যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্টের তকমা তাঁর
প্রকাশিতঃ 10:31 pm | November 06, 2024
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ হলো তার। এবার নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে হারিয়েছেন তিনি। এর আগে, ২০১৬ সালে নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে হোয়াইট হাউজে প্রথমবারের মতো পা রাখেন ট্রাম্প। এবারের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে আমেরিকার সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্টের তকমাও পেলেন তিনি।
জন্ম
১৯৪৬ সালের ১৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্সে জন্মগ্রহণ করেন ডোনাল্ড জে ট্রাম্প। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ ছিলেন তিনি। তার বাবা নিউইয়র্কের আবাসন ব্যবসায়ী ফ্রেড ট্রাম্প ও মা স্কটিশ বংশোদ্ভূত মার্কিন মেরি ট্রাম্প।
শিক্ষাজীবন
ছেলেবেলায় খুবই দুরন্ত প্রকৃতির হওয়ায় তাকে নিউ ইয়র্ক মিলিটারি একাডেমিতে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই অষ্টম শ্রেণি ও হাইস্কুল জীবন শেষ করেন। ২০১৫ সালে এক জীবনী লেখককে ট্রাম্প বলেছিলেন, নিউ ইয়র্ক মিলিটারি একাডেমি তাকে অন্যান্য ছেলেদের চেয়েও বেশি সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছিল।
এর পর ফোর্ডহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছর পড়াশোনা করেছিলেন ট্রাম্প। এছাড়া, পেন্সিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন হোয়ার্টন স্কুল অব বিজনেসেও পড়াশোনা করেছেন। ১৯৬৮ সালে সেখান থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী
রাজনীতিতে প্রবেশের আগে মার্কিন সমাজে একজন ধনকুবের হিসেবে পরিচিত ছিলেন ট্রাম্প। তার জীবনের অধিকাংশ সময়ই কেটেছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শোবিজ নিয়ে। বাবার হাত ধরেই ব্যবসায় হাতেখড়ি তার। বাবার প্রতিষ্ঠানে একেবারে ছোট একটি পদ দিয়ে কাজ শুরু এবং পরবর্তীতে পৈতৃক ব্যবসার সম্প্রসারণ করেন। ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন হোটেল, বহুতল ভবন, গলফ কোর্স, ক্যাসিনো প্রভৃতি ব্যবসা।
দীর্ঘদিন মিস ইউনিভার্সের স্পন্সর ছিলেন ট্রাম্প। ‘দ্য অ্যাপ্রেনটিস’ নামের টিভি রিয়্যালিটি শো উপস্থাপনা করে সেলিব্রিটি বনে যান। এমনকি রেসলিং ম্যাচও উপস্থাপনা করেছেন তিনি।
রাজনৈতিক জীবন
২০১৫ সালের ১৫ জুন প্রথমবারের মতো আচমকা প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। অবশ্য তার এই ঘোষণায় তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি কেউই। এ নিয়ে হাসিঠাট্টাও কম হয়নি।
তবে ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সব ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণিত করে ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ বনে যান ট্রাম্প। তখন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হিলারি ক্লিনটনকে নাটকীয়ভাবে পরাজিত করেন তিনি।
কয়েকবার নিজেকে দেউলিয়াও ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। একাধিক মামলা করার পাশাপাশি অনেকবার মামলা খেয়েছেনও তিনি। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা, ধর্ষণ মামলা, ঘুষ মামলা, নিউ ইয়র্ক জালিয়াতি মামলাসহ একাধিক মামলা করা হয়। কয়েকটি মামলায় মোট অঙ্কের জরিমানাও গুণতে হয়েছে তাকে।
পারিবারিক জীবন
ব্যক্তিগত জীবনে তিনবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন ট্রাম্প। পাঁচ সন্তানের জনক তিনি। প্রথম স্ত্রী চেক মডেল ইভানার সঙ্গে ১৯৯২ সালে বিচ্ছেদ হয় তার। ১৯৯৩ সালে দ্বিতীয় স্ত্রী মার্লা ম্যাপলসকে বিয়ে করেন। ৬ বছর সংসারের পর ১৯৯৯ সালে তার সাথেও বিচ্ছেদ হয় ট্রাম্পের।
২০০৫ সালে তৃতীয় বিয়ে করেন তিনি। সেই স্ত্রী মডেল মেলানিয়াই এখন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি।
সঙ্গী বিতর্ক
অভিবাসী, মুসলমান, নারী, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তীব্রভাবে সমালোচিত ও বিতর্কিত ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে অশালীন আচরণ ও যৌন হয়রানি, এমনকি ধর্ষণের অভিযোগও ওঠেছে। এত কিছুর পরও দ্বিতীয়বারের মতো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর, মুসলিম নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিষয়ে একের পর এক বিতর্কিত সব কাজকর্ম করেন ট্রাম্প।
কালের আলো/ডিএইচ/কেএ