পাল্টে যাবে মোংলা বন্দর, বিশ্বমানের নিরাপদ বন্দরে রূপ দিতে চান উপদেষ্টা
প্রকাশিতঃ 9:54 pm | November 06, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
রাজধানী থেকে সবচেয়ে কাছের সমুদ্রবন্দর মোংলা। সড়কপথে বন্দরটির দূরত্ব মাত্র ২১০ কিলোমিটার। গত এক দশকে বন্দরটিতে জাহাজ আসার সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। বলা হয়, দেশের অর্ধেকের বেশি আমদানি করা গাড়ি এখন মোংলা বন্দর দিয়ে আসে। বেশিরভাগ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলপিজি) আমদানি হয় মোংলা বন্দর দিয়েই। সম্প্রতি এখান দিয়ে পোশাক রপ্তানিও বেড়েছে। দেশের অর্থনীতিতেও বন্দরটি রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তবুও প্রচারণার আলো থেকে যোজন যোজন দূরে সম্ভাবনাময় এই বন্দরটি। ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মোংলা বন্দরের কার্যক্রম সম্পর্কে আরও বেশি প্রচার প্রচারণা চালানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বন্দরের সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বুকলেট তৈরি করে বিদেশী মিশনগুলোর মাধ্যমে প্রচারণা বাড়াতে জোর দিয়েছেন।
নৌ পরিবহন উপদেষ্টা মোংলা বন্দরকে বিশ্বমানের নিরাপদ ও আধুনিক সমুদ্রবন্দরে রূপ দিতে চান। এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে তিনি গ্রহণ করেছেন নানাবিধ উদ্যোগ। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, চীন ও ভারতের অর্থায়নে জি টু জির আওতায় মোংলা বন্দরের সঙ্গে হওয়া চুক্তি বাস্তবায়ন ও প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আগামী দুই বছরের মধ্যে এই বন্দরের দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। এর আওতায় এখানে দুটি কন্টেইনার বার্থ, ইয়ার্ড ও আনুষাঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। সেক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সংযোগের ক্ষেত্রে এই বন্দর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। মোংলা বন্দরে প্রথমবার পরিদর্শনে এসে দুদিনের সফরের শেষ দিন বুধবার (০৫ নভেম্বর) সকালে বন্দর জেটিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।
জানা যায়, ১৯৫০ সালে চালনা বন্দর নামে প্রথম বন্দরটির গোড়াপত্তন হয়। ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর পশুর নদের জয়মণির ঘোল এলাকায় দ্য সিটি অব লিয়নস নামে জাহাজ নোঙরের মাধ্যমে বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ১৯৫১ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত চালনায় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৯৫৪ সালে খুলনা শহর থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরে পশুর নদের পূর্ব তীরে মোংলা চ্যানেল বন্দরটির কার্যক্রম স্থানান্তর হয়।
মোংলা বন্দরটির সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য প্রান্তের সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি রেল ও নৌযোগাযোগ রয়েছে। এজন্য মোংলা বন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করা হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘এতে বন্দরের সক্ষমতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হবে। মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী যেমন বাড়বে, তেমনি চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমবে।’
তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনীতিতে মোংলা বন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও, বন্দরের প্রচার-প্রচারণা তেমন নেই। বন্দর বলতে মানুষ চট্টগ্রামকেই বোঝে, এই চিন্তা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। এজন্য আমরা বিভিন্ন রাষ্ট্রদূত ও বিদেশি অ্যাম্বাসি অফিসকে প্রচার প্রচারণা চালানোর অনুরোধ করেছি। সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রগামী সব জাহাজ ও সমুদ্রকেন্দ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানকেও মোংলা বন্দরের প্রচার-প্রচারণা চালাতে বলা হয়েছে।
মোংলা বন্দরকে আরও আধুনিক ও বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে এবং কিছু প্রকল্প ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য হাতে নেওয়া হয়েছে। নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দরের বার্ষিক সক্ষমতা বাড়বে। চ্যানেলে ৮ দশমিক ৫ সিডি গভীরতা অর্জিত হবে। এতে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ মোংলা বন্দরে হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে। মোংলা বন্দরে বছরে প্রায় ৮ লাখ টিইউ কন্টেইনার, ৪ কোটি টন কার্গো এবং ৩০ হাজার গাড়ি হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা হবে। এ সময়ে বন্দরের কার্যক্রমকে আরও বেশি গতিশীল ও আমদানি-রফতানিকারকদের উৎসাহিত করতে রাজস্ব বিভাগকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বন্দরে স্ক্যানার স্থাপনের নির্দেশনা প্রদান করেন উপদেষ্টা। এই বন্দরটি ব্যবহার করার জন্য নেপাল ও ভুটানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তারা মোংলা বন্দর ব্যবহার করলে বন্দরের কার্যক্রমে আরও গতিশীলতা আসবে এবং দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।’
এর আগে ওইদিন নৌ পরিবহন এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমানসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বন্দরের ড্রেজিং ও উন্নয়ন প্রকল্প, জাহাজ, কন্টেইনার এবং গাড়ি আমদানির বাৎসরিক হিসাব নিয়ে মতবিনিময়সহ বন্দরের পশুর চ্যানেল ও জেটি এলাকা পরিদর্শন করেন।
কালের আলো/এমএএএমকে