি। দি ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের গৌরব, সুনাম এবং সম্মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি এবং সকলের সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করছি।’

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম অঞ্চলের উর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তা, জেসিও, অন্যান্য পদবীর সৈনিক ও প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারী রিক্রুটদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন।

কালের আলো/এমএএএমকে